আবুল হোসন, সিলেট থেকে: সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) দুপুর ১টায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এ কমিটি অনুমোদন দেন। ঘোষিত কমিটিতে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন- নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন রাহেল সিরাজ। অপরদিকে, মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি নির্বাচিত হন- কিশওয়ান জাহান সৌরভ ও সাধারণ সম্পাদক হন মো. নাঈম আহমদ।
কমিটিতে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ থেকে কেন্দ্রীয় সদস্য করা হয়েছে জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান, বিপ্লব কান্তি দাস, মুহিবুর রহমান মুহিব ও কনক পাল অরুপকে। অপরদিকে, মহানগর ছাত্রলীগ থেকে কেন্দ্রীয় সদস্য করা হয়েছে হুসাইন মোহাম্মদ সাগর ও সঞ্জয় পাশী জয়কে। এদিকে, কমিটি ঘোষণার আধা ঘন্টার মধ্যেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৬ ছাত্রনেতার নাম ঘোষণার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে পদত্যাগ করেন সদ্য ঘোষিত কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুর রহমান। তারপরই একইভাবে স্ট্যাটাস দিয়ে কেন্দ্রীয় সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মেট্রাপলিটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান।
এদিকে, সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পক্ষে-বিপক্ষের মিছিলে মিছিলে উত্যপ্ত হয়ে উঠে সিলেটের রাজপথ। কমিটি ঘোষণার পর বিকেলে সিলেট নগরীতে কমিটির পক্ষে- বিপক্ষে পৃথক পৃথক মিছিল বের করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এসময় সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে সিলেট নগরীর রিকাবীবাজার, দর্শন দেউড়ি, টিলাগড় থেকে মিছিল বের করে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে সমবেত হয়। তাছাড়া গোয়াইনঘাট, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জে নবগঠিত কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল বের করে স্থানীয় ছাত্রলীগ। অপরদিকে, কমিটির বিপক্ষে মিছিল করেছে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ। নগরীর তেলিহাওর থেকে মিছিলটি বের করে জিন্দাবাজারে আল-হামরা মার্কেটের সামনে আসলে পুলিশ মিছিলকারীদের বাঁধা দেয়। পুলিশী বাঁধা উপেক্ষা করে মিছিলটি সামনে অগ্রসর হয়। চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে বিক্ষোভকারী নেতাকর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। কিছু সময় সড়ক অবরোধ শেষে ফিরে যান তারা। এদিকে, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের বাসায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। কমিটি গঠনের জের ধরে ছাত্রলীগের তেলিহাওর গ্রুপের সাবেক ও বর্তমান একদল নেতাকর্মী এই হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন রাহেল সিরাজের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর আম্বরখানা বড়বাজারস্থ রাহেল সিরাজের বাসায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রসঙ্গত, রাহেল সিরাজ ও একই গ্রুপ করতেন। কিন্তু তেলিহাওর গ্রুপ থেকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান। কমিটিতে রাহেল সিরাজ সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় তাকে মেনে নিতে পারছেন না গ্রুপের শীর্ষ নেতারা। কমিটি প্রত্যাখান করে মঙ্গলবার বিকেলে তেলিহাওর গ্রুপের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন। রাহেল সিরাজের ভাই গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রুমেল সিরাজ অভিযোগ করে বলেন, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরীয়ার আলম সামাদ, মহানগর শাখার সাবেক সহ সভাপতি সুজেল তালুকদার ও যুবলীগ নেতা দুলাল আহমদের নেতৃত্বে ১০-১৫টি মোটর সাইকেলে ৩০-৩৫ জন যুবক তার বাসায় হামলা চালান। এসময় তাকে বাইরে পেয়ে তার উপরও হামলার চেষ্টা করা হয়। তিনি দৌঁড়ে বাসায় ঢুকে আত্মরক্ষা করেন। এরপর হামলাকারীরা বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যান।
এ ব্যাপারে জানতে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরীয়ার আলম সামাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে, খবর পেয়ে আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি সুজেল আহমদ তালুকদার হামলার ঘটনায় তার, সামাদ ও দুলাল আহমদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, বিক্ষুব্ধ কোন নেতাকর্মী হামলা করে থাকতে পারে। কারণ কমিটি ঘোষণার পর সিলেট ছাত্রলীগে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। এই ক্ষোভ থেকে কেউ হামলা করে থাকতে পারে।
পাঠকের মন্তব্য: