আব্দুল লতিফ রঞ্জু

পাবনা প্রতিনিধি

ইউএনও’র ক্যামেরায় ৭৮ প্রজাতির পাখির সন্ধান!

   
প্রকাশিত: ১০:১২ অপরাহ্ণ, ২৪ জুলাই ২০২২

উত্তরের অন্যতম প্রাচীণ ও ঐতিহ্যবাহি জেলা পাবনার চাটমোহর উপজেলায় সন্ধান মিলেছে ৭৮ প্রজাতির পাখি। অর্থাৎ চলনবিল বেষ্টিত এই উপজেলায় বর্তমানে হড়েক রকমের পাখির উপস্থিতি রয়েছে। এই পাখিগুলোর মধ্যে অনেক পাখি রয়েছে বিলুপ্ত প্রায়। কিছু রয়েছে বিরল প্রজাতির, যা সচরাচর এই অঞ্চলে দেখা মেলে না। শুধু দেশী পাখিই নয়, পারিযায়ী পাখিও রয়েছে এই উপজেলায়।

গত ২০ মাসে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ সৈকত ইসলামের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে এসব বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। চাটমোহরের মতো একটি উপজেলায় এত প্রজাতির পাখির বৈচিত্র দেখা পাওয়া খুবই আশ্চর্যের। আগামীতে এমন আরও কিছু প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে বলে মনে করেন তিনি।

গত ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর চাটমোহরে ইউএনও হিসেবে যোগ দেন সৈকত ইসলাম। এর আগে তিনি বিভাগীয় কমিশনার, রাজশাহীর কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। এখানে যোগ দেবার পর অফিসের কাজ, সভা, সেমিনার সহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন তিনি। এর বাইরে কিছু কাজে তাকে ছুটতে হয় এক ইউনিয়ন থেকে আরেক ইউনিয়নে। ফটোগ্রাফি তার খুব পছন্দের ও শখের। তাই গ্রামাঞ্চলে বের হলে কাজ ও দায়িত্ব পালনের ফাঁকে যাওয়া-আসার পথে-ঘাটে, মাঠে তিনি ছবি তুলতে ভালবাসেন। বিশেষ করে পাখির ছবি তোলা তার খুব পছন্দের।

২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর চাটমোহর উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রথম পাখির ছবি তোলেন। সে পাখির নাম হলো ভাত শালিক। আর সর্বশেষ গত ০২ জুলাই উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা গ্রাম থেকে তোলেন ৭৮ তম পাখির ছবি। এ পাখিটির নাম কালিম। তার তোলা পাখির ছবিগুলোর মধ্যে খুব বেশি দেখা যায়না এমন পাখি হলো নীল কন্ঠ, জল ময়ুর, শাহ বুলবুলি।

ইউএনও সৈকত ইসলামের ক্যামেরায় সন্ধান পাওয়া পাখির মধ্যে লাল কান চটক, বাংলা বাবুই, দেশী চাদি ঠোঁট বর্তমানে খুব কম দেখা মেলে। এছাড়া লাল মুনিয়া ও হলদে পা হরিয়ান পাখি চাটমোহরে দেখা গেলেও তার ছবি তোলা যায়নি এখনও। টাইগা চুটকি, নীল গলা ফিদ্দা নামে দু’টি ইউরোপীয় পরিযায়ী পাখির সন্ধান মিলেছে এই উপজেলায়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ধুলাউড়ি গ্রামের ডাকাতির ভিটা এলাকায় দেখা গেছে পাখি দু’টিকে।

অম্বর চুটকি

চাটমোহরে দেখা পাওয়া উল্লেখযোগ্য পাখির মধ্যে রয়েছে, নীল কন্ঠ, চোখ গেলো, জল ময়ুর, নীল রাজন, অম্বর চুটকি, কাটুয়া চিল, কমলা বউ, দেশী বাবুই, হটিটি, সাদা খঞ্জন, শাহ বুলবুলি, মোহনচূড়া, বন চড়–ই, ফটিকজল, ভরত, তিলা মুনিয়া, এশীয় বসন্ত বাউরী, কমলা বউ, চোখ গেল, কাবাসি, কসাই পাখি, ভোমরা ছোটন, মেঠো পেট পাপিয়া, সাহেলী, ডাহুক সহ অনেক।

আলাপকালে ইউএনও সৈকত ইসলাম বলেন, চাটমোহরে যোগ দেবার পর প্রচুর পাখি দেখতে পাই। তখন মনে হয় পাখির ছবি তোলা যায়। ছবি তুলতে গিয়ে ৩০ প্রজাতির ছবি তোলার পর মনে হলো দেখিনা কত রকমের পাখি এখানে আছে। এভাবেই ছবি তোলা শুরু। সর্বশেষ ৭৮ প্রজাতির পাখির সন্ধান পেয়েছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রজাতির পাখির সন্ধান মিলেছে মথুরাপুর ইউনিয়নের চিরইল, হান্ডিয়াল, নিমাাইচড়া ও হরিপুর ইউনিয়নের ডাকাতির ভিটা এলাকায়।

ইন্ডিয়ান গোল্ডেন ওরিওল ফিমেইল

সৈকত ইসলাম বলেন, চাটমোহর চলনবিল বেষ্টিত অঞ্চল। এখানে ছোট ছোট অনেক পুকুর খাল, বিল, ডোবা , জলাশয় রয়েছে। সেইসাথে অনেক ঝোপঝাড়, জঙ্গল, ঘাস, লতাপাতা, বট, পাকুর, পিচ ফলসহ ফলজ গাছ আছে। যেগুলো পাখিদের বসবাস ও খাবারের জন্য খুবই উপযুক্ত পরিবেশ। যেকারণে চাটমোহর উপজেলায় অনেক প্রজাতির পাখির সন্ধান পাওয়া গেছে। সম্ভবত আরো অনেক রকমের পাখির সন্ধান পাওয়া যাবে।

এশিয়ান কোয়েল

সমস্যা ও করণীয় সম্পর্কে ইউএনও সৈকত ইসলাম মনে করেন, এখানে পুকুরে, খালে ও ঘাস নিধনে বিষ প্রয়োগ করা হয়। পাখিরা এখান থেকে খাবার সংগ্রহ করে। তাই বিষ প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। না হলে পাখি মারা যাবে। আগের চেয়ে পাখি শিকার অনেকটাই কমে গেছে। সবার মাঝে সচেতনতা তৈরী করতে হবে। আবার যেসব ফলজ গাছ রয়েছে সেগুলো ধরে রাখতে হবে। কেটে ফেললে পাখির সমারোহ কমে যাবে। চাটমোহরে অনেক রকম পাখি আছে, এটা জানলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ দেখতে আসবে বলেও মনে করেন সৈকত ইসলাম।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পাবনার বন্য প্রানী সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন নেচার এন্ড ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন কমিউনিটির সভাপতি এহসান আলী বিশ্বাস বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তা হলেও তিনি পাখি ও পরিবেশ প্রেমী, যা আমাদের জন্য খুশির খবর। যারা পাখি ও প্রকৃতির ছবি তোলেন তারা সব সময় চেষ্টা করেন এসব প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষনের। আশা করি তার নজরদারীতে সুরক্ষিত থাকবে চাটমোহরের প্রাণ-প্রকৃতি।

শাকিল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: