‘মামলার সাক্ষী শালিক পাখি’
বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে মেজবাউর রহমান সুমনের প্রথম চলচ্চিত্র ‘হাওয়া’। মুক্তির দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও এখনো টিকিট পাওয়া দুষ্কর ঢাকার সিনেমা হলগুলোতে। তবে সাফল্যের পাশাপাশি সিনেমাটি নিয়ে সমালোচনাও কম হচ্ছে না। এরইমধ্যে একাধিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এই সিনেমাকে ঘিরে। সম্প্রতি এই সিনেমায় একটি শালিক পাখিকে আটকে রাখার দৃশ্য নিয়ে পরিবেশবাদীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট সিনেমাটি দেখে জানিয়েছে, এ সিনেমায় বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘন হয়েছে। এবার তাই নির্মাতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে বন বিভাগের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। গত বুধবার (১৭ আগস্ট) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলাটি করা হয়। বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের ওয়াইল্ডলাইফ ইন্সপেক্টর অসীম মল্লিক গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে খুব বেশি একটা কথা না বললেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মামলা হওয়ার পর একটি অস্পস্ট স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনের। এবার তিনি সরাসরি পোস্ট করেছেন এ বিষয়ে। বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) তিনি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সবাই বিষয়টি জানিয়ে দেন। তিনি লেখেন, ‘মামলার সাক্ষী শালিক পাখি’।
‘পাঁচ বছর আগে আমার ব্যান্ড মেঘদলের জন্য নির্মাণ করেছিলাম ‘এসো আমার শহরে’। সেখানে এই নেক্রপলিস সিটিতে কিছু প্রতীকি বন্য প্রাণীকে দেখিয়েছিলাম। ওদের শহরের ভেতর নানা জায়গায় দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এই মৃত নগরে মানুষহীন রাস্তাঘাটে বন্য প্রাণী কেন ঘুরে বেড়াচ্ছে!! তার উদ্দেশ্যই বা কি ? আমি মনে করেছিলাম, এই নগর শুধু মানুষের নয়, অন্য প্রাণীর জন্যও আবাসস্থল হওয়ার কথা ছিল। প্রতিদিন এই শহরে অসংখ্য প্রাণীদের আমরা নিয়ে আসি শুধুমাত্র ভোগের জন্য। হয়তো মানুষের জীবনধারণের জন্য সেটা আমাদের করতেও হয়। কিন্তু মায়া তো নিঃশেষ হওয়ার নয়। এই সর্বপ্রাণের মায়াই ওই মিউজিক ভিডিওতে দেখাতে চেয়েছিলাম। কিছু দিন আগেও ‘কোথায় পালাবে বলো রূপবান’ নামে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির জন্য একটি ছোট ছবি নির্মাণ করি। সেখানে চিড়িয়াখানা থেকে একটি বাঘ পালিয়ে যায়। তাকে কর্তৃপক্ষ খাঁচায় বন্দি করতে চায়। পাশাপাশি এক নারীকেও বন্দি করতে চায় সমাজের কিছু চোখ। সে যাই হোক, আমার পূর্বের এই দুইটি কাজের ভেতর দিয়ে বলতে চেয়েছি, প্রাণ ও প্রকৃতি নিয়ে আমার গল্প বলা নতুন নয়। বরং এই কাজগুলোতে সর্বপ্রাণের দায় সবসময়ই ছিল।
এ ছাড়া তিনি আরও বলেন, নির্মাতা হিসাবে আমি এটুকুই বলতে চাই, হাওয়ার পাখিটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে আর এই নির্মাণের জন্য যে সিনেমাটিক রিয়্যালিটি তৈরি করতে হয়েছে সেটা সত্য নয়। ছবির শুরুতে Disclaimer-এ আমরা সুস্পস্টভাবে উল্লেখ করেছি। পাখিটির দৃশ্য ধারণের পর আমরা তাকে প্রকৃতিতে মুক্ত করে দিয়েছিলাম। আর নৌকায় যে উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখিয়েছি সেটা কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে নির্মান করা। আর চানমাঝি যে তার প্রিয় পাখিটিকে খেয়ে ফেলে সেটা কি শুধু ভোগ!!? নাকি সমাজের ভেতর জমতে থাকা হিংস্রতা? আর আমি শুধু ওই বোধটাকেই ইঙ্গিত করেছি আর সেটা নির্মাণ করেছি সিনেমার ভাষার ভেতর দিয়ে। পৃথিবী সর্বপ্রাণের হোক।
নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে করা মামলায় বাদী হয়েছেন মামলায় বাদী হয়েছেন বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নারগিস সুলতানা। সাক্ষী করা হয়েছে তদন্ত কমিটিতে কাজ করা অপর তিন সদস্য- আব্দুল্লাহ আস সাদিক, অসীম মল্লিক ও রথিন্দ্র কুমার বিশ্বাসকে। এর আগে ‘হাওয়া’ সিনেমায় শালিককে আটকে রাখার দৃশ্য নিয়ে ৩৩টি পরিবেশবাদী সংগঠন বিবৃতি দিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন। তারা সিনেমা থেকে দৃশ্যটি বাদ দেওয়ার দাবিও তোলেন।
উল্লেখ্য, হাওয়া’ সিনেমাটি মুক্তির আগে থেকেই আলোচনায় আসে। মুক্তির পর সিনেমাটি নিয়ে আরও বেশি আলোচনা শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতায় দর্শক দারুণভাবে গ্রহণ করে সিনেমাটি। মুক্তির এতোদিন পরেও হাওয়া নিয়ে দর্শকদের মাঝে উন্মাদনা রয়েছে প্রবল। এতে অভিনয় করেছেন, চঞ্চল চৌধুরী, শরিফুল রাজ, নাজিফা তুষি প্রমুখ।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: