কুমিল্লায় কীটনাশক কারখানা, নানাবিধ সমস্যায় স্থানীয়রা
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ঘাটিগড়া গ্রামের ঘন জনবসতি এলাকায় বিসমিল্লাহ কর্পোরেশন লিঃ নামে কীটনাশক উৎপাদন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। একই প্রতিষ্ঠানের দুটি শাখা এই গ্রামে রয়েছে। প্রথমে এটি কীটনাশক ঔষধের গোডাউন ছিল। বর্তমানে উক্ত গোডাউনে বেআইনীভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ২০-৩০ ধরণের কীটনাশক ঔষধ তৈরি ও বাজারজাত করছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়।
এখানে উৎপাদিত কীটনাশকের গন্ধ দ্রুত বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে রাস্তায় চলাচলরত লোকজন নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কীটনাশকের ঔষধের বর্জ্য কৃষি জমিতে ফেলার ফলে ওই এলাকার আবাদী জমিতে ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকির অভাবে এ প্রতিষ্ঠানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার লোকজন। এ বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল পাচ্ছে না এলাকাবাসি। বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, প্রথমে গোডাউন ও পরে কীটনাশক প্রস্তুতকারী কারখানাটিতে বিষ জাতীয় ঔষধ তৈরী হলেও এই কারখানায় কোন ক্যামিষ্ট ও ল্যাবরেটরী নাই। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোন শ্রমিক ও কর্মচারী নাই। যার কারণে মান নিয়ন্ত্রণ না করে বোতলজাত ও প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। কোম্পানীটি স্থানীয় গরিব কৃষকদের দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে টাকার লোভ দেখিয়ে কাজ করাচ্ছে। এ সকল নিরীহ গরিব লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হাতে কীটনাশক তৈরী করে। ফলে অনেক কৃষক এ কারখানায় কাজ করে ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এক ড্রাম কীটনাশক ঔষধ দিয়ে প্রতারণামূলক ভেজাল মিশিয়ে ২০ ড্রাম কীটনাশক তৈরী করা হয়।
পূর্বে এই কারখানাটি চান্দিনা থানা সংলগ্ন হারং গ্রামে ছিল। ওই এলাকায় কীটনাশক তৈরির সময় বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়তো বিধায় এলাকাবাসীর চাপে চান্দিনা থানা পুলিশ এ কারখানাটি কয়েকবার সীলগালা করে। পরে থানা পুলিশের ভয়ে এ কারখানাটি ঘাটিগড়া গ্রামে গরিব লোকালয়ে স্থাপন করে। কারখানাটি কুটুম্বপুর কালিয়ারচর রাস্তার পাশে। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক লোক যাতায়াত করে। কারখানাটির ১০ গজের মধ্যে জনসাধারণের বসতবাড়ি। যেখানে লোকজন স্থায়ীভাবে বসবাস করছে।
এ কারখানাটির ১০ গজের মধ্যে মসজিদ এবং ৫০ গজের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। যেখানে জনসাধারণ মসজিদে ৫ ওয়াক্ত নামাজ, ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে। কীটনাশকের ভয়াবহ দূর্গন্ধে মুসল্লি, ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া এবং জনসাধারণের চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছে। ফলে এ এলাকায় সুস্থ্যভাবে বসবাস করা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাতাসে কীটনাশকের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে, জনসাধারণ এবং পশু-পাখি, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী ইত্যাদি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এ কারখানার বিষাক্ত কীটনাশক ঔষধের ব্যবহারের কারণে এলাকার গর্ভবতী মহিলারা আশংকাজনক অবস্থায় রয়েছে। অনেকের নবজাতক শিশুও মারা যায়। মনিপুর গ্রামের ফারুকের ছেলে, নেসার উদ্দিনের মেয়ে এবং কাসেমের ছেলে মারা গেছে। হাতে তৈরী কীটনাশকের ঔষধের বর্জ্য কৃষি জমিতে ফেলার ফলে ওই এলাকার আবাদী জমিতে ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে না। জনবহুল এলাকায় কারখানাটি স্থাপন করার ফলে এ কারখানার কীটনাশক লোকজন ব্যবহার করছে। এছাড়া এ এলাকায় কীটনাশক ঔষধ খেয়ে আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়ে গেছে। কিছুদিন আগে পরচঙ্গা ও কেশেরা গ্রামের ২ জন কীটনাশক ঔষধ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ কারখানার মালিক মুজিবুর রহমান পরচঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। তিনিই এ কারখানাটি জনবহুল এলাকায় গড়ে তুলেছেন। এ কারখানার বিরুদ্ধে স্থানীয় গন্যমাণ্য ব্যক্তিগণ প্রতিবাদ করলে কারখানার পক্ষের লোকজন দিয়ে এলাকাবাসীকে ভয় দেখানো হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিসমিল্লাহ কর্পোরেশন লিঃ কারখানা করার পূর্বে আমাদের ঘাটিগড়া মৌজায় নালা জমির দাম ১ শতক প্রতি ২০-২৫ হাজার টাকা ছিল। উক্ত কারখানার মালিক ঘাটিগড়া মৌজায় কিছু জমি ক্রয় করে ব্যাংক লোন পাওয়ার জন্য বাজারদর থেকে ৩০-৪০ গুণ বেশী মূল্যে রেজিষ্ট্রি করে। যার কারণে এ মৌজায় সরকারী রেজিষ্ট্রি মূল্য অনেক বেড়ে যায়। বিগত কয়েক বছর যাবৎ ঘাটিগড়া মৌজায় কোনো নিরীহ মানুষ জমি ক্রয় বিক্রয় করতে পারছে না।
জানা যায়, বিগত ২০১৫ সালে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ সালেহ আহমেদ উক্ত কোম্পানিটি সীলগালা করে দেয়। যার ফলে কারখানাটি বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিলো। এ বিষয়টি এলাকাবাসী, ইউনিয়নের গন্যমাণ্য ব্যক্তি সবাই অবগত আছেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন তদবীর করে আবার অবৈধ কারখানাটি চালু করে।
পরিবেশ দূষণ এর ভয়াবহ বিপর্যয় হতে জনগণের জানমাল, গবাদী পশু, পাখি, কৃষি জমি রক্ষা, গাছপালা ফলমূল এবং কৃষককে ভেজাল কীটনাশকের প্রতারণার হাত হতে বাঁচানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন স্থানীয় এলাকাবাসি।
কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শওকত আরা কলি জানান, খুব সম্ভবত বহু আগে এ কোম্পানি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েছিল। ওই সময় হয়তো আশেপাশের লোকজনের বসবাস কম ছিল। এখন যদি ওই এলাকার মানুষের কোন সমস্যা হয় অর্থাৎ কারখানাটির জন্য পরিবেশ দূষণ হচ্ছে এমন অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।
কারখানার মালিক মুজিবুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও মুঠোফোন সংযোগে তাকে পাওয়া যায়নি।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: