শখের কুল চাষেই ভাগ্য বদল অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীর

প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০২১, ০৫:৫০ এএম
হাবিবুর রহমান, নড়াইল থেকে: শিক্ষার্থী মো. রাকিবুল ইসলাম শখের বশে করেছেন কুলের বাগান। বাবা-মায়ের কাছে থেকে অনুমতি নিয়ে তিন বিঘা জমিতে রোপন করেছেন পাঁচ শতাধিক কুলের চারা। কাশ্মীরি, থাই, বলসুন্দরী ও সিডলেস কুলের এ বাগান দেখতে প্রায় নিয়মিত লোকজন ভীড় করছে। আলোচিত এ কুলের বাগানটি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার এড়েন্দা গ্রামে। কৃষক মো. জহর শেখ বসবাস করেন লোহাগড়া উপজেলার এড়েন্দা এলাকায়। তার ছেলে মো. রাকিবুল ইসলাম (২৫) যশোর ক্যান্টলমেন্ট কলেজে অনার্স শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত। মো. রাকিবুল ইসলাম শখের বশে কাশ্মীরিকুল, থাই, সিডলেস ও বলসুন্দরী জাতের পাঁচ শতাধিক চারা মেহেরপুর থেকে এনে রোপন করেন। আট মাসের মাথায় শুরু হয়েছে ফলন। এখন বাগান দেখে মো. রাকিবুল ইসলাম নিজেই অভিভূত। আশেপাশের এলাকার লোকজন আগ্রহ নিয়ে আসছেন কুল বাগান দেখতে। মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, গতবছর আমি যশোর এক আত্নীয় বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কুল বাগান দেখি আর এ কুল বাগান দেথে কুল চাষে আমার আগ্রহ বাড়ে। বাড়ি এসে আমি বিষয়টি মা-বাবাকে জানালে তারা উৎসাহের পাশাপাশি অর্থসহ জমির যোগান দেন। আমি তিন বিঘা জমিতে পাঁচ শতাধিক বলসুন্দরী, কাশ্মীরি, থাই ও সিডলেস জাতের কুলের চারা রোপন করি, ভয়ে ছিলাম কি হয়। মাত্র আট মাসের মাথায় শুরু হয়েছে ফলন। কুল বাগানে ছোট ছোট গাছে কুল ভরে গেছে। এখন প্রতিটি গাছ কুলের ভারে নুয়ে পড়েছে। তিন বিঘা জমিতে চারা রোপনসহ নানা কাজে এক লক্ষ্য টাকা খরচ হযেছে। খরচ বাদে এবার ৫/৬ লাখ টাকার কুল বিক্রি করার আশা করছি। প্রথমে শখ থাকলেও এখন বানিজ্যিকভাবে চাষ করার ইচ্ছা আছে। এ কুল বাগানে কাজ করে খেয়ে পরে ভালো আছেন আরো ৭টি পরিবার। উপজেলার অন্য বেকার যুবকরা এ ধরনের আরো কুল বাগান করে নিজেদের ভাগ্য বদলাবেন এমনটি প্রত্যাশা রাকিবুলের। বলসুন্দরী, কাশ্মিরী, থাই, নারিকেল জাতের কুল ছাড়াও বাগানে সিডলেস কুলসহ ৫ প্রকার কুল চাষ করেছেন। এসব কুল খেতে মিষ্টি, সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। মো. রাকিবুল ইসলামের এ সাফল্যে ইতোমধ্যেই এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এলাকার অনেক যুবক কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। লোহাগড়া এড়েন্দা গ্রামের মো. নাসির গাজী, মো. জনি শেখ, মো. জাকির হোসেন এবং বসুপটি গ্রামের দাউদ হোসেন এসেছেন মো. রাকিবুল ইসলামের কুল ক্ষেত দেখতে। তারা এই বাগান দেখে অভিভূত। তারাও তাদের জমিতে এই ধরনের কুল বাগান করবেন বলে জানান। তারা জানান, এই কুল বাগানের কথা শুনে দেখতে এসেছেন তারা। আগামী বছর তারাও এখান থেকে কুলের চারা ও পরামর্শ নিয়ে কুলের চাষ করবেন বলে জানান। শিক্ষার্থী মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, তিন বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছি। এ বাগানে নিয়মিত ৭ জন লোক কাজ করে। অনেকে আমার কাছে পরামর্শ নিতে আসে। আমি তাদের কুল চাষ করতে বলি। আমার চাষকৃত কুল নতুন জাতের। এতে অনেক বেশী ফলন। কুলের চারা বানিয়েছি। কেউ চারা ও পরামর্শ নিতে আসলে আমি তাদেরকে পরামর্শ দেই। বিশেষ করে যারা বেকার রয়েছে তাদেরকে আমি পরামর্শ দিয়ে থাকি এই যাতের কুল চাষ করতে। একদিকে নিজের বেকারত্ব ঘুচবে এবং পাশাপাশি আরো অনেককে তার কুল বাগানে কাজ দিতে পারবেন। আমি বেকার যুবকদেরকে কম দামে চারা দেয়াসহ পরামর্শ দেবার কথা এলাকায় জানিয়ে দিয়েছি। রাকিবুলের বাবা মো. জহর শেখ বলেন, কলেজ পড়ুয়া ছেলের কৃষির প্রতি ঝোঁক দেখে খুশি হয়েছি। শিক্ষিত বেকার যারা তারাও এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে। লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রইচউদ্দিন জানান, লোহাগড়া উপজেলায় প্রথমবারের মতো কাশ্মীরি কুলসহ বিভিন্ন জাতের কুল আবাদ হচ্ছে। আকারে বড় ও সুস্বাদু কাশ্মীরি কুলের বেশ চাহিদা রয়েছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই কাশ্মীরি কুলসহ বিভিন্ন জাতের কুল লোহাগড়ায় রোপণ করে প্রাথমিকভাবে সাফল্য দেখা গেছে। এই কুল রোপণ ও চাষের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসকর্তৃক কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: