নীলফামারীতে দেশী প্রজাতির মাছের আকাল

নীলফামারীতে ভরা বর্ষায়ও দেখা মিলছে না দেশী প্রজাতির মাছের। আমরা মাছে ভাতে বাঙালি এই প্রবাদটির ব্যাপক প্রচলন থাকলেও বর্তমানে বাস্তবের সাথে এ কথার কোন মিল নেই। এখন চলছে বর্ষা মৌসুমের মধ্য সময়। অর্থাৎ ভরা বর্ষা। নদীতে পানি নেই একদিকে করোনায় দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকা, অন্যদিকে ভরা বর্ষায় কাঙ্ক্ষিত মাছের দেখা না পেয়ে মাথায় হাত পড়েছে নদীর উপর নির্ভরশীল স্থানীয় মৎস্যজীবীদের। নীলফামারী জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দেওনাই নদীর উপর নির্ভরশীল এসব জেলে পরিবার।
বর্ষা মৌসুম এলেই হাট বাজারে দেখা মেলে নানান প্রজাতির দেশীমাছের যেমন, পুটি, ডাড়কা, কৈ, শিং, ধেদল, ট্যাংরা, মাগুর, চিংড়ি, দারাঙ্গি, ঘোল, পাপদা, চান্দা, চোপড়া, চিলি, মৌকা, উরুয়া, গোতা, টুরি, খাটা, টাকি, চেং, শোল, গাজর, নাড়িয়া, ফুলবাচ্ছা, চেরূ, ঘাকশি বোয়াল সহ নানান প্রজাতির মাছ। বর্তমানে এসকল প্রজাতির মাছের দেখা মেলা ভার। যদিও হাট বাজারে মাঝে মধ্যে এসকল মাছ পাওয়া গেলেও তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। দাম আকাশ ছোঁয়া।
ভারত থেকে নেমে আসা নীলফামারীর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দেওনাই নদী এলাকা বিশেষে ভিন্ন নাম ধারন করেছে যেমন, পাঙ্গা নদী, দেওনাই, যমুনেশ্বরী, খেরুয়া, চারালকাটা। সম্প্রতি নদীতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ৩০জন জেলে একজোট হয়ে বড় বড় জাল পেতে নদীতে মাছ ধরছে। কিন্তু কাংখিত মাছের দেখা নেই। নদীর অনেকটা জায়গা জুড়ে জাল টেনে মাছ পেয়েছে প্রায় ২০থেকে ২৫কেজি। এরমধ্যে নাড়িয়া, ফুলবাচ্ছ, চেরূ, ঘাকশি খাটা মাছ ছাড়া দেশীয় প্রজাতির আর কোন মাছ নেই।
ডোমার সদর ইউনিয়নের দেওনাই নদী সংলগ্ন জেলে পাড়ার বৃদ্ধ যতিন চন্দ্র দাস (৭০) জানান, আগে আমরা মাছ বিক্রি করে উদ্বৃত্ত মাছ শুটকি করতাম। বর্ষাকালে জেলে পাড়ায় ঢুকলেই মাছের আষটে গন্ধ পাওয়া যেতো। আগে বড় বড় শোল, বোয়াল, পাঙ্গাশ এবং বাঘাইর মাছ ধরা পড়তো। এখন বড়মাছ নাই। দেওনাই নদীতে আগে একবার খেয়া দিলে এক খাঁচা মাছ পাওয়া যেত। এখন ৪দিন ধরে খেয়া দিলেও এক খাঁচা মাছ পাওয়া যাবে না। আমি পুটিমাছের ভাগা বিক্রি করেছি এক আনা দরে এখন দিনের হাজিরা উঠেনা।
জেলে পাড়ার মাছ ব্যবসায়ী জিতেন চন্দ্র দাস (৬০) জানান, নদীতে বড় কোন কুড়ো নেই। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে ছোট ছোট কুড়োতে কীটনাশক দিয়ে মাছ ধরায় দেশী মাছের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই নদীতে দেশী মাছের দেখা নেই। বর্তমানে পুকুরের চাষ করা মাছ বিক্রি করে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছি। শালকি নদী সুরক্ষা কমিটি রিভারাইন পিপলের আহবায়ক আমিনুর রহমান বলছেন, ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, পোনা মাছ নিধন, পানিতে বিষাক্ত বর্জ্য ফেলাসহ নানাবিধ কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ।
দেওনাই নদী সুরক্ষা কমিটি রিভারাইন পিপলের আহবায়ক আনোয়ার হোসেন সবুজ জানান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড গত বছর দেওনাই নদীর খনন কাজ সম্পন্ন করে। সঠিক ভাবে খনন না হওয়ায় নদীতে পানি থাকেনা। তাই দেশী প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া নদীর দুধারের মাটি বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। নদীর দু’ধারে গাছ লাগানোর কথা থাকলেও কোন প্রকার গাছ লাগানো হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিক ভাবে কাজ করা হলে নদীটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতো এবং দর্শনীয় স্থানে পরিনত হতো। সেই সাথে প্রচুর মাছও পাওয়া যেতো। দেশী প্রজাতির মাছ রক্ষায় সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: