অনুমোদন পাচ্ছেনা বদির ‘নাটকীয়’ কমিটি!

দেশের আলোচিত সাবেক সাংসদ আবদু রহমান বদি অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে জেলা সাধারণ সম্পাদক দিয়ে তাকে সভাপতি ঘোষণা দিয়ে গড়া টেকনাফ পৌর কমিটি অনুমোদন না দেওয়ার ঘোষণা দিযেছেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। অভিযোগ উঠেছে, দুর্নীতি মামালায় সাজাপ্রাাপ্ত হওয়ায় নির্বাচনে অযোগ্য হিসেবে গণ্য হয়। এ কারণে সহজে টেকনাফ পৌরসভায় সভাপতি পদে আসতে প্রতারণার পথ বেছে নেন বদি।
গত ২৪ জুলাই টেকনাফ পৌর আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলের আয়োজন করা হয়। এদিন নিয়ম বহির্ভূতভাবে জোরপূর্বক সম্মেলন ও কাউন্সিল আয়োজনের অভিযোগ এনে টেকনাফ পৌরসভার সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরীর নেতৃত্বে এ সম্মেলন বয়কট করেন একাংশ। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন (কাউন্সিল) বর্জন করে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতারাও।
সূত্র মতে, পৌর আওয়ামী লীগের মূল নেতারা সম্মেলন বয়কট ও বর্জন করায় ওইদিন অনুষ্ঠানের একাধিক সভাপতি পরির্তনের ঘটনাও ঘটেছে। এত কিছুর পরও সেদিন ‘নাটকীয়’ ভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে সভাপতি ও মোহাম্মদ আলম বাহাদুরকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান।
টেকনাফ পৌর ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি ওইদিন মূলত আবদু রহমান বদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সভাপতি বানানোর জন্য কথিত সম্মেলন ও কাউন্সিলের আয়োজন করা হয়েছিল। কাউন্সিল তালিকায় মাদক ব্যবসায়ী ও সাজাপ্রাপ্ত আসামী ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িতদের তালিকাভুক্ত করায় সে তালিকা অনুমোদন দেয়নি পৌর সভাপতি। এ কারণে কোন কার্যকরী পরিষদের মিটিং না করেই সভাপতিকে বাদ দিয়ে ১ম সহ-সভাপতিকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বানিয়ে সম্মেলন আয়োজন করা হয়। কিন্তু অগঠনতান্ত্রিক ভাবে তাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করায় তিনিও সম্মেলন ও কাউন্সিলে আসেননি। অথচ তার নামেই সব চিঠি ও প্রচারপত্র প্রচার করা হয়েছে। তিনি না আসায় আরেকজনকে ততক্ষণাত সভাপতি বানিয়ে সম্মেলন সম্পন্ন করেন বদি ও বাহাদুররা।
এ বিষয়ে টেকনাফ পৌর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপির কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, টেকনাফ পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরীকে কৌশলে দূরে রেখে এ সম্মলেন আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও তৈরিকৃত কাউন্সিলের তালিকারও অনুমোদন নেই। তালিকায় মাদক ব্যবসায়ী, সাজাপ্রাপ্ত আসামীও স্থান পেয়েছে। এ কারণে টেকনাফ পৌর ও উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতারা সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া সম্মেলন ও কাউন্সিল বয়কট ও বর্জন করেছেন।
টেকনাফ পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, কাউন্সিল অধিবেশনের জন্য করা কাউন্সিলর তালিকা নিয়ম বহির্ভূতভাবে করায় শুরু থেকে আমার কোন অনুমোদন নেওয়া হয়নি। সভাপতির অনুমোদনবিহীন তালিকা নিয়ে কিভাবে সম্মেলন হয় কিছুই বুঝতে পারছিনা।
পাশাপাশি আমি নির্বাচিত সভাপতি। কোন বৈঠক ছাড়া আমাকে বাদ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়েই সম্মেলন আয়োজন করে সাধারণ সম্পাদক এমএ বাহাদুর। তার পেছনে সব কলকাঠি নাড়ে সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি। এসব দেখে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে নাম প্রচার করা মনোসহ আমি এবং আরো অনেকেই সম্মেলন বয়কট করেছি।
তিনি আরও বলেন, এসব বিষয় উল্লেখ করে সম্মেলনের আগে জেলা সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমানকে অভিযোগ দেয়ার পর তিনি সম্মেলন এক সপ্তাহ পেছানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কথা রাখেননি। নিজে সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে বরং তিনিই বদি ও বাহাদুরকে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় সভাপতি-সম্পাদক ঘোষণা করে চলে আসেন।
পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি জাবেদের দাবি, সেটা (কমিটি ঘোষণা) তিনি (মেয়র মুজিব) করতে পারেন না। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার, অগ্রহণযোগ্য এবং গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। টেকনাফ পৌরসভা টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের আওতাধীন ইউনিয়নের মর্যাদার একটি ইউনিট। তাই এখানে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে কমিটি ঘোষণা দেবে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।
তাই বাধ্য হয়ে এ বিষয়ে আমি কেন্দ্রীয় নেতা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।
পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইউছুফ মনো বলেন, সভাপতির অনুপস্থিতিতে অন্যজনকে দায়িত্ব দেয়ার প্রয়োজন পড়লে একটি সভা ডেকে রেজুলেশন করা আবশ্যক। কিন্তু কোন বৈঠক বা রেজুলেশন না করে আমাকে ভারপ্রাপ্ত ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বদির নিকটাত্মীয় বাহাদুরের যোগসাজশে মনগড়া তালিকা প্রণয়ন করায় ওইদিন সম্মেলন আমিও বয়কট করেছি। তাই আমরা বদি-বাহাদুরের অবৈধ এ কমিটি মানি না।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, দলের টেকনাফ পৌরসভা উপজেলা আওয়ামী লীগের অধিনস্থ একটি ইউনিট। তাই এটার সম্মেলন আয়োজন তদারককারি উপজেলা আওয়ামী লীগ। জেলা নেতৃবৃন্দ ও সাংগঠনিক টিম এখানে অতিথি ও পরিদর্শক। কোথাও কোন ভুল হলে তা ধরিয়ে দেয়ার অধিকার জেলা নেতৃবৃন্দ ও সাংগঠনিক টিম প্রধান রাখেন। কিন্তু নিজেরা পছন্দের যে কাউকে তৃণমূলের পরামর্শ ছাড়া সভাপতি-সম্পাদক ঘোষণা করে আসতে পারেন না। জেলা সাধারণ সম্পাদক টেকনাফ-উখিয়ার ইউনিয়ন ছাড়াও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিতেও নাক গলিয়ে রহস্যজনক কারণে বিশেষ ব্যক্তিকে নেতা ঘোষণা করেছেন। এটা দলের জন্য বিব্রতকর এবং অগঠনতান্ত্রিক।
এছাড়াও সম্মেলনে উপস্থাপন করা কাউন্সিলর তালিকায় টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির সাক্ষর ছিলনা। কাউন্সিলর তালিকায় মাদক মামলার চার্জশীট ভুক্ত আসামী ও দুর্নীতি মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী এবং জামায়াত বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশকারীরা অন্তর্ভুক্ত হয়। সম্মেলনের পূর্বে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক টিমের প্রধানকে সাজাপ্রাপ্ত আসামীর রায়ের কপি এবং দুর্নীতি মামলার অভিযোগপত্রের কপি সরবরাহ করা হয়। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স এবং মাদক নির্মূলকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও টেকনাফ উপজেলায় তার বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করা হয়।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু বদি টেকনাফের রাজনীতিতে ‘বদের ছায়া’ ফেলতে চাইছেন এবং নিয়ম মতো কাউন্সিলর লিস্ট তৈরি করছেন না কিন্তু সম্মেলনের আয়োজন করছেন ঠিক তখনই সব বিষয় উল্লেখ করে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। তিনি সম্মেলন হলেও কাউন্সিল বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই নির্দেশনা না মেনে কাউন্সিল বিহীন বিতর্কিত বদিকে সভাপতি ও বাহাদুরকে সম্পাদক বলে অবৈধ কমিটি ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র মুজিব। তবে, তিনি এ ঘোষণা দিতে পারেন না। এ পৌর কমিটি গঠণ ও ঘোষণা দেয়ার একমাত্র এখতিয়ার আমাদের। তাই বদির নাটকীয় কমিটি টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ কোন মতেই অনুমোদন দিবে না।
দলের সম্মেলন ও কাউন্সিল তদারকিতে গঠিত উখিয়া-টেকনাফ সাংগঠনিক টিম প্রধান জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলম চৌধুরী ওরফে রাজা শাহ আলম ওইদিন বলেছিলেন, কাউন্সিলে বদি ও বাহাদুর ছাড়া কোন প্রার্থী না থাকায় তাদের বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় ঘোষণা করা হয়েছে। পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি জাবেদকে অপসারণ ও কমিটি ঘোষণা বৈধ হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি (রাজা শাহ আলম) বলেন, রাজনীতিতে শেষ বলে কোন কথা নেই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র মুজিবুর রহমানের মুঠোফোনে কর করা হয়। রিং হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে মুখোমুখী কথা বলতে কক্সবাজার পৌরসভা কার্যালয়ে যাওয়া হয় মঙ্গলবার দুপুরে। সেখানেও তার দেখা মিলেনি। পরে প্রশ্ন উল্লেখ করে হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু সেটারও রিপলে দেননি তিনি।
টেকনাফ পৌরসভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী ও উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নুরল বশরের দেয়া অভিযোগ বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপাওয়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপিকে ফোন করা হয়। তিনিও ফোন রিসিভ করেননি। বক্তব্য জানতে চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি এরও কোন উত্তর করেননি।
শাকিল/সাএ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: