বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুস সালাম তালুকদারের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ২০ আগষ্ট ২০২২, ১০:৪৫ এএম

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সাবেক মহাসচিব এবং সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মরহুম ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের ২৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (২০ আগষ্ট)। এ উপলক্ষ্যে জামালপুর জেলা ও সরিষাবাড়ী উপজেলা বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দিনব্যাপী কর্মসূচী গ্রহন করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে কালো ব্যাজ ধারন, দলীয় কার্যালয়ে জাতীয়পতাকা উত্তোলন, শোক র‌্যালী, মরহুমের কবর জিয়ারত ও ফাতেহা পাঠ, স্মরণ সভা, কাঙ্গালী ভোজ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল।

জামালপুর জেলার কৃতি সন্তান ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তিতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি‘র মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি সরকারের এলজিআরডি মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে অন্যতম।

১৯৩৬ ইং সালের ৪ নভেম্বর জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের মুলবাড়ী গ্রামের সম্ভ্রান্ত তালুকদার পরিবারে তিনি জন্মগ্রহন করেন। মরহুম ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের পিতা মরহুম রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার ছিলেন দানশীল ও ধার্মিক ব্যাক্তি। ১৯৪২ ইং সালে সরিষাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে সালাম তালুকদারের শিক্ষা জীবন শুরু হয়। এইচএসসি পাশ করেন ঢাকা কলেজ থেকে। ছাত্র জীবনে তিনি ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। মহান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন এবং পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় ৯২ (ক) ধারায় কারাবরণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ ইং সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স এবং ১৯৫৯ ইং সালে এম.এ পাস করেন। ফজলুল হক হলে থাকতেন এবং হলের এথলেটিক সেক্রেটারী নির্বাচিত হন।

১৯৬৮ ইং সালে লন্ডনের লিংকন্স ইন থেকে ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল ডিগ্রি লাভ করে ১৯৭০ ইং সালে তিনি আইন পেশায় নিয়োজিত হন। ১৯৭৬ ইং সালে ডেমোক্রেটিক লীগে যোগদানের মাধ্যমে সালাম তালুকদারের রাজনৈতিক জীবনের শুরু করেন। ১৯৭৮ সালের আগস্ট মাসে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সান্নিধ্যে আসেন। একই বছর ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সরিষাবাড়ি থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। ১৯৭৯ইং সালে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৩৪ তম অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৮১ সালে শহীদ জিয়া তাকে আইন ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে নিযুক্ত করেন।

সালাম তালুকদার হৃদরোগে ভুগছিলেন। ১৯৮৫ সালে আমেরিকায় তার ওপেন হার্ট সার্জারী হয়। বিএনপির’র চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৩ জুলাই ১৯৮৮ ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারকে বিএনপি মহাসচিব করে জাতীয় স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটি গঠন করেন।

১৯৮৬ সালের ৩ মে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় পুনরায় কারাবরণ করেন। ১৯৯০ ইং সালের স্বৈরাচার এরশাদ সরকার পতনের গণআন্দোলনে রাজপথে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের পাশাপাশি চারদলীয় ঐক্যজোটের রুপকার ছিলেন। স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার সরিষাবাড়ী আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১-১৯৯৬ ইং সালে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, কার্যপ্রণালী বিধি ও কার্য উপদেষ্টা সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ ১৯৭৫ বাতিলকরণ সম্পর্কিত বিশেষ কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯৬ইং সাল থেকে তিনি ৪ দলীয় লিঁয়াজো কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করেন।

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৯ জুন ১৯৯৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম অভিমূখে লংমার্চে তিনি ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখেন। নির্বাচনী ট্রাইবুনালে মামলার চুড়ান্ত রায় প্রকাশের পূর্বেই ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন ও আমেরিকায় চিকিৎসা শেষে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং পবিত্র হজ্জ্বব্রত পালন করেন। হজ্জ্ব পালন শেষে পুনরায় তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে ১৯৯৯ সালের ১৫ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসক তাকে 'ক্লিনিক্যালী ডেড' ঘোষণা করেন ও কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসের দ্বারা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া সচল করার চেষ্টা করেন। ১৯৯৯ সালের ২০ আগস্ট সন্ধ্যায় এয়ার এম্বুলেন্সে যোগে সিঙ্গাপুর নেয়ার পথে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে দেশের মাটিতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: