হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিশ্চিত নয় পুলিশ!

প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১২:৩৬ পিএম

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা গেছেন এবং ঢাকার কাছে একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। তার মেয়েকে উদ্বৃতি করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করেছে। তবে হারিছ চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে এখনও আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে তার নামে রেড নোটিশ ঝুলছে। আর ঢাকার পুলিশ বলছে, তিনি মারা গেছেন কিনা তা তারা নিশ্চিত নন। বিষয়টি সিআইডি খতিয়ে দেখছে।

২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসলে আত্মগোপনে চলে যান হারিছ চৌধুরী। এরপর থেকে তাকে ধরিয়ে দিতে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা হয়। এক যুগেরও অধিক সময় ধরে এই নোটিশ ঝুললেও তার অবস্থানের পুলিশ নিশ্চিত হয়নি বা তাকে গ্রেফতার করতে পারে নি।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও বিএনপির সাবেক এই নেতার মৃত্যুর খবর জানিয়ে তার স্বজনরা দাবি করে বলেছেন, তিনি দেশেই আত্মগোপনে ছিলেন। এবং রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন। এমন দাবির পর ইন্টারপোলের রেড নোটিশের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি 'এই মোস্ট ওয়ান্টেড' আসামিকে এত বছরেও গ্রেফতার করতে না পারায় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

হারিছ চৌধুরী দেশেই আত্মগোপনে ছিলেন পরিবারের এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের নানা স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কথা বলতে রাজি হননি। পুলিশের চারজন কর্মকর্তা বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে কার্যক্রম চালায় পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) শাখা। হারিছ চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে এখনও ইন্টারপোলে রেড নোটিশ থাকার বিষয়ে ব্যুরোর সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম জানান, হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন, আমরা এখনো এই ব্যাপারে নিশ্চিত নই। তবে গণমাধ্যমে এই ধরনের সংবাদ আমাদের নজরে এসেছে। এসব সংবাদ আমরা আমলে নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) চিঠি দেওয়া হয়েছে।'

তিনি আরো জানান, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাটি তদন্ত করেছিল সিআইডি। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতেই ওই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করার আবেদন করা হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি আবেদন যাচাই-বাচাই করে ওই নোটিশ তাদের ওয়েবসাইটে দেয়। এখন তদন্ত সংস্থা সিআইডি যদি ওই আসামির মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তাহলে ওই নোটিশ সরানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে সিআইডির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এর আগেও হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর বেরিয়েছিল। এবারও তার পরিবারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে ভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়েছে তার পরিবার। তার চাচাতো ভাই দাবি করেছেন, হারিছ চৌধুরী যুক্তরাজ্যে মারা গেছেন। আবার তার মেয়ে দাবি করেছেন, ঢাকাতেই মারা গেছেন। এখন তিনি যে মারা গেছেন, তা তার পরিবারকেই নিশ্চিত করতে হবে এবং রেড নোটিশ সরাতে তদন্ত সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সিআইডি শুধু পুরো বিষয়টির ওপর নজরদারি করছে।

এদিকে রবিবার (১৬ জানুয়ারি) ইন্টারপোল ওয়েবসাইটের রেড নোটিশভুক্ত ব্যাংলাদেশ চ্যাপ্টারে দেখা যায়, বিভিন্ন অপরাধে পলাতক বাংলাদেশের রেড নোটিশধারী ৫৮ জনের মধ্যে হারিছ চৌধুরীর নাম ও ছবি ১৩ নম্বরে রয়েছে। সেখানে তার নাম চৌধুরী আবুল হারিছ লেখা রয়েছে। এখানে তার জন্ম তারিখ থেকে শুরু করে জাতীয়তা, জন্মস্থান, উচ্চতা, চুল ও ওজন চোখের রংসহ দৈহিক বিবরণ রয়েছে। রেড নোটিশে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ রয়েছে।

বেশ কিছুদিন ধরে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে তার চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরী সামাজিক যেগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক স্ট্যাটাসে ইঙ্গিত দিলেও সরাসরি কিছু বলেননি। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, হারিছ চৌধুরী যুক্তরাজ্যে মারা গেছেন। এরই মধ্যে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামীরা তানজীন চৌধুরী (মুন্নু) জানান, তার বাবা গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের তিন তারিখে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান। তিনি হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু, দাফন ও ঢাকায় আত্মগোপনে থাকাসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন।

 

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: