তাপদাহে বিপর্যস্ত কালিয়াকৈরের জনজীবন, বাড়ছে রোগী

প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০২২, ০৩:০৩ পিএম

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের প্রভাব দেশজুড়েই পড়েছে। এরই মধ্যে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। সূর্যের প্রচণ্ড উত্তাপে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। রোদের তেজে ঘর থেকে বের হচ্ছে না অনেক মানুষই। হাসপাতালগুলোতে বেড়েই চলছে রোগীর চাপ। কোথাও কোথাও দু'এক পশলা বৃষ্টিপাত হলেও গরমের তীব্রতা থেকে রেহাই মেলেনি।

তারই ধারাবাহিকতায় তীব্র গরম আর কাঠফাটা রোদে কালিয়াকৈরের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড তাপদাহে কালিয়াকৈর সহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় একই অবস্থা বিরাজ করছে। এতে সব চেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন কালিয়াকৈরের খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। রোদের তেজে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অনেকেই। গরমের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে শিশুরা পুকুর অথবা বাসার মটর ছেড়ে পাইপের মাধ্যমে কিংবা শ্যালো মেশিনের পানিতে দিন পার করছে। অনেকেই আবার একটু স্বস্তি খুঁজে নিতে গাছের ছায়াতলে কিংবা শীতল কোনো স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন।

তীব্র তাপদাহের পাশাপাশি আবার লোডশেডিং যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। এদিকে দিনের ভাগে গরম তো আছেই সাথে রাতেও কমছে না ভ্যাপসা গরমের তোড়। দিনের বেলায় মানুষ এদিক-সেদিক সময় পার করতে পারলেও রাতের বেলায় পড়ছে ব্যাপক সমস্যায়।

উপজেলার হাসপাতালগুলোতে জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়া রোগির সংখ্যা বরাবরের তুলনায় অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ করে এসব রোগ বেরে যাওয়ার কারণ হিসাবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপদাহ ও ভ্যাপসা গরমের জন্য এসব রোগ বেরে গেছে পাশাপাশি বেশি গরম থাকার কারণে মানুষ ঠান্ডা জাতীয় খাবার ও পানীয় বেশী বেশী পান করায় জ্বর, সর্দিসহ পানিবাহিত রোগ হচ্ছে।

গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহত তাপদাহের কারণে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে খেটে খাওয়া মানুষেরা। সেই সঙ্গে বাতাসের আদ্রতা ছিল ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত, যা বাড়াচ্ছে দুর্ভোগ। বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) উপজেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

যদিও শুক্রবার (১৫ জুলাই) তাপমাত্রা কিছুটা কম এবং বাতাসের গতিবেগ কিছুটা বেড়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বিদ্যমান তাপদাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। তবে, সোমবার-মঙ্গলবার নাগাদ কিছুটা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদদের ভাষ্যমতে, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মাঝারি ও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের অধিক থাকলে তীব্র তাপদাহ বলে। এ হিসাবে বর্তমানে কালিয়াকৈরে মৃদু তাপদাহ বিরাজ করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সূর্যের প্রচণ্ড উত্তাপে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন কালিয়াকৈর এলাকার জনসাধারণ। গরমের তীব্রতা থেকে রেহাই পেতে অনেকেই দেখা গেছে ছাতা হাতে চলাফেরা করতে। রাস্তার পাশের আখের রসের দোকান, ডাবের দোকান, পানীয় ও শরবতের দোকানগুলোতে অনেক মানুষের ভিড় দেখা যায়।

চাতালশ্রমিক শহিদুল বলেন, ধান শুকাতে গিয়ে গরমে অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। দিনে দুই-তিনবার গা পানিতে ভেজাতে হয়। কবে যে বৃষ্টি হবে। গরমে রাতেও ঘুমাতে পারি না, শরীর ব্যাপক চুলকায়।

শাহীন স্কুলের শিক্ষিকা অপর্না পাল বলেন, গতকাল দিনে এবং রাতে ছিল প্রচণ্ড গরম। এটা সহ্য করার মতো না। আজকে গরম আরো বেশি। ট্যাংকিতে মনে হয় পানি ফুটিয়ে রাখা হয়েছে, টেপের কল ছারলে এমনটাই মনে হয়। ট্যাংকির পানি এত গরম হয়ে থাকে যে, ব্যবহার উপযোগি না। বাচ্চারা এই পানি পান করা অথবা গোসল কোনটাই করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে পানির মটর ছেড়ে নিচ থেকে পানি এনে খাবার জন্য রেখে দেয়া হচ্ছে এবং পানির মটর ছেড়ে নিচ গিয়ে বাচ্চারা গোসলের কাজ সারছে।

শুধু গ্রামে নয়, শহরের চিত্রও একই দেখা যাচ্ছে। কালিয়াকৈর ট্রাকস্ট্রান্ড এলাকায় ইজিবাইকচালক নাছির উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, গরমের কারণে রাস্তাঘাটে যাত্রী কম। ঈদের পরে রাস্তায় অনেক লোক থাকে কিন্তু শহরে তেমন লোকজন নেই। গরমের কারণে লোকজন কম বের হচ্ছে, তাই আমাদের আয়ও কমে গেছে।

কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাঃ আল বেলাল জানান, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়াসহ জ্বর, সর্দি ও ঠান্ডা-কাসি রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে জ্বর, সর্দি ও ঠান্ডা-কাসি রোগীর পরিমান অনেক বেশী।

এই রোগগুলো ভাইরাস ও অতিরিক্ত গরমের কারণে হঠাৎ বেরে গেছে। এদের মধ্যে অনেকের করোনা টেস্ট করা হচ্ছে, যাদের করোনা পজেটিভ আসে তাদের চিকিৎসা দিয়ে বাড়ী পাঠাচ্ছি। এ বিষয়ে ভয়ের কোন কারন নেই। আমাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা ১৯ জুলাই থেকে ইউনিয়নে ইউনিয়নে কোরনার বুস্টার টিকা দিব।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: