সেন্টমার্টিনে পরিবেশ দূষণের দায়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা জরিমানা

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ১১:০৭ পিএম

দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিন সরকার ঘোষিত একটি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন এবং পর্যটকদের অসচেতনতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, পরিবেশ ও প্রতিবেশবিরোধী আচরণের কারণে সেন্টমার্টিনের বিরল প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। এমতাবস্থায় স্থাপনা নির্মাণ প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় ৪ টি রিসোর্টকে অবৈধ পাকা ভবন নির্মাণের দায়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ যেনো বিশাল মরুভূমির মাঝে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে নামে।

বৃহষ্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। জব্দ করা হয়েছে কয়েকটি নির্মাণাধীন রিসোর্টের বিপুল পরিমাণের নির্মাণ সামগ্রী। সেই সঙ্গে নির্মাণাধীন কয়েকটি রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে নিজ খরচে স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার জন্য ৭ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নওরীন হকের নেতৃত্বে দ্বীপের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আজহারুল ইসলামসহ পরিবেশ কর্মী ও পুলিশের অভিযানে আটলান্টিক রিসোর্টকে অবৈধ পাকা স্থাপনা নির্মাণের দায়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

ওদিকে দ্বীপের পরিবেশ আইন লঙ্ঘন পুর্বক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারিরাও উল্টো পরিবেশ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন। তারা বলেছেন, খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরই দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন সেন্টমার্টিন দ্বীপে পাকা দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেছে। দুপুরে দ্বীপের পাকা ভবনের রিসর্টগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানকালে এমন ‘উল্টো অভিযোগের’ মুখে পড়েন অভিযান পরিচালনাকারিরা।

রিসোর্টটির দায়িত্বরত ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন এক লাখ টাকা জরিমানা করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গণমাধ্যমকে জানান, ‘যে দ্বীপে পাকা ভবন করার দায়ে আমাদের লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে সেই দ্বীপেই পরিবেশ অফিসটিও নির্মাণ করা হয়েছে পাকা দুতলা ভবন। পরিবেশ অধিদপ্তর পাকা ভবন করলে দূষণ হয়না কিন্তু আমরা করলে নাকি দূষণ হয়।’

এ বিষয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আজহারুল ইসলামের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর সরকারের যথাযথ অনুমতি নিয়ে দ্বীপে পাকা ভবনের অফিস নির্মাণ করেছে। এটা সরকারি অফিস, কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা নয়। আমরা দ্বীপে এরকম স্থাপনা করতে কাউকে নিষেধ করছি না। কেবল বলছি, সরকারের নিয়মানুযায়ি অনুমতি নিয়ে করুন।’ পরিবেশের কক্সবাজার অফিসের উপ পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা এ বিষয়ে জানান, দ্বীপে কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের সময় থাকার জন্য অফিসে অবশ্য রেষ্ট হাউজ হিসাবে কয়েকটি কক্ষ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আজহারুল ইসলাম অভিযানের বিবরণ দিয়ে জানান, দ্বীপে সাগরের পানিছোঁয়া সৈকতে নির্মাণাধীন রয়েছে রাজধানী ঢাকার তেঁজগাও কলেজের অধ্যক্ষ অবদুর রশীদের মালিকানাধীন ‘ড্রিমার্স প্যারাডাইস’ নামের রিসোর্টটি। ভ্রাম্যমান আদালত রিসোর্টটিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে নিজেদের খরচে আগামী সাত দিনের মধ্যে স্থাপনাটি ভেঙ্গে ফেলার নির্দ্দেশনা দিয়েছেন। অনুরূপ প্রিন্স হ্যাভেনকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইনে এক লাখ টাকা ও অবৈধ স্থাপনার দায়ে ফ্রেন্ডস রিসোর্টকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এগুলোসহ আরো কয়েকটি পাকা স্থাপনাও সাত দিনের মধ্যে ভেঙ্গে ফেলার নির্দ্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও কয়েকটি স্থাপনা পরিবেশ কর্মীরা হাতুড়ি দিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছেন।

এদিকে সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ আশপাশের এক হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া (এমপিএ) ঘোষণা করার বিষয়টির গুরুত্ব জনসমক্ষে তুলে ধরে করণীয় নির্ধারণের জন্য এক মত বিনিময় সভা আহবান করেছে জেলা প্রশাসন। আগামী রবিবার সকাল ১১ টায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এ সভা ডাকা হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ এ বিষয়ে জানিয়েছেন, ‘দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি যেকোন ভাবে আমাদের রক্ষা করতে হবে। এ কারণে দ্বীপ ও দ্বীপ সন্নিহিত সাগরের পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা সর্ম্পকে স্থানীয় বাসিন্দাদেরকেই সচেতন করা দরকার।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: