রংপুরে দুই শিশুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:৪১ পিএম

হাসান আল সাকিব, রংপুর থেকে: রংপুরের কাউনিয়ায় টাকা চুরি সন্দেহে শামীম হোসেন (১০) ও রাসেল (৯) নামে দুই শিশুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে এক ইউপি সদস্য ও অভিযোগকারী দুই ভাই। খবর পেয়ে নির্যাতনের শিকার শামীমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও সেখান থেকে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পরে নিজ বাড়িতে শামীমসহ পুরো পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখে প্রভাবশালী ইউপি সদস্য ও তার লোকজন। তবে সন্ধ্যায় রাসেলকে কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার শামীম কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের রাজিব মোল্লাটারী গ্রামের সামসুল হকের এবং রাসেল ওই ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের চৈতারামোড় বাজেমজকুর গ্রামের মন্তাজ আলীর ছেলে।

শামীমের মা সোহাগী বেগম জানান, সংসারে অভাবের কারণে শামীম একটি পিকআপে সহকারী হিসেবে কাজ করে। চারদিন পর মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে নাওগা থেকে বাড়ি ফিরে খাওয়া শেষে গাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে লোকমুখে জানতে পারেন যে, সংশ্লিষ্ট ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইউনুস আলী তার ছেলের হাত পা বেঁধে পেটাচ্ছে। পরে তিনি জানতে পারেন যে, মঙ্গলবার রাতে ওই এলাকার আকরাম হোসেন নামে এক ব্যক্তির ঘরের সিঁধ কেটে ৭০ হাজার টাকা কে বা কারা চুরি করেছে। এ ঘটনায় আকরাম এবং তার ভাই ইয়াকুব ও ইউপি সদস্য ইউনুস আলী তার ছেলেকে সন্দেহ করে অমানবিক নির্যাতন চালায়।

পরে খবর পেয়ে কাউনিয়া থানা পুলিশ ওই বাড়ি থেকে শামীমকে উদ্ধার করে। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করতে গেলে ইউনুস মেম্বারের লোকজন তাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরে গেলে সেখানে পুরো পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখে আকরাম ও ইউনুস মেম্বারের লোকজন। এ ঘটনার পর থেকে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবারটি।

রাসেলের বাবা মন্তাজ আলী জানান, বুধবার সকালে তিনি কাজে বেরিয়ে যান। বিকেলে বাড়ি ফিরে জানতে পারেন যে, দুটি মোটরসাইকেলে করে ইউসুফ মেম্বার সহ ৪/৫ জন লোক এসে তার ছেলেকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং বেধড়ক মারধর করে। এ অবস্থায় বাড়ি ফিরে আসে সে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শিশু রাসেল জানায়, অনেক আকুতি মিনতি করেও মেম্বারের নির্যাতন থেকে রক্ষা হয়নি। টাকা চুরি করিনি বলার পরেও তাকে এবং শামীমকে বেঁধে পিটিয়েছেন মেম্বার এবং আকরাম ও ইয়াকুব।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই ইউপি সদস্য কারণে অকারণে বিভিন্ন বয়সী শিশু ও মানুষদের ধরে এনে মারধর করেন। তার ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ওমর ফারুক জানান, রাসেলের দুই উরুতে চারটা সুঁই ফোটানো হয়েছে এবং বাম হাঁটুর নিচে ফোলা আছে। এছাড়া ডান পায়ের পাতায় রক্ত জমাট হয়েছে। তার এক্স-রে করার জন্য প্রস্তুতি চলছে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ইউনুস আলী বলেন, আমি মারধর করিনি। আকরাম ও ইয়াকুবের বাড়িতে মারধর করা হয়েছে।

মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে আকরাম হোসেনে মুঠোফোনে বলেন, প্রথমে শামীমকে নিয়ে আসা হয়। পরে তার কথামত রাসেলকে আনা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, মেম্বার শিশু দুইজনকে চর থাপ্পর মেরেছে।

কাউনিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুমুর রহমান বলেন, ইউপি সদস্যের বাড়ি থেকে শিশু দুটিকে উদ্ধার করে পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়। পরে শুনলাম একজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং অপরজন বাড়িতে।এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: