চিকিৎসার অভাবে কিশোরীকে শিকলবন্দী করে রেখেছে পরিবার

১৫ বছর বয়সী রিতার দুই পা শিকলে বাঁধা। শিকলটির সাথে ঝুলছে ছোট্ট একটি তালা। শিকলবন্দী অবস্থায় দিনের পর দিন রাতের পর রাত কাটছে তাঁর। মেয়টির বয়স বাড়ার সাথেই আচরণ হয়ে উঠছে অস্বাভাবিক। শিকল খুললেই চলে যায় একগ্রাম থেকে আরেক গ্রাম। মানসিক বিপর্যস্ত মেয়েটির কখন কী দূর্ঘটনা ঘটে যায় এমন আতংক ও তাঁর উশৃংখলতায় পরিবারের সবাইকে সব সময় সতর্কতার মধ্যেই থাকতে হয়। এভাবেই দীর্ঘ ৬/৭ বছর ধরে শিকলবন্দি অবস্থায় দিন কাটছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার আছিম পাটুলী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের কুটিরা গ্রামের আঃ কদ্দুছের মেয়ে রিতার জীবন। চিকিৎসাবিহীন শিকলবন্দী রিতার মানবেতর জীবন যাপনে চোখের পানি ফেলছেন তাঁর ছোটবেলার সহপাঠীরা।
পরিবার ও স্থানীয়রা জানায় ৮/১০ জন স্বাভাবিক মেয়ের মতোই রিতার বড় হওয়া। ছোট বেলা থেকেই একটু প্রতিবন্ধীর ভাব তাঁর শরীরে থাকলেও তা সম্পূর্ণ প্রকাশ পায়নি। মাঝে মধ্যেই থাকতেন অসুস্থ৷ আর অসুস্থ শরীর নিয়েই সমবয়সী মেয়েদের সাথে প্রতিনিয়ত স্থানীয় দাখিল মাদরাসায় আসা যাওয়া করতেন। পরে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে উঠার পর তাঁর শারীরিক পরিবর্তন ও মানসিক প্রতিবন্ধী হিসাবে প্রকাশ পেতে থাকে। আর তখনই সবার আদরের মেয়ে এক সময় যেন পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তার পায়ে পরানো হয় লোহার শিকল। মানসিক ভারসাম্য হারানোর পর ৫ বছর ধরেই এমন দুঃসহ মানবেতর জীবন কাটছে মেয়েটির।
সরেজমিনে দেখা যায়, রিতা তাঁর বাড়ির ভিতরে ঘরের বারান্দায় শিকল বন্দি অবস্থায় বসে রয়েছেন। শিকল লাগানো থাকার কারণে অনেক সময় প্রাকৃতির ডাকে সাড়া দিতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে বাথরুম সাড়তে হয়। আবার অনেক সময় বাথরুমে যাওয়ার আগে জামা কাপড়েই প্রসাব পায়খানা করে। নাড়ী ছেঁড়া আদরের মেয়ের এমন কষ্টের বর্ননা দিতে গিয়ে হাউমাউ করে চিৎকার দিয়ে উঠে মেয়েটির মা সাবিনা আক্তার। তিনি বলেন, ইচ্ছা কইরা কি কেউ কারো সন্তানকে শিকল বন্দী করে রাখে? কি করমু গরীব মানুষ মেয়ের কোন চিকিৎসা করাইতে পারি না। শিকল না দিলে মাদরাসায় ছাত্রীদের পড়াশোনায় বেহাত ঘটায়। স্যারেরা মাদরাসায় যেতে বারণ করেছে ও মাদরাসায় গেলে ছাত্র ছাত্রীদের সমস্যা হয়। আর আশপাশের মানুষের তো নালিশের কোন অভাবই নেই। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে মেয়েটিকে তালা লাগিয়ে দিছি।
শিকলবন্দী রিতার বান্ধবী লামিয়া আক্তার বলেন, রিতা খুবই ভালো একটা মেয়ে ছিল। আমার সাথেই মাদরাসায় আসা যাওয়া করতো। ওর মানসিক সমস্যা হওয়ায় আমাদের খুব খারাপ লাগছে। সরকারীভাবে ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে ও সুস্থ হয়ে উঠবে। আমরা সরকারিভাবে ওর চিকিৎসার দাবী জানাচ্ছি।
কুটিরা দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক তাজুল ইসলাম বলেন, মেয়েটি আমাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত আসতো। বর্তমানে মাদরাসায় এসে উশৃংখলতা করায় তাঁকে আসতে বারণ করেছি। মেয়েটির পরিবার ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসা করালে মেয়েটি ভালো হয়ে যেতো।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোজাম্মেল হক মারুফ বলেন, মেয়েটির পরিবার যোগাযোগ করলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ওখানকার সমাজ সেবা অফিসার এর মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে পারবো।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: