আমার এত শান্তি লাগছে, বললেন হেনস্তার শিকার সেই তরুণী

প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২২, ০১:৪০ পিএম

নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে এক তরুণীকে হেনস্তার ঘটনায় অভিযুক্ত মার্জিয়া আক্তারকে (৬০) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গত রবিবার রাত ৩টার দিকে জেলার শিবপুরের মুনছেপের চর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। গতকাল সোমবার র‌্যাব-১১ নরসিংদীর ক্যাম্প কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌহিদুল মুবিন খান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

এদিকে ওই নারীকে গ্রেপ্তারের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছে হেনস্তার শিকার সেই তরুণী। দেশের একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় ওই তরুণী বলেন, ঘটনার পরে গত কয়েকদিনে আমি ঘুমাতে পারিনি। কিছু খেতে পারিনি। আজ আমার মনটা অনেকখানি শান্ত। আজ আমার অনেক শান্তি লাগছে। ঘটনার পরে যারা প্রতিবাদ করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

জানা গেছে, গ্রেপ্তার মার্জিয়া আক্তার নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার ডোকেরচর ইউনিয়নের আদিয়াবাদ গ্রামের প্রয়াত আয়েত আলীর মেয়ে। তিনি পেশায় ঘটক। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব জানায়, নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে তরুণীকে লাঞ্ছিতের ঘটনার ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ওই ঘটনার মূলহোতা মার্জিয়া আক্তার ওরফে শিলা ওরফে শায়লা আত্মগোপনে চলে যায়। পরে র‌্যাব গোপন সংবাদ পেয়ে শিবপুরের মুনছেপের চর এলাকায় শিলার খালার বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। এ সময় তার কাছ থেকে ১টি মোবাইল ফোন ও নগদ ১৯৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব আরও জানায়, গত ১৮ মে ভোর ৫টার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে এক তরুণী ও দুজন তরুণ ঢাকাগামী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সে সময় স্টেশনে থাকা মধ্যবয়সী এক নারী ওই তরুণীর পরনের পোশাক সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে তার সঙ্গে থাকা দুই তরুণের সম্পর্কেও কটু মন্তব্য করায় তাদের সঙ্গে ওই নারীর বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই নারীর সঙ্গে রেলস্টেশনে থাকা আশপাশের আরও কিছু যুবক ও দুজন স্থানীয় নারী যোগ দেয়। এরপর এক নারী ভুক্তভোগী তরুণীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে এবং তাকে হেনস্তা করে। পরে বখাটে যুবকরা ওই তরুণীর সঙ্গে থাকা দুই তরুণকে মারধর করে। এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী তরুণী নিজেকে বাঁচাতে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে স্থানীয় থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই তরুণী এবং তার সঙ্গে থাকা দুই তরুণকে ট্রেনে উঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।

পরে ওই ঘটনার ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ও নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তরুণী হেনস্তার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। হেনস্তার ঘটনার দুদিন পর শুক্রবার রাতে নরসিংদী শহরের ইউএমসি জুট মিলের সামনে থেকে ইসমাইল মিয়া নামে এক যুবককে আটক করে নরসিংদী সদর মডেল থানা পুলিশ। পরদিন ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে বিচারক হেনস্তার ঘটনার তদন্ত করে মামলা করার নির্দেশ দেন। পরে ওইদিন রাতেই নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল জাহেদী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলা করেন।

মামলার এজাহারে ইতিমধ্যে আটক হওয়া ইসমাইল মিয়া ও মার্জিয়া আক্তারের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও এক নারী ও ১০ পুরুষকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও ক্লিপ দেখে সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের আসামি করা হয়। তরুণী হেনস্তার ওই ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়ায় র‌্যাব জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় মার্জিয়া আক্তারের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তাকে তার খালার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: