খাদ্য ও ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে ফেনীর খামারিরা দিশেহারা

প্রকাশিত: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৪২ পিএম

কামরুল হাসান নিরব, ফেনী থেকে: সারা দেশের খামারগুলোতে বর্তমানে ব্যবসায়ীদের খুবই করুন পরিস্থিতি সময় অতিবাহিত হচ্ছে। এরই বিকল্প নয় ফেনী জেলা। ফেনীর বিভিন্ন অঞ্চলের যু্বকরা একসময় খামারে মুরগি পালন করে বেকারত্বের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো। কিন্তু বর্তমানে খামারের বিভিন্ন পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধির ফলে ধীরে ধীরে গুটিয়ে যাচ্ছে জনপ্রিয় খামার ব্যবসা।

গত বছরের করোনার ক্ষতি সামাল দিতে না পেরে অনেকেই ঋণ নিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে আরো লোকসানে পড়েছেন। অনেকেই খামার বন্ধ করে দিয়ে তাদের পেশা বদলে ফেলেছেন। বেকার একজন যুবক উদ্যোক্তা হয়ে যখন খামারের মুরগি পালন করতো তখন তার পরিবারে এবং অর্থনৈতিকভাবে এর একটি দারুন প্রভাব পড়তো। কিন্তু বর্তমান অধিকাংশ খামার ব্যবসায়ীরা ব্যবসা গুটিয়ে প্রবাসের দিকে ছুটছেন।

জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানায়, ফেনী জেলায় ২ লক্ষ ৩৪০ জন খামারী রয়েছে। এসব খামারে ব্রয়লার মুরগীর সংখ্যা ১৪লাখ ৭৮হাজার দেড়শটি, লেয়ার মুরগী ১৬লাখ ১৮ হাজারটি ১২০টি, সোনালী ১ লক্ষ ৫ হাজার ৭শত ৪০টি, দেশী ১৭লাখ ৯৬ হাজার ৭০০ টি, হাঁস ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬শত টি। ফেনী জেলার খামারীসহ কবুতর ৮০হাজার ৫ শত ২০টি, কোয়েল ২০হাজার ২শত টি পাখি খামারে লালিত হচ্ছেন।

এদিকে সারাদেশে খামারি পর্যায় গড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা কেজি দরে। অথচ এক কেজি ওজনের একটি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকা। খামারি পর্যায়ে মুরগির দাম কম হলেও ভোক্তা পর্যায়ে ১৬০-১৭০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগি। এছাড়াও কেজিতে ২০-৪০ টাকা দাম বেড়ে সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৯০ টাকা, যা আগে ছিল ২৪০-২৫০ টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে প্রত্যক্ষ করা যায়, দুই থেকে তিন বছর আগে যে সকল বেকার যুবক বা ব্যবসায়ীরা খামারে সফলতা লাভ করেছেন তার এখন চোখে ধোঁয়াশা দেখছেন। অনেকেই আবার পাঁচ বা ছয় হাজার সেটের মুরগির খামারকে ছোট করে দুই তিন হাজার সেটে পরিণত করেছেন। অনেকে আবার এই পেশা ছেড়ে দিয়ে প্রবাস গমনে ছুটছেন।

ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের খামার ব্যবসায়ী করিম ও মামুন যৌথভাবে দাবি করেন, '২০২১-২২ সালে প্রতিটি বস্তায় মুরগির খাদ্যের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি হয়েছে। আগে যে বস্তা আমরা ক্রয় করতাম ১৬৫০ টাকা দিয়ে এখন তার কিনতে হচ্ছে ৩২৫০ টাকা দিয়ে এবং এক্ষেত্রে যদি নগদে না হয় তবে ৩৩০০ টাকা করে দিতে হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সিন্ডিকেট তো রয়েছেই। খাদ্যের দাম উঠা নামের ক্ষেত্রে এই সিন্ডিকেট গুলো শক্ত ভূমিকা রাখে।

সোনাগাজী উপজেলা নবাবপুরের জাফর উদ্দিন নামে একজন খামার ব্যবসায়ী দাবি করেন কিছুদিন পূর্বে ডিমের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মানুষ ব্যাপক সমালোচনা করেন। কিন্তু প্রতিটি ওষুধ এবং খাদ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিন গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যে ওষুধ আমরা ক্রয় করতাম ১৫০০ টাকা দিয়ে এখন তা কয় কত হচ্ছে ৩৫০০ থেকে ৪ হাজার। এরপরেও আমরা খামারিরা ব্যবসায়ীদের কাছে মুরগি কেজি ধরে বিক্রি করছি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। যেখানে আমাদের প্রত্যেক মুরগিতে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত হচ্ছে। এছাড়াও বর্তমান ডিমের যে দাম বাজারজাত চলচে, তা চলতে থাকলে অচিরেই খামার ব্যবসা বানিজ্যিক ভাবে ধংব্বস হবে।

জেলা পানি সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার আনিসুর রহমান জানান, ওষুধ এবং খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন ফেনী জেলার খামারীরা। ওষুধ এবং খাদ্যদ্রব্যের দাম অতি শীঘ্র সহনীয় অবস্থায় না নিয়ে আসলে এটা আমাদের বাণিজ্যিকভাবে খামার ব্যবসায়ীদের জন্য একটি দুর্বিষহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। খাদ্যদ্রব্যের দাম কেন বৃদ্ধি বা ওষুধের দাম ছড়া কেন? এই প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন' বর্তমান বাজারে সবকিছুর দাম বৃদ্ধির কারণে হয়তো এই ওষুধ এবং খাদ্যের দাম বৃদ্ধি করে ফেলেছেন ব্যবসায়ীরা।'

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: