‘শেখ হাসিনা আমগরে বীরঙ্গনার স্বীকৃতি দিছে, আল্লাহ তারে বাঁচাইয়া রাখুক’

প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২২, ০৮:৫২ এএম

‘শেখ হাসিনা মায়ের মতো আঁচল দিয়া আমগরে ঢাইক্কা রাখছে। আমগরে খুইজ্জা বাইর কইরা বীরঙ্গনার স্বীকৃতি দিছে। আল্লাহ তারে বাঁচাইয়া রাখুক।’ তিনি ক্ষমতায় আওনের পর আমরা ভাতের লাগত পাইছি। স্বাধনীতার পরে কেউ আমগরে খোঁজখবর নেয় নাই। আমরা স্বামী হারাইয়া ছোট ছোট পোলাপাইন নিয়া কচুপাতা ও কচুরলতা খাইয়া কোন রকমে দিন কাটাইছি। কেউ আমগরে ভালা পায় নাই, সবাই ঘৃন্না করছে। শেখ হাসিনার উছিলায় এহন আমরা মাসে ২০ হাজার করে বীরঙ্গনা ভাতার টাকা পাই। আমরা এহন অনেক সুখে আছি। আমরা দোয়া করি শেখ হাসিনারে আল্লাহ দীর্ঘদিন বাঁচাইয়া রাখুক।

এভাবেই পাকহানাদার বাহিনীর হাতে নিহত স্বামীর স্মৃতিচারন করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কথা গুলো বললেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত সোহাগপুর বিধবাপল্লীর শহীদ হযরত আলীর স্ত্রী বীরঙ্গনা মহিরন বেওয়া (৭৫)।

আজ ২৫ জুলাই সোহাগপুর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক নৃশংস গণহত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছিল নালিতাবাড়ী উপজেলার কাঁকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামে। পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনী এইদিন ভারত সীমান্তঘেঁষা এ গ্রামের ১৮৭ জন পুরুষ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সকল পুরুষ মানুষকে হত্যা করায় এই গ্রামের নামকরন করা হয় ‘সোহাগপুর বিধবাপলী।’ এই পলীতে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ৫৬ জন বিধবা বেঁচে ছিলেন। বর্তমানে ২২ জন বিধবা বেঁচে আছেন। এর মধ্যে ১৪ জন বিধবাকে বীরঙ্গনার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ থেকে ৩ জন বীরঙ্গনা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। এখন জীবিত আছেন বীরঙ্গনা ১১ জনসহ ২২ জন বিধবা।

দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে রাজাকার আলবদরদের বিচার হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিধবাদের ভাগ্য বদল হয়েছে। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে সোহাগপুর গ্রামে। ইতোমধ্যেই ২৯ বিধবাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ লাখ টাকা মূল্যের একটি করে পাকাবাড়ি উপহার দিয়েছেন। বিধবাপলীতে যাওয়ার পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

গ্রামের পাশেই প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। তবে তা এখনো সরকারীকরন করা হয়নি। কাঁকরকান্দির বরুয়াজানী গ্রামে শহীদদের স্মরণে ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কলেজ’ করে দিয়েছেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি বেগম মতিয়া চৌধুরী। এছাড়াও সুদীর্ঘ ৫০ বছর পর শহীদদের স্মৃতি রক্ষার জন্য জেলা পুলিশ বিভাগের সদস্যরা তাদের বেতনের টাকা দিয়ে বিধবাদের জমি ক্রয় করে দিয়েছেন। চিহ্নিত করা হয়েছে শহীদদের গণকবর। আর স্মৃতিকে স্মরনীয় করে রাখতে আরো নির্মাণ করা হয়েছে ‘সৌরজায়া’ নামে স্মৃতি সৌধ।

ওই বিধবাপল্লীর বিধবা মহিরন বেওয়া, জুবেদা বেওয়া ও হাফিজা বেওয়া বলেন, আমরা এখন বীরঙ্গনা ভাতা ২০ হাজার, ট্রাষ্ট ব্যাংকের দেওয়া ২ হাজার ও বিধবাভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা করে পাচ্ছি। সরকারীভাবে দেওয়া পাকাবাড়ি রাস্তাঘাট সবই আমরা পেয়েছি। এজন্য আমরা বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তবে তারা বলেন এখন যে ভাতার টাকা পাচ্ছেন এর সিংহভাগ টাকা ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ ও ওষুধ ক্রয়ের জন্য খরচ করতে হচ্ছে। এছাড়া তাদের জীবনের শেষ আশা শিক্ষিত নাতি-নাতনীদের একটি চাকুরীর ব্যবস্থা করা।

এদিকে, দিবসটি পালন উপলক্ষে নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এতে উপস্থিত থাকবেন শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার হেলেনা পারভীন, স্থানীয় সুধী ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: