মৌলভীবাজারে চা শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে অচল ৯২ চা বাগান

প্রকাশিত: ১৭ আগষ্ট ২০২২, ০৩:৫০ পিএম

মৌলভীবাজার জেলার ৯২ টি চা বাগানে শ্রমিকদের চলমান ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে চা উৎপাদন। গত ১৩ আগস্ট থেকে চলে আসা ধর্মঘট সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আরো তীব্র হওয়ায় এ নিয়ে সংকট বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে আন্দোলনের মুখে বুধবার বিকেলে (১৭ আগস্ট) শ্রম অধিদপ্তরের কার্যালয় (ঢাকায়) চা শ্রমিক ইউনিয়ন, মালিকপক্ষ ও সরকার বৈঠকে বসছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের জুড়ী ভ্যালির সভাপতি কমল চন্দ্র বুনার্জি।

৯২টি চা বাগানে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলমান শ্রমিকদের ধর্মঘট স্থগিত করার লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে শ্রীমঙ্গলে আসেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী। এ সময় তিনি ধর্মঘট স্থগিত করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। কিন্তু চা শ্রমিক ইউনিয়ন তা প্রত্যাখান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। আলোচনা সভায় মহাপরিচালক আরো বলেন, চা শ্রমিকদের ধর্মঘট করায় প্রতিদিন বাগান মালিকদের ৮ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।

এদিকে ধর্মঘটকে পাশ কাটিয়ে জেলার অনেক চা বাগানের মালিকপক্ষের কর্মচারীরা চা বাগান চালু রাখতে চাইলে উত্তেজনা দেখা দেয়‌। চা-শ্রমিকদের চলমান ধর্মঘটের মধ্যে জেলার জুড়ী উপজেলার ধামাই চা-বাগানে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সকালে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কারখানা চালুর চেষ্টা চালান। এ সময় শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে তাঁদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

চা- শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা। মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানসহ দেশের ১৬৭টি চা বাগানের শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করছেন।

চলমান ধর্মঘটে প্রতিদিনই বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা চায়ের পাতা উত্তোলন ও চা ফ্যাক্টরিতে কাজে যোগ না দিয়ে আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ফ্যাক্টরি এলাকায় তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অবস্থান নেন। এসময় তারা সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।

শ্রমিকদের সাথে আলাপ করে আরও জানা গেছে, চা-শ্রমিকদের সংগঠন চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে চা-বাগানের মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা-সংসদের করা চুক্তি অনুযায়ী, চা-শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ হয়। প্রতি দুই বছর পর পর এ চুক্তি সম্পাদনের কথা। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন হয়। ওই চুক্তিতে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আর নতুন করে চুক্তি হয়নি।

সম্প্রতি চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশীয় চা-সংসদ মজুরি ১৪ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। কিন্তু, নেতারা এ প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা নির্ধারণসহ অন্যান্য দাবি-দাওয়া পূরণের বিষয়ে ১ আগস্ট চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশীয় চা-সংসদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। চিঠিতে দাবি মেনে নিতে সাত দিনের সময়সূচী বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানায় সংগঠনের পক্ষ থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কর্মবিরতির বিষয়ে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের জুড়ী ভ্যালি কমিটির সভাপতি কমল চন্দ্র বুনার্জি বলেন, তাঁদের আওতাধীন জুড়ী, বড়লেখা ও কুলাউড়া উপজেলার মোট ৩৬টি বাগানে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চা-শ্রমিকরা দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে অতি কষ্টে দিনযাপন করছেন। প্রতিটি পরিবারে খরচ বেড়েছে। মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে একাধিক সময়ে বাগান মালিকদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে। প্রতি বছর মজুরি বাড়ানোর কথা থাকলেও গত ৩ বছর ধরে নানা টালবাহানা করে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না। দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি করা না হলে চা শ্রমিকরা কাজে ফিরে যাবে না। এ সময় তিনি আরো বলেন, ঢাকায় সরকার ও বাগান মালিক পক্ষের সাথে বৈঠকের জন্য আমরা ঢাকায় যাচ্ছি।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী উপদেষ্টা ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরি বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি বিবেচনা করে ন্যুনতম মানবাধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার দিতে হবে। চা শ্রমিকের হাজিরা ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় উন্নীত করার দাবি অনেক দিনের। তিনি আরোও বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে চা শ্রমিকরা মাত্র ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে কোন মতেই সংসার চালাতে পারছেন না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও আমাদের মজুরি বৃদ্ধি হচ্ছে না। ৩০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধি না হলে কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুশিয়ারি দেন।

এদিকে মঙ্গলবার শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর সাথে চা শ্রমিকদের মিটিং ব্যর্থ হওয়ার সাথে সাথে সাধারণ শ্রমিকরা প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলে বিকেলে সরকারের পক্ষ থেকে শ্রম অধিদপ্তরের কার্যালয়ে (ঢাকায়) বুধবার (১৭ আগস্ট) চা শ্রমিক ইউনিয়ন, মালিকপক্ষ ও সরকার পক্ষের বৈঠক করার ঘোষণা দেওয়া হয়। আলোচনার লক্ষ্যে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: