হত্যার দায় এড়াতে নিজেরাই নিজেদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছে, দাবি নিহতের স্বজনদের

প্রকাশিত: ১৫ আগষ্ট ২০২২, ০১:০১ পিএম

প্রতিপক্ষের লোকজন আমার ভাতিজা জুয়েল হত্যার দ্বায় এড়াতে নিজেরা নিজেদের বাড়িঘর ভেঙে এবং মাল জিনিস সরিয়ে নিয়ে আমাদের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছে। আমাদের কোন লোক ভাঙচুর ও লুটপাট করেনি। ভাঙচুর ও লুটপাটের বিষয়ে নিহত জুয়েল ভূইয়ার চাচা জামিরুল ভূইয়ার সাথে কথা হলে তিনি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।

তবে ভুক্তভোগী বেশ কয়েকটি পরিবারের লোকজনদের সাথে কথা হলে তাদের দাবি জুয়েল ভূইয়া নিহতের ঘটনায় তাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে পতিপক্ষের লোকজন। বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটে ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগী তরিকুল ইসলামের স্ত্রী ইয়াসমিন বেগম বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন আমার বাড়ি ব্যাপক ভাঙচুর করেছে আমার ৩টি গরু, মেয়ের বিয়ের জন্য রাখা ১০ ভরি সোনার ঘহনা এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা লুটপাট করে নিয়ে গেছে আমি এর সুষ্টু বিচার চাই।

এর আগে জুয়েল হত্যাকে কেন্দ্র করে নিহতের প্রতিপক্ষের ১০-১২টির মত বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে। বিক্ষুদ্ধ লোকজন প্রতিপক্ষের বেশ কয়েকটি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বলে জানা যায়। এসময় আতিয়ার শিকদার, উজ্জল শেখ, সুজন সেখ, তরিকুলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে টিভি, ফ্রিজ, আলমারি শোকেজসহ বাড়িঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র ভেঙ্গে তছনত করে ফেলা হয়।

নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি (চলতি দ্বায়িত্বে) মাহামুদুর রহমান বিডি২৪লাইভকে বলেন, জুয়েল হত্যার ঘটনায় চাচা মান্নান ভূঁইয়া বাদি হয়ে ঘটনার রাতেই সদর থানায় মামলা করেন, এ মামলার প্রধান আসামি কর্মচন্দ্রপুর গ্রামের ওসমান সিকদারের পূত্র আতিয়ার সিকদারকে ওই সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সে জেল-হাজতে রয়েছে।

এছাড়া ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে চার পুলিশ সদস্য আহত হলে পুলিশকে ফাঁকাগুলি ছুড়তে হয়েছে। এছাড়া পুলিশের কাজে বাধা ও হামলার ঘটনার সাথে জড়িত ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়ছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান থানা পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এদিকে জুয়েল হত্যার বিচার চায় তার স্বজন, প্রতিবেশী ও এলাকার সাধারণ জনগণ। সরজোমিনে ঘুরে নিহতের স্বজন প্রতিবেশী ও ওই এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে কথা হলে কয়েকজন বলেন, জুয়েল ভূইয়া একটা নিরিহ ছেলে তাকে যারা হত্যা করেছে আমরা সুষ্ট তদন্তের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় এবে শান্তির দাবি জানাই এবং যারা এর সাথে জড়িত না তাদের যেনো পুলিশ হয়রানি না করে সে বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য,নড়াইলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলার কর্মচঁন্দ্রপুর গ্রামে প্রতিপক্ষের হাতুড়িপেটার শিকার হয়ে জুয়েল ভূইয়া নামে এক কিশোর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (১৩ আগষ্ট) সন্ধায় মৃত্যু বরণ করে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কর্মচঁন্দ্রপুর গ্রামের আতিয়ার শিকদার পক্ষ ও ইকরাম মোল্য পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধকে কেন্দ্রকরে ইতিপূর্বে একাধিক সংঘাত সংঘর্ষে রক্তপানের ঘটনায় উভয়পক্ষে মামলা মকদ্দমা চলমান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় হামলার শিকার হয় পান্নু ভূইয়ার ছেলে জুয়েল ভূইয়া।

জুয়েল পার্শ্ববর্তী মাদরাসা একটি সবজির আড়তে কাজ করতো। গত মঙ্গলবার (৯ আগষ্ট) সকালে প্রতিদিনের মতো সে সকালে কাজে যাওয়ার সময়, গ্রাম্য বিবাদে নিরিহ কিশোর জুয়েলের কোন প্রকার সম্পৃক্ত না থাকা সত্বেও শুধুমাত্র পতিপক্ষ গ্রুপের হওয়ার অপরাধে আতিয়ার মোল্যা গ্রুপের লোকজন তাকে নির্মমভাবে হাতুড়িপেটা করে ফেলে রেখে যায়।

এ অবস্থায় স্বজন ও আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে, সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে উচ্চতর চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হলে পাঁচদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শনিবার সন্ধার দিকে তার মৃত্য হয়।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: