ইসি আইনের উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় বিএনপি: কাদের

প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:১৯ পিএম

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দীর্ঘ দিনের আকাক্সিক্ষত নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের মহৎ উদ্যোগকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি নেতৃবৃন্দ বিভ্রান্তিকর মন্তব্য ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। আজ বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে তিনি এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের বিশিষ্টজন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহ সংবিধানের নির্দেশনা মেনে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে যেখানে স্বাগত জানিয়েছেন সেখানে কিএনপি ও তাদের দোসর দেশবিরোধী অপশক্তি দূরভিসন্ধিমূলক বাক্য প্রদান করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পঁয়তারা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ, সমাজের বিশিষ্টজন ও সংশ্লিষ্টদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার কর্তৃক নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ এবং ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে এ সংক্রান্ত খসড়া আইন অনুমোদন পাওয়ায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংসদীয় রীতি অনুযায়ী খসড়া আইনটি সংসদে উত্থাপনের পর আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। সেখান থেকে সুপারিশ আকারে সংসদের বৈঠকে উঠবে এবং সংসদীয় বিধান অনুযায়ী সংসদে আলোচনার মধ্য দিয়ে আইনটি চূড়ান্ত হবে। জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল এবং বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যগণ তাদের মতামত ও প্রস্তাব উপস্থাপনের সুযোগ পাবেন। অথচ গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার না মেনে পূর্ব নির্ধারিত দূরভিসন্ধি অনুযায়ী বিএনপি নেতৃবৃন্দ এই আইন নিয়ে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করতে শুরু করেছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রকৃতপক্ষে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল ও স্বৈরতন্ত্রের গর্ভে জন্ম নেওয়া এবং ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের আবর্তে পরিচালিত বিএনপি’র রাজনৈতিক অবস্থান সব সময়ই গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়াবিরোধী। যে কোন উপায়ে ক্ষমতা দখল ও গোষ্ঠী স্বার্থ চরিতার্থের অভিপ্রায়েই নির্ণিত হয় বিএনপি’র রাজনৈতিক গতিপথ। তাই বিএনপি নেতারা নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে স্বাগত না জানিয়ে বিষয়টি নিয়ে অপরাজনীতিতে লিপ্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আইনটি নিয়ে বিএনপি নেতবৃন্দের সুস্পষ্ট ধারণা না থাকার জন্যই তারা অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছে। কারণ তাদের জন্মই হলো সাংবিধানিক ও প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে চোরাগুপ্তা পথে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে। এই আইন প্রণয়ন নিয়ে কোনো ধরনের লুকোচুরি করা হয়নি। রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে এ বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক রীতি ও প্রক্রিয়াকে ভয় পায় বলেই বিএনপি সংলাপে অংশগ্রহণ করেনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, একটি নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও শান্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে সকল স্টেকহোল্ডার তথা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহ দীর্ঘ দিন ধরে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের দাবী জানিয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ই ২০১২ ও ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের আলোকে সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা ও মতামত গ্রহণের মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। ওই দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন গঠন আইন প্রণয়নের দাবী জানায়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপিও তখন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের দাবী জানিয়েছিল। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলসমূহের সদ্য সমাপ্ত হওয়া সংলাপে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহ নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের দাবী জানিয়েছে। আওয়ামী লীগও সংলাপে অংশগ্রহণ করে এই আইন প্রণয়নের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে। তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ও সুদৃঢ় ভিত্তি রচনায় সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে এ দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়। গণতন্ত্রের শিশুকে আতুড় ঘরেই হত্যা করা হয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও কোন সরকারই এই আইন প্রণয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। একমাত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারই টেকসই গণতন্ত্রের শক্তিশালী কাঠামো বিনির্মাণে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। গণতন্ত্রের পুষ্পিতপত্র একদিনে প্রস্ফুটিত হয় না। সুনিবিড়ি পরিচর্যা ও অনুশীলনের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্রের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে। তবে পরিতাপের বিষয় এখনও গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তি ছদ্মবেশে গণতন্ত্রের পিঠে ছুরিকাঘাত করে চলেছে। কাদের বলেন, আমরা সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করাল লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন আইন নিয়ে যে খসড়া অনুমোদিত হয়েছে, সে সম্পর্কে গঠনমূলক আলোচনা ও দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানান তিনি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: