নবীগঞ্জের কুশিয়ারার ভাঙন তীব্র আকার ৫০টি পরিবার নদীগর্ভে

প্রকাশিত: ২৬ জুলাই ২০২২, ০৩:৩৬ পিএম

মুষলধারে বৃষ্টির জন্য হঠাৎ করে কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে নবীগঞ্জের কুশিয়ারা ডাইকে ভাঙন আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহে নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাঁক আউশকান্দি ও ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের ৫০টি পরিবার ও শতাধিক
একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

একই অবস্থা বিরাজ করছে নদীর অপর পারে জগন্নাথপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে। দুদিনে এলাকার শতাধিক পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে অন্তত অর্ধশতাধিক পরিবার রাস্তার ওপর খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারি কোন সংস্থা থেকে অসহায় পরিবারগুলোর সাহায্যে কেউ এগিয়ে না আসায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। দীঘলবাঁক ইউপির সাবেক মেম্বার মোঃ ফরিদ মিয়া জানান, বর্ষায় ভাঙন দেখা গেলেও এখন হঠাৎ করেই কুশিয়ারার ঘূর্ণি স্রোতের
আঘাতে এ ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম ভেঙে যেতে থাকে।

একদিনেই আধা কিলোমিটার এলাকার ধানী জমি কুশিয়ারার বক্ষে হারিয়ে যায়। দীঘলবাঁক গ্রামের ডাঃ শাহ ইউসুফ আলী বলেন, মানুষ বাড়িঘরে হঠাৎ কওে ভাঙ্গনের অগ্নিমুর্তি ধারন করে সরানোর সময়ও পাওয়া যায়নি। ভাঙনের ভয়াবহতায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ৬ অক্টোবর মালেক মিয়ার বাগানের প্রায় লক্ষাধিক টাকার গাছ বসতবাড়ি চোখের পলকে কুশিয়ারার তলিয়ে গেছে।

জামারগাঁও গ্রামের ফারুক মিয়া বলেন, এক একটি চাঁকা (ভাঙ্গনের মাটির পরিমান) ধসে পড়ছে প্রায় এক একর জমি নিয়ে।
যেকোন মুহুর্তে আমাদের এলাকায় ২৫টি গ্রাম বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে। ইতিমধ্যে স্বাধীনতার পর থেকে ভাঙন ২৫টি গ্রামের ১২/১৩শ’ বাড়ির মধ্যে এখন মাত্র পাঁচ থেকে সাতটি পুরানো বাড়ি অবশিষ্ট আছে।সব কিছুই সর্বনাশী কুশিয়ারা খাইছে। আগামী দুই চারদিনের মধ্যে সেগুলোও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

শ্রীমঙ্গলে বাসা ভাড়া করে থাকেন শাহ আশ্রব আলী বলেন পৈত্রিক বাড়ির এলাকা ভেঙে যাচ্ছে খবর পেয়ে ছুটে যান। ভাঙনের এমন
ভয়াবহতা গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি। স্থানীয় আউশকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিলাওয়ার হোসেন জানান, নবীগঞ্জ, জগন্নাথ পুর ও আজমীরিগঞ্জ উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের মানুষ কুশিয়ারা নদীর তীরে বসবাস করেন। গত এক সপ্তাহে কুশিয়ারা নদীর তীরের বসবাসকারী অন্তত দুই শতাধিক পরিবার ভাঙ্গনে বাড়িঘর হারিয়ে পথের ফকির হয়ে গেছে।

এদের কেউ কেউ আত্বীয় স্বজনের বাড়িতে, আবার কেউ খোলা আকাশের নিচে বেড়িবাঁধে বা রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। কলেজ শিক্ষক সোহাগ রহমান সোহাগ জানান, গত এক সপ্তাহে ওই এলাকার ২৫ থেকে ৩০টি গ্রামের অনেক বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। গতকাল হঠাৎ করে ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে।

আর মুহূর্তের মধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকা কুশিয়ারার তলিয়ে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ পানি উন্ন্ধসয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ বলেন, কুশিয়ারা ডাইক মেরামতের জন্য আমরা পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়কে জানানো হয়েছে। কুশিয়ারা ডাইকের অবস্থার ঝুকির মধ্যে রয়েছে এবং নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে এটা রক্ষার জন্য শুকনো মওসুমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: