বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ির লোকদের বিদেশে পাঠানোর নামে অর্থ আত্মসাৎ

প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:৩১ পিএম

কুমিল্লায় একাধিক প্রতারণা করে বিয়ের মাধ্যমে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শাকিল মাহমুদ আজাদ ওরফে কাতারি জামাই (২৯)কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১ এর সিপিসি-২এর দল। মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিন থানাধীন পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকা থেকে কুখ্যাত প্রতারক আজাদ শাকিল ওরফে কাতারি জামাইকে আটক করেছে বলে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কোম্পানী অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন। প্রতারক শাকিল মাহমুদ আজাদের বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার অশ্বদিয়া এলাকার আবু হানিফের পুত্র। সে প্রতারণার মাধ্যমে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, নীলফামারী ও ফরিদপুরে বিভিন্ন এলাকায় বিয়ে করে কাতারি জামাই সেজে প্রতারণা করে দীর্ঘদিন পালিয়ে ছিল।

র‌্যাব জানায়, প্রতারক শাকিল আজাদ কাতারি জামাই (২৯) বিদেশে পাঠানোর নাম করে শশুরবাড়ী এলাকা হতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। বিয়েকে সে প্রতারণার প্রধান অস্ত্র হিসেবে বেছে নেয়। প্রথমে স্বল্প পরিচিত কারো এলাকায় ঘুরতে যাওয়ার বাহানায় দরিদ্র কিংবা অসচ্ছল পরিবারের মেয়েকে প্রবাসী পরিচয়ে বিয়ে করতেন। এরপর এলাকায় কাতার প্রবাসী জামাই হিসেবে নিজের পরিচয় তৈরি করতেন। নানান ভাবে ছোট খাটো দান ছদকা করে এলাকার মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতেন।

এরপর নানান কৌশলে শশুরবাড়ির এলাকার বেকার যুবকদের প্রবাসে চাকরি দেবার টোপ দিতেন। তার ফাঁদে পা দিয়ে যেসব বিদেশ গমন প্রত্যাশী তার নিকটে আসতো প্রথমেই সবার কাছ থেকে ভিসা পাসপোর্ট বানানোর কথা বলে নিয়ে নিতেন মোটা অংকের টাকা। এসময় বিশ্বাস অর্জনের জন্য ভুক্তভোগীদের ব্যাংকের ব্ল্যাঙ্ক চেকও দিতো এই প্রতারক। কিন্তু ব্লাঙ্ক চেকের ব্যাংক একাউন্টটি থাকতো ফাঁকা! এমনকি টাকা নেয়ার সময় অনেক ভুক্তভোগীর সাথে কোরআন ছুঁয়ে শপথ করতেও দ্বিধাবোধ করতেন না তিনি।

এরপর ভিসা ও পাসপোর্টের বিভিন্ন জটিলতার কথা বলে কিংবা সাময়িক হজ্বের ভিসা দেবার কথা বলে আরো নানানভাবে কয়েক ধাপে টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি। আর কোন এলাকা থেকে এসব কৌশলে মোটা অংকের টাকা হাতানো হয়ে গেলে বউ এবং শশুরবাড়ি ফেলে রেখে ব্যবহৃত মোবাইল ও সিম বন্ধ করে ফেলে দিয়ে নিখোঁজ হয়ে যেতেন আজাদ শাকিল। এক্ষেত্রে বিয়ে করার সময়ই আজাদ সেসব পরিবারের মেয়েদেরকেই টার্গেট করতো যাদের তার বিরুদ্ধে মামলা করার সামর্থ্য নেই। ওদিকে কথিত কাতারি জামাই বিদেশ নেবার কথা বলে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হবার পর ভুক্তভোগীরা এসে চাপ প্রয়োগ করতো তার শশুর-শাশুরীর ওপর। একদিকে মেয়েকে ফেলে প্রতারক জামাইয়ের ফেরারী হওয়া আরেকদিকে এলাকার প্রতারণার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের চাপে ভয়াবহ দূর্বিসহ অবস্থায় পড়তো আজাদের দরিদ্র শশুরবাড়ির লোকজন।

র‌্যাব আরও জানায়- চটগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, নীলফামারী ও ফরিদপুরে অনেকটা একই রকমভাবে বিয়ে করে কাতারি জামাই সেজে প্রতারণা করে পালিয়েছেন তিনি। প্রতারক আজাদ শাকিল ৪র্থ প্রতারণামূলক বিয়েটি করেন খুলনায়। সেখানকার নানান মানুষকে বিদেশে নেবার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে পলাতক ছিলেন তিনি। এসময় এলাকাবাসীর রোষানলে পড়ে প্রতারক আজাদের ৪র্থ স্ত্রী ও শশুরবাড়ির লোকজন। অনেকটা বাধ্য হয়েই নারী নির্যাতন দমন আইনে আজাদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেন তারা অত:পর ভোক্তভোগীরা তার শশুর ও শাশুরীর নামে মামলা করলে তার শশুর ও শাশুরী এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়।

আজাদ শাকিলের আসল বাড়ি কুমিল্লার বরুড়ায় জানতে পেরে গত ১৫ দিন আগে কুমিল্লায় আসেন আজাদের ৪র্থ স্ত্রী এবং র‌্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লা ক্যাম্পে এ বিষয়ে সবিস্তারে লিখিত অভিযোগ করেন। এরই প্রেক্ষিতে এই কুখ্যাত প্রতারককে আটকে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে র‌্যাব। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও মাঠ পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে অবশেষে ২৫ জানুয়ারি রাতে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিন থানাধীন পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকা থেকে কুখ্যাত প্রতারক আজাদ শাকিল ওরফে কাতারি জামাইকে আটক করতে সক্ষম হয় র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা এর একটি আভিযানিক দল।

কোম্পানী অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন- প্রতারক শাকিলের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় প্রতারণার বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও এতোদিন নানান কৌশলে গাঁ ঢাকা দিয়ে অধরাই ছিলেন তিনি। প্রতারণার মাধ্যমে হয়েছেন লাখ লাখ টাকার মালিক। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানায় প্রতারণার টাকায় চট্রগ্রামে নিজের একটি বেকারির দোকানও খুলেছিলেন তিনি। মাঝে একবার কাতারেও পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন আজাদ কিন্তু বিদেশে লোক নেবার কথা বলে অসংখ্য মানুষের সাথে প্রতারণা করায় ভুক্তভোগীদের অনবরত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার পাসপোর্টটি বাতিল করে দেয় ইমিগ্রেসন কর্তৃপক্ষ।

ফলে বিদেশে পালাতে না পেরে বেকারী ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে চট্রগ্রামেই থাকা শুরু করেন তিনি। গোপনে নিজ গ্রামের বাড়ি আসতে গিয়ে র‌্যাবের জালে ধরা পড়ে এই প্রতারক। উক্ত বিষয়ে গ্রেফতারকৃত প্রতারকের বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতারক গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবেও তিনি জানান।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: