বেনাপোল চেকপোস্ট দালালমুক্ত করতে নানা পদক্ষেপ কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন পুলিশের
দীর্ঘদিন পরে হলেও দালালমুক্ত করা হলো বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস ও পুলিশ ইমিগ্রেশন। চলতি বছরের শুরু থেকেই বহিরাগতদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবে পাশাপাশি বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়ে যাত্রীদের দিয়ে চোরাচালানী ব্যবসার সহযোগিতা করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এমন অভিযোগ উঠেছে পাসপোর্ট যাত্রীদের নিকট থেকে।
ভারত গমনাগমনকারী পাসপোর্ট যাত্রী হয়রানি বন্ধে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফলে পাসপোর্টযাত্রী ছাড়া কোন ব্যাক্তিকে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন টার্মিনালে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া যোগদানের পর থেকেই এ সাহসী পদক্ষেপ নেয়ার ফলে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনকে দালালমুক্ত করতে প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক স্ক্যানিং মেশিন, সিসি ক্যামেরা। সশস্ত্র আনসার সদস্যদের দিয়ে জোরদার করা হয়েছে যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। টার্মিনালের প্রধান ফটকে বন্দরের নিরাপত্তা কর্মী, আনসার সদস্য ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের সার্বক্ষনিক নজরদারিতে রাখায় প্রবেশ করতে পারছে না পাসপোর্ট দালালেরা। ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের সেবার মান বৃদ্ধি করায় যাত্রীরা দ্রুত ও সুশৃঙ্খলভাবে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারছেন নিজেরাই।
যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ যাত্রী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকে। করোনা সংক্রমন কমে আসায় যাত্রী যাতায়াত বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাতায়াত করেছে এক লাখ ৪১ হাজার ২১০ জন পাসপোর্টযাত্রী। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ৭৭ হাজার ৩২০ জন। আর ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ৬৩ হাজার ৮৯০ জন পাসপোর্ট যাত্রী।
কাস্টমস সুত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল চেকপোস্টে এক শ্রেণীর লোক দূরদূরান্ত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছিল। সিরিয়াল ছাড়া তাদের পাসপোর্ট দ্রুত করে দেয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল ঐ চক্রটি। পাসপোর্ট যাত্রীদের পক্ষ থেকে কাস্টমসে অভিযোগ করলে চেকপোস্ট কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনকে দালালমুক্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়। যাত্রীদের সেবার মান উন্নত করতে চেকপোস্ট প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের বহিরাগত দালাল উৎখাতে এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে টার্মিনাল এলাকায় বহিরাগত কোনো দালাল ঢুকতে না পারে সে জন্য প্রতিনিয়ত তদারকি করা হচ্ছে।
বেনাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে ভারত থেকে আসা পাসপোর্ট যাত্রী নিরাঞ্জন বৈরাগী ( পাসপোর্ট নং ইএফ-০৬৫৯৩৪৫) বলেন, এই চেকপোষ্টের কাস্টমসে দুর্নীতি বেড়েছে। আগে আসার সময় আত্বীয় স্বজনকে ফোন দিলে তারা কাস্টমসে এসে আমাদের নিয়ে
যেত। তেমন কোন টাকা পয়সা লাগত না। এখন ভারত থেকে বেনাপোল কাস্টমসে প্রবেশ করার সাথে সাথে ব্যাগ ধরে কি আনলাম না আনলাম তা না দেখে বড় অংকের টাকা দাবি করে বসে কাস্টমস সদস্যরা। আমার কাছে থাকা ভারত থেকে আনা দুটি থ্রি পিছ ও দুইটা শাড়ী দেখে কাস্টমস সিপাই মামুন বলে ৮ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি হতভাগ হয়ে যাই। জোর করে আমার ব্যাগ রেখে দেয় তাদের বেঞ্চের নিচে। এরপর আমি ৩ হাজার টাকা দিয়ে বের হই। আমার মত অসংখ্য নারী পুরুষদের তারা
হয়রানি করছে।
ঢাকার পাসপোর্ট যাত্রী সুরাইয়া খাতুন বলেন, ভারত থেকে ফেরার পথে কাস্টমস সদস্যরা তার ক্রয়কৃত কিছু পণ্য আটকিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। এরপর ১২ হাজার টাকা দিয়ে ওই পণ্য আমি নিয়ে আসি। পণ্যগুলি ট্যাক্স করে ১২ হাজার টাকা নিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরে না ঘুষ, ঘুষ, ঘুষ বাবদ নিয়ে আমাকে ছেড়েছে। এরকম কত যাত্রীদের নিকট থেকে নিচ্ছে যেয়ে দেখে আসেন।
এদিকে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে (বর্ডার কার্গো জিরো পয়েন্টে) বহিরাগত অনুপ্রবেশ বন্ধ ও পাসপোর্টযাত্রীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষে গত ৩১ মে চেকপোস্ট প্যাসেজ্ঞার টার্মিনাল সম্মেলন কক্ষে বেনাপোল স্থল বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মনিরুজ্জামান এর সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বেনাপোল কাস্টমস হাউজের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া, উপ-কমিশনার অনুপম চাকমা, এইচ এম আহসানুল কবির, আবদুল কাইয়ুম, বন্দরের উপ পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল, উপ পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার, পোর্ট থানার ওসি কামাল হোসেন ভূইয়া, চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ওসি মোহাম্মাদ রাজুসহ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন এলাকায় বহিরাগত কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। পোর্টের লেবাররা তাদের সীমানার মধ্যে যাত্রীদের ব্যাগেজ বহন করতে পারবে। কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন এলাকায় যাত্রীরা নিজেরাই ট্রলি ব্যবহার করে যাতায়াত করবেন। লেবাররা যাতে পাসপোর্টযাত্রীদের হয়রানি করতে না পারে সেদিকে নজর রাখা হবে। চেকপোস্টে একটি যাত্রী হেলপ ডেস্ক স্থাপন করা হবে। যাতে যাত্রীরা তাদের যাতায়াতে সর্বত্র সেবা পাবেন। সেই সাথে খাবার ও সুপিয় পানি ও পর্যাপ্ত ট্রলির ব্যবস্থা করা হবে। সেই সাথে অসুস্থ ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা যাতায়াতে পাবেন হুইল চেয়ার।
বেনাপোল চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশনের ওসি মোহাম্মাদ রাজু জানান, বর্তমানে প্রতিটি যাত্রীকে সিরিয়ালে দাঁড় করিয়ে তাদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হচ্ছে। যাত্রী সেবা বাড়াতে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে ইতিমধ্যে কাউন্টার বৃদ্ধি করা হয়েছে। ক্যানসার ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা কাউন্টারে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া জানান, বর্তমানে চেকপোস্ট কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনকে দালালমুক্ত করা হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়ন করতে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। বর্তমানে কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়া নিরাপদে যাত্রীরা ভারত গমনাগমন করছেন। কোন ধরনের হুমকী ধামকি দিয়ে কাস্টমস এ দালাল প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। ঝামেলামুক্তভাবে যাত্রীরা যাতে ভারত যাতায়াত করতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: