বর্ষার প্রস্তুতি: নবাবগঞ্জে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২২, ০১:৪৯ পিএম

হালকা পাতলা বৃষ্টি জানাচ্ছে বর্ষার আগমনী বার্তা। এতে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নৌকার কারিগর ও কাঠ ব্যবসায়ীরা। নতুন নৌকা তৈরি যেনো ধুম পড়েছে আবার অনেকেই পুরাতন নৌকা মেরামত ব্যস্ত। বর্ষায় নিচু অঞ্চলের বাসিন্দাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাড়ায় নৌকা। চারদিকে বর্ষায় যখন রাস্তাঘাট তলিয়ে যায় তখন নৌকা ছাড়া কোনো ভাবেই পারাপার হওয়া যায় না। তাই জৈষ্ঠ্যের শুরু থেকেই বিভিন্ন গ্রামে নৌকা তৈরি করতে দেখা গেছে।

অনেকেই আবার কলা গাছের ভেলা তৈরি করে বর্ষাকালীন সময় পারাপারে কাজটুকু চালিয়ে নিচ্ছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় না বলে এই ভেলার গুরুত্ব অনেক কম। শুরু হয়েছে বিভিন্ন হাট-বাজারে বর্ষার আগেই নৌকা বিক্রির ধুম। তাই বসে নেই কারিগররা। নবাবগঞ্জের বাগমারা কাঠ পট্টির কারিগররা নৌকা তৈরিতে এখন মহাব্যস্ত। দিনরাত এক করে নৌকা তৈরি করছে তারা। সেই সাথে চলছে পুরনো নৌকা মেরামতের কাজ। তাই গ্রামগঞ্জে মৌসুমী ডিঙি নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত মাঝি ও কারিগরা।

ইছামতি নদীর পানি বৃদ্ধি আর ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টি আগমনী বর্ষার বার্তা জানান দিচ্ছে। তবে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর, বারুয়াখালী, শিকারীপাড়া পদ্মা তীরবর্তী এলাকা সবার আগে প্লাবিত হয়। এছাড়াও কলাকোপা, বক্সনগর ও নয়নশ্রী ইউনিয়ন ইছামতি নদীর তীরবর্তী হওয়ার পদ্মা থেকে আসা পানি এই সব অঞ্চলকে আংশিক প্লাবিত করে। তাই প্লাবিত এলাকার মানুষের নৌকাই একমাত্র ভরসা।

বাগমারা ফার্নিচার ব্যবসায়ী সৈয়দ আলী বলেন, আমি এমনিতে খুচরা ও বিভিন্ন হাটে বিক্রির উদ্দেশে কমদামি খাট, চৌকি, ঘরের দরজা, জানালা তৈরি করি। আর বর্ষা আইলে নৌকা বানাই। এই সময় আইলে আমার কারিগররা দম ফেলার সময় পায় না। আমার একজন কারিগর দিনে একটা নৌকা বানায়। সারা সাপ্তাহ যা নৌকা বানান হয় খুচরা দুই একটা বিক্রি ছাড়া সব নৌকা বিক্রি হয় আমাগো পাশের জেলা মুন্সীগঞ্জের শিবরামপুর হাটে। প্রতি বৃহস্পতিবার ঐ হাটে আমার সব নৌকা বিক্রি হয়ে যায়। তবে আগের চাইতে বিক্রি কমেছে। পানি বাড়লে বিক্রি বাড়বে। এবার ৮ থেকে ১০ হাত নৌকা ৪/৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নৌকা বড় হলে দামও বৃদ্ধি পায়।

শুরগঞ্জ কাঠ পট্টির নৌকা তৈরির কারিগর জনি মন্ডল বলেন, পারিবারিক ভাবে আমরা কাঠ মিস্ত্রিরি কাজ করি। এমনিতে নতুন টিনের ঘর তৈরি করি। তবে বছরে দুই মাস নৌকা বানাই। বর্ষাকালে ঘরের কাজ একটু কম থাকে তাই বিকল্প হিসেবে নৌকা বানাই। আর রোজ হিসেব করলে অন্য সময়ের চাইতে ২ থেকে ৪ শ টাকা বেশি পাই। ঘরের কাজে আমাদের মুজিরি ৬ শ টাকা আর একটা নৌকা বানাতে পারলে পাই ৮ শ টাকা। দুই দিনে ৩ টা নৌকা বানানো সম্ভব।

পাশের দোকানের নৌকা তৈরির কারিগর বিজয় মন্ডল বলেন, নৌকার কাজ ১২ মাস থাকলে অনেক ভালো হতো। এই দুই তিন মাস আমরা প্রতিদিন গড়ে হাজার টাকা আয় করতে পারি। কাজেও ঝুঁকি কম। আমাদের অনেক মিস্ত্রি ঘরের চাল ছাইতে গিয়ে পরে পঙ্গু হয়েছে। তবে যেহেতু কাজ শিখছি কাঠ মিস্ত্রিরি ঝুঁকি থাকবেই। এই নৌকার সিজনে পরিবারের সবাই নিশ্চিন্তে থাকে আরকি।

কলাকোপা ইউপি সদস্য বাবুলাল মোদক বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি আর আগের মতো বর্ষা না হওয়ার কারনে দিন দিন নৌকার চাহিদা কমছে। তবে বর্ষা মৌসুম জুড়ে নৌকার চাহিদা বাড়ে। আর নিচু অঞ্চলের মানুষের বর্ষায় যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। তাই বর্ষার আগেই কেউ কেউ নৌকা কিনে রাখছেন। বর্ষায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারনে দামও বেড়ে যায়। তাই ক্রেতারা এখন ই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আবার কেউ পুরাতন নৌকা মেরামত করতে শুরু করেছে।

উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের বারুয়াাখালী, নবগ্রাম, মাদলা, ব্রাহ্মণখালী, বাহেরচর, হাগ্রাদি, দাউদপুর, গজারিয়া, শংকরদিয়া, সোনাবাজু, রাজাপুর, বালেঙ্গা, তিতপালদিয়া, ভাঙ্গাপাড়া ও জৈনতপুর এলাকা পদ্মার তীরবর্তী অঞ্চল হওয়ায় কম বেশি সব সময় ই নৌকার চাহিদা থাকে। তাই এই অঞ্চলের মাঝি, জেলে ও কৃষকদের নৌকা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েছে।

কলাকোপা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ ইব্রাহীম খলিল বলেন, এখন যেমন ছেলেপেলেরা মোটরসাইকেল কিনে আমাদের সময় একটা নৌকা মানে অনেক কিছু ছিলো। আমার ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতি নদী। অমর এই নদীতে বন্ধুরা মিলে নৌকা চালাতাম। কোথাও যেতে হলে আমরা নৌকা নিয়েই যেতাম। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন এখন আমাদের নৌকার ওপর নির্ভরশীলতা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে। এই ইউনিয়নের যে কটি খেয়া-পারাপার ছিল তার অর্ধেক ব্রিজ হবার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। নৌকার মাঝিরা নতুন পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছেন। উন্নত জীবন যাপনের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। আমরা একসময় নৌকায় চলাচল করতাম এখন গাড়িতে চলাচল করি। বাস্তবতা এটাই স্বাভাবিক।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: