মৌলভীবাজারে চা শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন

প্রকাশিত: ১৩ আগষ্ট ২০২২, ০৫:৫০ পিএম

মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা চায়ের পাতা উত্তোলন ও চা ফ্যাক্টরিতে কাজে যোগ না দিয়ে শনিবার (১৩ আগস্ট) দুপুর ১২ টার দিকে বিভিন্ন বাগান থেকে হাজার হাজার শ্রমিক জড়ো প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। বেশ কয়েকটি উপজেলায় প্রতিবাদ সমাবেশের পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করেছে শ্রমিকরা। চা- শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা। মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানসহ দেশের ১৬৭টি চা বাগানের শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করছেন।

শনিবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা চায়ের পাতা উত্তোলন ও চা ফ্যাক্টরিতে কাজে যোগ না দিয়ে আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ফ্যাক্টরি এলাকায় তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অবস্থান নেন। এসময় তারা সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। সমাবেশে চা শ্রমিকরা বলেন, সাপ্তাহিক ছুটি রোববার ও শোক দিবসের ছুটি আগামী দুদিন। ওই দুদিনের মধ্যে ৩০০ টাকা মজুরি দাবি না মানলে মঙ্গলবার থেকে আবার অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করবে তারা।

শ্রমিকদের সাথে আলাপ করে আরও জানা গেছে, চা-শ্রমিকদের সংগঠন চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে চা-বাগানের মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা-সংসদের করা চুক্তি অনুযায়ী, চা-শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ হয়। প্রতি দুই বছর পর পর এ চুক্তি সম্পাদনের কথা। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন হয়। ওই চুক্তিতে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আর নতুন করে চুক্তি হয়নি। সম্প্রতি চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশীয় চা-সংসদ মজুরি ১৪ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। কিন্তু, নেতারা এ প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা নির্ধারণসহ অন্যান্য দাবি-দাওয়া পূরণের বিষয়ে ১ আগস্ট চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশীয় চা-সংসদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। চিঠিতে দাবি মেনে নিতে সাত দিনের সময়সূচী বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানায় সংগঠনের পক্ষ থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শ্রীমঙ্গলে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি পংকজ পন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরাসহ বিভিন্ন ভ্যালি থেকে আসা চা শ্রমিক নেতারা।

এদিকে জুড়ীতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির সমাবেশে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের জুড়ী ভ্যালি কমিটির সভাপতি কমল চন্দ্র বুনার্জি বলেন, তাঁদের আওতাধীন জুড়ী, বড়লেখা ও কুলাউড়া উপজেলার মোট ৩৬টি বাগানে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চা-শ্রমিকরা দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে অতি কষ্টে দিনযাপন করছেন। প্রতিটি পরিবারে খরচ বেড়েছে। মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে একাধিক সময়ে বাগান মালিকদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে। প্রতি বছর মজুরি বাড়ানোর কথা থাকলেও গত ৩ বছর ধরে নানা টালবাহানা করে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না।

মির্তিঙ্গা চা বাগানে আয়োজিত কর্মবিরতি ও মানবন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালীর সভাপতি ধনা বাউরী। তিনি বলেন, চা বাগানগুলোর মালিক পক্ষ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়ন না করে আমাদের সাথে টালবাহানা করছে। আমাদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করার দাবি অনেক দিনের। মালিকপক্ষ ইতিমধ্যে ১৪ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা এটা মানতেছি না। ১৩৪ টাকা দিয়ে কীভাবে একজন শ্রমিকের জীবন চলবে? এ অবস্থায় বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে চা শ্রমিকের মজুরি ৩০০ টাকায় উন্নীত করার দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: