নড়াইলে বাউল ফকিরকে মারধোর, ৪০ বছরের আস্তানা ভাংচুর
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়ার বাউল হারেজ ফকিরের ৪০ বছরের পুরোনো আস্তানায় হামলা করে কয়েক প্রকার বাদ্যযন্ত্র ও মোমের মমি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার (২৭ আগষ্ট) রাত ১১টার দিকে আস্তানা ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে পুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম মণি’র লোকেরা বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তোভোগীরা। কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের বাজে-বাবরা গ্রামে “শরিফা বাউল আশ্রম” ওই ভাংচুর ও মারধোরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় হারেজ ফকির (৭০) বুধবার (৩১ আগষ্ট) রাতে কালিয়া থানায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে অভিযোগ করার পর থেকে ইউপি চেয়ারম্যান এর চাচাতো ভাই মিন্টু শেখ হুমকি দেন।
গত বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) বাউলের সাথে কথা বলতে গেলে হামলাকারী মিন্টু শেখ সেখানে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকের সামনেই শাষিয়ে যান। সাংবাদিকের সাথে কথা বলার অপরাধে দুপুরে ঐ বাউলের কয়েকজন ভক্তের উপর হামলা করে মিন্টু শেখের লোকেরা বলে জানা গেছে। দেশ স্বাধীনের পর ঘরবাড়ি সব নদীতে ভেঙ্গে যাওয়ায় দেশান্তরী হন কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার চীলমারির চরের হারেজ মিয়া। এক সাধু বাবার সাথে ভারতে আজমীর শরিফে চলে যায়। চার বছর সেখানে থাকার পর বাংলাদেশে ফিরে এসে বাউল সাধকদের সাথে বিভিন্ন দরবারে ঘুরে বেড়ায়। প্রায় ৪০ বছর আগে কালিয়া উপজেলার বাজে-বাবরা গ্রামের বাউল মোকছেদ ফকির তাকে নিজ বাড়িতে আশ্রায় দেয় এবং মেয়ে শরিফা বেগমের সাথে বিয়ে দেন। সেই থেকে হারেজ ফকির এখানে “শরিফা বাউল আশ্রম” নামে একটি আস্তানা খুলে বাউল গানের সাধনা করে আসছেন। এলাকায় তার বেশ কিছু ভক্তবৃন্ধ রয়েছে। তারা প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে এবাড়িতে এসে গানবাজনা করেন। এছাড়া প্রতিবছর ২৬ অগ্রাহায়ণ এখানে বাৎসরিক ওরস অনুষ্ঠিত হয়।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (২৭ আগষ্ট) সকাল ১১টার দিকে পুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম মণি’র স্বজন ও সমর্থকরা গাঁজা সেবন ও বিক্রির অভিযোগে এনে হারেজ ফকিরকে বারইপাড়া বাসষ্ট্যান্ডে মারপিট ও গালি-গালাজ করে। এঘটনায় হারেজ ফকির চেয়ারম্যানের কাছে বিচার দিলে সন্ধ্যার পর চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত অফিসে শালিস বসে। শালিস শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর রাত ১১টার দিকে চেয়ারম্যানের বড়ভাই হাজ্বী মো. আলী মিয়া শেখের হুকুমে চাচাতো ভাই মিন্টু শেখের নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি দল হারেজ ফকিরের আস্তানায় হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এসময় ১টি হারমনিয়াম, ২টি একতারা, ২টি চাকি, ১টি পেনজুড়, ২টি খোল, ১টি নাল, ডুগি-তবলা-ঢোল সহ মোমের মমি ভাংচুর করে।
বৃদ্ধ বাউল হারেজ ফকির কাদতে কাদতে বলেন, আমি ৪০ বছর ধরে এখানে সাধনা করি। কারো সাথেও নাই পাছেও নাই। আমার কিছু ভক্তবৃদ্ধ আছে। তারা প্রতি বৃহস্পতিবার আমার এখানে গান বাজনা করতে আসে। এ অপরাধে আমাকে মারধর করে। এর আগে আরো ৪ বার আমার যন্ত্রপাতি ভেঙ্গেছে চেয়ারম্যানের লোকেরা। আমি কোন বিচার পাইনি। বর্তমানে আমি ও আমার ভক্তরা নিরাপত্তহীনতায় ভুগছি। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় অভিযোগ করেছি। তবে মিন্টু শেখ ভাংচুরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা কোন কিছুই ভাংচুর করিনি। হারেজ ফকির এখানে গাঁজার ব্যবসা করে।
এ কারনে চেয়ারম্যান আর হাজি আলী মিয়া তার এসব অনৈতিক কাজ করতে নিষেধ করেছেন। হারেজ ফকিরের স্ত্রী শরিফা বেগম বলেন, আমার স্বামী এখানে ফকির সাধনা নিয়ে থাকে। তার ভক্তবৃন্ধরা আসে, গান বাজনা করে। তাদের সহযোগীতায় আমাদের সংসার চলে। এই গানবাজনা করার কারনে সেদিন রাতে হামলা করে বাদ্যযন্ত্র ভাংচুর করেছে।
প্রতিবেশি নাজমুল শেখ, ময়না বেগম, ভক্ত ইপিয়ার শেখ, জারি সম্রাট রওশন আলীর ভক্তকণ্যা বেগমসহ অনেকই জানালেন, হারেজ ফকির এখানে দীর্ঘদিন ধরে গান-বাজনা ও ফকিরি সাধনা করেন। আর সে কারনেই চেয়ারম্যানের লোকের এটা সহ্য করতে না পেরে নিরীহ ওই সাধকের আস্তানায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে।
পুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম মণি’র সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মারপিটের ঘটনা আমি বসে মিটিয়ে দিয়েছিলাম। ভাংচুরের কোন ঘটনাই আমি জানি না।
এ বিষয়ে কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাসমিম আলম ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: