শীতের আগমনে খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছেন খুলনার গাছিরা

প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০২১, ০৫:৫০ এএম
ভোরের মৃদু কুয়াশাই বলে দিচ্ছে প্রকৃতিতে শীত খুব কাছেই। তাই শীতের মৌসুমে প্রকৃতিতে এসেছে শীতের ছোঁয়া। শীতকাল গ্রামের মানুষের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শীতের আগমনে খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন শতাধিক গাছিরা। তাঁরা এর মধ্যেই খেজুরগাছগুলোর পুরোনো ডালপালা কেটে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন করে রেখেছেন। সরেজমিনে জানা যায়, গ্রামীণ জীবনে গাছিদের কাছে শীত আসে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে। অনেক স্বপ্ন আর প্রত্যাশা নিয়ে খেজুরগাছের সঙ্গে তাঁদের এই সময়টা কেটে যায়। দিনের বেশির ভাগ সময় পার হয় এক গাছ থেকে অন্য গাছে। শীতের তীব্রতা দেখা না দিলেও এরই মধ্যে জেলার অধিকাংশ উপজেলায় অনেক গাছি অভাবের কারণে খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। বিশেষ করে খুলনার রূপসা, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, ফুলতলা, তেরখাদা, দিঘলিয়া উপজেলায় খেজুর রস বেশি পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের হাছানপুর গ্রামের বাসিন্দা মানিক গাছি বলেন, 'খেজুরগাছ অল্প বয়স থেকে রস দেওয়া শুরু করে। ৩০-৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত রস দেয়। তবে গাছ যতই পুরোনো হয়, রস দেওয়া ততই কমে যায়। পুরোনো গাছ রস কম দিলেও পুরোনো গাছের রসগুলো খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। মাঝ বয়সের গাছ থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ রস পাওয়া যায়।' মানিক গাছি আরও বলেন, 'বেশি রস সংগ্রহ করা গাছের জন্য আবার ক্ষতিকর বিষয়ও বটে। রস সংগ্রহের জন্য সাধারণত কার্তিক মাসে খেজুরগাছ পরিষ্কারের কাজ শুরু করা হয়। অগ্রহায়ণ মাস থেকেই রস পাওয়া যায়। রসের ধারা চলতে থাকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। আবার শীতের সঙ্গে রস ঝরার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। শীত যত বেশি পড়বে, গাছ থেকে রস তত বেশি ঝরবে। এতে রসের স্বাদও ততই মিষ্টি হবে। অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ মাস হলো রসের ভরা মৌসুম। অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত স্থানভেদে একটি খেজুরগাছে মাসে ৪০-৫০ কেজি রস পাওয়া যায়।' আগাম খেজুরগাছ পরিষ্কার করার বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির ছগির গাছি বলেন, 'শীতের শুরুতে রস পাওয়া গেলে দাম অনেক বেশি পাওয়া যায়। আমাদের সংসার চলে রস বিক্রি করে। কিছুদিন আগে তালের রস বিক্রি করেছি। আর এখন আগেভাগে খেজুরের রসের জন্য গাছ পরিষ্কার করছি। খেজুরগাছ কাটতে সাধারণত লোহা দিয়ে তৈরি দা, দড়ি লাগে। আবার দা রাখার জন্য বাঁশ বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এক প্রকার থলির প্রয়োজন হয়। সেই থলি গাছিরা রশি দিয়ে কোমরে বেঁধে খুব যত্নে দা রেখে এই গাছ থেকে সেই গাছে ওঠা-নামা করেন। গাছ কাটার জন্য গাছিরা শরীরের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোমর বরাবর গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে নেন। দড়িটা বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। এই দড়ির দুই মাথায় বিশেষ কায়দায় গিঁট (বাঁধন) দেওয়া থাকে। গাছে ওঠার সময় গাছি অতি সহজে মুহূর্তের মধ্যে গিঁট (বাঁধন) দুটি জুড়ে দিয়ে নিজের জন্য গাছে ওঠার নিরাপদ ব্যবস্থা করে নেন। গাছিরা সাধারণত হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যে খেজুরের রস সংগ্রহ করেই ক্ষান্ত হন না, এই রস আবার জ্বাল দিয়ে তৈরি করেন গুড়। সেই গুড়ের আবার প্রকারভেদ আছে। পাটালি গুড় ও ঝোলা গুড়। এসব গুড় আবার বিভিন্নভাবে খাওয়া হয়। শীতে খেজুরগাছের রস হতে যে গুড়ে তৈরি করা হয়, তা দিয়ে দুধের পিঠা, পায়েস, পুলি পিঠাসহ আরও হরেক রকমের পিঠা তৈরি হয়। তবে খেজুরের রস দিয়ে তৈরি রসের পিঠা খুবই সুস্বাদু হয়ে থাকে। আর খেজুরের গুড়ের প্রচলিত সন্দেশের স্বাদ অপূর্ব।' জেলার রূপসা, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, ফুলতলা, তেরখাদা, দিঘলিয়া উপজেলায় খেঁজুর গাছে গাছীরা রসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। খেঁজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার ও গাছের উপরিভাগে ধারালো দা দিয়ে ছিলে রাখতে দেখা গেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার কাঁচা ও পাকা সড়ক পথ, দুই ধার, জমির আইল, বাড়ির আঙ্গিনাসহ বিভিন্ন পতিত জায়গায় ছড়িয়ে আছে কয়েক হাজার খেজুর গাছ। গাছিয়াল মোঃ বশির মিয়া জানান, প্রতি বছরে শীতের এই মাসে খুব পরিশ্রম করতে হয় আমাদের। খুব ব্যস্ত সময় পার করছি খেঁজুর গাছের পেছনে। গাছের রস সংগ্রহ করতে যেতে হয় কষ্ট করে। শীত যত বেশি হয় রসও শীতের সাথে সাথে বেশি হয়।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: