আড়াই হাজার ফেসবুক আইডি হ্যাক পঞ্চম শ্রেণি পাস যুবকের
প্রাথমিকের গণ্ডিটা পেরোতে পেরেছিলেন কেবল। কিন্তু শিক্ষার অভাব তার অপরাধের ভয়াবহতায় বাধা হয়ে দাড়াতে পারেনি। কম্পিউটারের কাজে পারদর্শী ছিল। একপর্যায়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শুরু করে। এই কাজ করতে গিয়ে তার মাথায় ফেসবুক আইডি হ্যাক করার চিন্তা আসে। তারপর থেকে শুরু করে আইডি হ্যাক। একে একে হ্যাক করেছে প্রায় আড়াই হাজার আইডি। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ গ্রেফতার করেছে লিটন ইসলাম (২৮) নামের ওই যুবককে।
ডিবি সাইবারের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লিটন প্রথমে অনলাইনের মাধ্যমে ফিশিং লিংক ক্রিয়েট করে। পরে ফিশিং লিংকটির সঙ্গে বিভিন্ন রকমের ছবি/ভিডিও জুড়ে দিয়ে সেটি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করতো। এ ছাড়া তার টার্গেট করা যেকোনো নারী-পুরুষের ই-মেইল বা ফেসবুক মেসেঞ্জারের পাঠিয়ে দিতো। এসব ফিশিং লিংকে প্রবেশ করতে চাইলে ফেসবুকের আইডি-পাসওয়ার্ড লাগে। যারা আইডি-পাসওয়ার্ড দিয়ে প্রবেশ করতো সঙ্গে সঙ্গে তার আইডি হ্যাকার লিটনের নিয়ন্ত্রণে চলে যেত। লিটন মানুষের আইডির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ওই আইডির মেসেঞ্জারে থাকা ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি-ভিডিও তার হেফাজতে নিয়ে যেত। একপর্যায়ে আইডির মালিককে ফোন করে তার আইডি হ্যাকের বিষয়টি জানাতো। সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে টাকা দাবি করতো। কেউ টাকা দিতে না চাইলে তার ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়ে সামাজিকভাবে হেয় করার ভয়ভীতি দেখাতো। আবার অনেকের আইডি থেকে রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট ও জঙ্গি বানানোর হুমকি দিতো।
ডিবি সূত্র বলছে, ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী আনোয়ার হোসেন (৫০) আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, ২৭শে ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার সময় অলিউল্লাহ কাজী নামের অপরিচিত আইডির মেসেঞ্জার থেকে তার মেসেঞ্জারে ফিশিং লিংক পাঠায়। তিনি ওই লিংকে প্রবেশ করলে রিডাইরেক্ট করে অন্য ওয়েবপেইজে নিয়ে যায়। এটি দেখতে হুবহু ফেসবুক- এর মতো। তিনি ওই ওয়েব পেইজে তার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করার চেষ্টা করা মাত্রই আইডি চলে যায় হ্যাকারের নিয়ন্ত্রণে। পরে ওই আইডি থেকে হ্যাকার বিভিন্ন ধরনের মানহানিকর পোস্ট দেয়। হ্যাকার আনোয়ারের মেসেঞ্জারের মাধ্যমে জানায় তার আইডি হ্যাক করে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তার সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য এবং ফেসবুক অ্যাক্টিভিটির স্ক্রিন রেকর্ডিং সংরক্ষণ করেছে। হ্যাকারের চাহিদামত টাকা দিলে আইডি ফিরিয়ে দিবে এবং কোনো ক্ষতি করবে না। আর যদি চাহিদামতো টাকা না দেয় তবে তার ব্যক্তিগত তথ্য ফেসবুক বন্ধদের ট্যাগ করে শেয়ার করে দিবে।
আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি একটি ফুড সাপ্লিমেন্ট কোম্পানির বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করি। ২৭শে ফেব্রুয়ারি আমার আইডি হঠাৎ করে হ্যাক হয়ে যায়। তারপর ওই হ্যাকার আমাকে প্রথমে মেসেঞ্জারে পরে আমার হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে নানা রকম হুমকি, ভয়ভীতি ও বকাবকি করতে থাকে। আমাকে হুমকি দিয়ে বলে যদি তার চাহিদামতো টাকা না দেই তবে আমাকে নাস্তিক, দেশদ্রোহী ও জঙ্গি বানিয়ে জেলে পাঠাবে। আমার পরিচিত ব্যক্তিদেরকেও আমার হয়ে টাকা চাইতে থাকে। তিনি বলেন, আমি তাকে টাকা দেয়ার নাম করে ঘুরাতে থাকি। তারপর থানায় জিডি করি। যখন মামলার এজাহার লেখা চলছিল তখনো সে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছিল। পরে আমি কৌশলে তার কাছ থেকে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর নিয়ে আসি। ওই মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তাকে সাইবার টিম গ্রেপ্তার করে।
ভুক্তভোগী এক কলেজপড়ুয়া তরুণী বলেন, একদিন সন্ধ্যার পর অপরিচিত একটি আইডি থেকে আমার ছবি সংবলিত একটি লিংক আমার মেসেঞ্জারে আসে। আমার নিজের ছবি দেখে আমি ওই লিংকে ক্লিক করি। তারপর আমার আইডি ও পাসওয়ার্ড চাইলে আমি দেই। তার কিছুক্ষণের মধ্যে আমার মেসেঞ্জারে ফোন দিয়ে এক ব্যক্তি বলে আমার আইডি তার নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। আমার ছেলে বন্ধুকে পাঠানো যাবতীয় ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও তার কাছে। এখন ৫০ হাজার টাকা দিলে আইডি ফিরিয়ে দিবে। না হলে আমার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছ ছবি-ভিডিও পাঠিয়ে হেয় করবে। প্রয়োজনে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে ভাইরাল করবে। উপায়ান্তর না পেয়ে আমি তার কথামতো ৫০ হাজার টাকা দেই। কিন্তু টাকা পেয়েও আমার আইডি ফিরিয়ে দেয়নি। ফের আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আরও টাকা নিতে থাকে। প্রায় দেড় লাখ টাকা দিয়ে আমি আইডি উদ্ধার করেছি।
গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (উত্তর এবং সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, লিটন চাঁদাবাজির জন্যই আইডি হ্যাক করতেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, আমেরিকা-ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের আইডি হ্যাক করে অর্থ হাতিয়েছেন তিনি। মেয়েদের আইডি হ্যাক করে মেসেঞ্জার থেকে গোপন তথ্য নিয়ে জিম্মি করে টাকা হাতিয়েছেন। এই লিটনের খপ্পরে পড়ে নাকানি-চুবানি খেয়েছেন অনেক ভিআইপি ও শিল্পপতিও। তাকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য মিললেও তারা কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে আগে থেকে পুলিশের সহায়তা নেননি।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: