রাবি শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের নির্যাতন, মুখ খুললে শিবির বলে চালিয়ে দেওয়ার হুমকি

প্রকাশিত: ২০ আগষ্ট ২০২২, ০৯:২২ এএম

চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় হলে মোবাইল সার্ভিসিং করে পড়াশোনা চালানো চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে গলায় ছুরি ধরে তিন ঘন্টা ধরে শারীরিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) মতিহার হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে। এসময় বুয়েটের আবরাকে যেভাবে মেরে ফেলা হয়েছে ঠিক সেভাবে তাকেও মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেন এই ছাত্রলীগ নেতা। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বেলা ৩ টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ওই হলের ২০২ নং রুমে ডেকে নিয়ে তাকে বিভিন্ন নির্যাত করে।

ভুক্তিভোগী সামসুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ শিক্ষার্থী। তার বাসা নারায়ণগঞ্জ জেলায়। এদিকে অভিযুক্ত ভাস্কর সাহা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইন্সটিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মতিহার হলের তৃতীয় ব্লকের ১৫৯ নং রুমে থাকেন। হলের কক্ষে পড়াশোনার পাশাপাশি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করেন সে। গত ১৫ আগস্ট ভুক্তভোগীকে ফোন দিয়ে ১২ হাজার টাকার চাঁদা দাবি করেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা। ভুক্তভোগী ৫ হাজার টাকা দিতে চাইলে তাকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার ২৫৯ নং রুমে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় ৫ হাজার টাকা ছাড়া অতিরিক্ত টাকা দিতে পারবেনা বলায় ভুক্তভোগীকে গলায় ছুরি ধরে রড ও স্ট্যাম্প দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বেধড়ক পেটানো হয়। বিকাল ৩ থেকে সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত তাকে বিভিন্নভাবে তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়।

সাংবাদিক ও পুলিশকে এসব কথা জানালে তাকে বুয়েটের আবরা ফাহাদের মতো তাকেও মেরে ফেলা হবে এবং শিবির বলে তোকে চালিয়ে দিবো বলে হুমকি দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সামসুল ইসলাম বলেন, আমার পরিবার খুব অসহায় তাই আমি হলের শিক্ষার্থীদের মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করে পরিবারের দেখাশোনা করি। হলে সার্ভিসিং কাজ করার জন্য ছাত্রলীগ নেতা চাঁদা দাবি করলে আমি ৫ হাজার টাকা দিতে চাই। ৫ হাজার টাকা হবে না বলে আমাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। আমি একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছি। প্রশাসনের কাছে আমার বিচার চাই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

বিষয়টিকে অস্বীকার করে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা বলেন, আমাকে ফাঁসানোর জন্য এমনটা করা হচ্ছে। কারো ইন্ধনে এমনটা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, কিছুক্ষণ আগে প্রক্টর অফিস থেকে আমাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। খবরটি শুনেই আমি হলে উদ্দেশ্যে রওনা করেছি। এ অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয় তাহলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমি এ বিষয়ে মাত্র অবগত হলাম। আমি খোঁজ নিচ্ছি সত্যতা প্রমাণিত হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর বলেন, আমি ইতোমধ্যে অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দেওয়া এক ধরনের অপরাধ। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তাকে আপাতত মেডিকেলে পাঠিয়েছি। আমরা তদন্ত করে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. আরিফুর রহমান বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী অনেক কিছু ভয়ে বলছে না। আমরা সব তথ্য নিয়ে প্রক্টরিয়াল বডি তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতার বিরুদ্ধে সত্যতা প্রমাণিত হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: