৪০ মিনিট কান ধরে দাঁড় করানো হলো ৩০ শিশুকে

প্রকাশিত: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:৩৬ পিএম

পড়া দিতে না পারায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ৩০ শিক্ষার্থীকে রোদে ৪০ মিনিট শারীরিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জান্নাতুন নাহারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে ওই শিক্ষার্থীদের বাবা-মা ও অভিভাবকেরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। জেলার পাটগ্রাম পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের সোহাগপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জান্নাতুন নাহার ৩০ আগস্ট ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে বিজ্ঞান বইয়ের দুই পৃষ্ঠা পড়া মুখস্ত করে পরদিন বিদ্যালয়ে আসতে বলেন। ৩১ আগস্ট শির্ক্ষাথীরা মুখস্ত পড়া দিতে না পারলে উপস্থিত ৩৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে মারপিট করেন ও বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষের বাইরে প্রায় ৪০ মিনিট কান ধরে দাঁড় করে রাখেন।

বিদ্যালয় ছুটির পর শিক্ষার্থীরা বাড়িতে গিয়ে এ ঘটনা বাবা-মা ও অভিভাবকদের জানিয়ে বিদ্যালয়ের আর পড়তে যাবে না বলে জানায়। এ ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের তৈরি হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার (০১ সেপ্টেম্বর) সকালে অভিভাবকদের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়। অভিযোগের অনুলিপি রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা উপপরিচালক, জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরেও প্রদান করে অভিভাবকেরা।

ওই বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী লাবণ্য আক্তার বলেন, ‘ক্লাসে আপা এসে পড়া চায়। এতগুলো পড়া মুখস্ত দিতে পাইনি। এজন্য কান ধরে দাঁড় করে রাখে। স্কেল দিয়ে আমাকে ও বৈশাখী, সুমাইয়া, হাবিবা, মাইশা, হুসনুত, সাইয়্যেদাকে মারপিট করেছে। এ রকম করায় আজ (বৃহস্পতিবার) কেউ বিদ্যালয়ে যায়নি। দুইজন গেছে, তারাও ছুটি নিয়ে চলে আসে।’ একই বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইশা আক্তারের মা মুন্নি আক্তার বলেন, ‘মেয়েটাকে (মাইশা) মারপিট করে, কান ধরে রাখার কারণে মেয়েটি রাতে ভাত খায়নি। পরদিন (বৃহস্পতিবার)
স্কুলও যায়নি।

অভিযোগে স্বাক্ষরকারী অভিভাবক ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুহ্ ইসলামের বাবা রুহুল আমিন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন শিশুদেরকে সোহাগ দিয়ে পড়াতে কিন্তু এটা না করে বাচ্চাদেরকে তাঁরা শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করেন, খুব নাকি মারেন। এজন্য লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছি। তাছাড়া বিদ্যালয়ে কোনো বিষয়ে গেলে অভিভাবকদেরকে সাথেও দূর্ব্যবহার করেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম ও সহকারি শিক্ষিকা প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী জান্নাতুন নাহার। বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখি ৫ম শ্রেণির কোনো ছাত্র-ছাত্রী নাই।’

সহকারি শিক্ষিকা জান্নাতুন নাহার বলেন, ‘একটা পড়া ৫ দিন থেকে বাচ্চাদেরকে পড়াচ্ছি। প্রশ্ন দিয়েছি, পর পর পড়াচ্ছি কোনো ডেভলপ হচ্ছে না। তখন বাচ্চাদেরকে প্রশ্ন করি কেনো পড়া হচ্ছে না- তখন সবাই একসাথে বললো মার দিতে। আমি বলছি মারা যাবে না। তারাই বললো কান ধরি। আমি কান ধরায়ে বারান্দায় ১০ মিনিট রেখেছি।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল কবির বলেন, ‘বুধবার তো বেশি রোদ ছিলনা। বারান্দায় কিছু সময় শিক্ষার্থীদেরকে দাঁড় করে রেখেছিল। উনি (সহকারি শিক্ষিকা জান্নাতুন নাহার) ভুল স্বীকার করেছে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) আবুল হোসেন লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: