ফুলবাড়ীয়ায় ঐতিহ্যবাহী গুটি খেলায় লাখো মানুষের সমাগম
আল-আমিন, ফুলবাড়ীয়া (ময়মনসিংহ) থেকে: কোভিড আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান হওয়ায় উন্মুক্ত স্থানে সর্বপ্রকার জনসমাগম নিষিদ্ধ থাকলেও ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় লক্ষীপুর তালুক-পরগনা সীমান্তে লাখো মানুষের সমাগমে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে গতকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত হলো ২৬৩তম ঐহিত্যবাহী হুমগুটি খেলা। খেলাটি প্রাচীনকাল থেকে এখানকার ঐতিহ্য জানান দিয়ে আসছে। প্রতিবছর পৌষের কনকনে শীতের শেষ দিনে তালুক-পরগনা সীমান্তে খেলার আয়োজন করা হয়। জমিদার আমলে শুরু হওয়া প্রায় ২শ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ খেলাকে কেন্দ্র করে আনন্দে মেতে উঠে গ্রামের প্রতিটি মানুষ।ছোট ছেলে-মেয়েরা পড়ে নতুন জামা-কাপড়, গ্রামে গ্রামে জবাই হয় শতাধিক গরু-খাসি। ঘরে ঘরে তৈরী হয় শীতকালীন রসালো পিঠা-পায়েস পুলি আরও কত...কি। খেলার জন্য নানা গ্রামের মানুষের মাঝে কিছু দিনের জন্য হলেও বাড়ে ভ্রাতৃত্ববোধ ও আত্মীয়তা, এটাই কি কম কিসের। এ আনন্দকে ভাগা-ভাগি করে নিতে দূর দুরান্ত থেকে নাইওর আসে বৌ-ঝি’রা।
এদিন গ্রামের নারী-পুরুষের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়। খেলা শুরুর দিন বেলা বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। শেষ বিকেলে হাজারো খেলোয়াড়ের পৃথক মিছিল উপস্থিত হয় সেই বড়ইআটা বন্দে। পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকে শত শত মানুষ মাঠের চারপাশে জড়ো হয়।কিছু আনুষ্ঠানিকতার পর একপর্যায়ে আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যদিয়ে খেলা শুরু হয়।হাজারো মানুষের ভিড়ে কোথায় যেন হারিয়ে যায় ২১ কেজি ওজনের পিতলের গুটি। এক গুটির দখল নিতে লড়াই গ্রামের লাখো জনতার। তবে রেফারিবিহীন খেলা শুরু থেকে গুটি নিয়ে ব্যাপক কাড়াকাড়ি হলেও কোন মারামারি হয় না। ঘন্টায় ঘন্টায় খেলার রং বদলায়।নিজেদের দখলে নিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয় খেলায়। খাল-বিল ও মাঠ-ঘাট পেরিয়ে গুটি গুম না হওয়া পর্যন্ত চলে খেলা। অনেক সময় সারারাত চলার পর শেষ হয় পরদিন ভোর বেলা। কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি জানায়, আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। নানা রকম প্রচলিত গ্রামীন আয়োজন এখন অনেক কমে গেছে।
দেশের যুবসমাজ শিল্পসংস্কৃতি ভুলে যেতে বসেছে। পুরনো সংস্কৃতি তাদের সামনে তুলে ধরতে এ ধরণের প্রতিযোগিতার বিকল্প নেই। ঐতিহ্যবাহী এ হুমগুটি খেলার প্রতি মনের অজানা টানে হাজারো মানুষ প্রতিবছর তালুক-পরগনা সীমান্তে ছুটে আসে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুক্তাগাছার জমিদার শশী কান্তের সাথে ত্রিশালের হেমচন্দ্র রায় জমিদারের প্রজাদের মধ্যে তালুক-পরগনা জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়।সেই বিরোধ নিস্পত্তির জন্য তালুক-পরগনা সীমান্তে এ খেলার আয়োজন করে। খেলার শর্ত ছিল যেদিকে গুটি যাবে তা হবে তালুক, পরাজিত অংশের নাম হবে পরগনা। সেথেকে প্রজাদের শক্তি পরিক্ষার জন্য জমিদারদের এ পাতানো খেলা চলছে বছরের পর বছর ধরে। আয়োজক কমিটির সভাপতি এ,বি, ছিদ্দিক জানান, গ্রামবাংলার প্রাচীনতম
খেলাধূলার মধ্যে হুমগুটি অন্যতম পুরনো একটি খেলা, যা কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী এই খেলা ধরে রাখতেই প্রতিবছর এ উদ্যোগ নেয়া হয়।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: