সেই বৃদ্ধার ঘরে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে হাজির জেলা প্রশাসক

প্রকাশিত: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৩০ পিএম

আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে: ফেলে যাওয়া বৃদ্ধা মাকে খাদ্যসামগ্রী ও নগদ অর্থ নিয়ে দেখতে গেলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন। এসময় তিনি বৃদ্ধার শারিরীক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন ও তার চিকিৎসা প্রদানসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বালিগ্রাম মহল্লায় বৃদ্ধাকে দেখতে গিয়ে ফেলে যাওয়া ছেলের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান একেএম গালিভ খাঁন।

বউয়ের সাথে বনিবনা না হওয়ায় মাকে রাস্তার পাশের একটি পরিত্যক্ত জায়গায় ফেলে যায় বৃদ্ধা মর্জিনা বেগমকে। শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার বালিগ্রামের একটি গলির পাশে অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে ফেলে যায় ছেলে মনিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী। পরে স্থানীয়দের দেয়া খবরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন, জেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আব্দুল হাকিম।

বৃদ্ধার বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের চৈতন্যপুর-নাককাটিতলা গ্রামে। তিনি মৃত সইবুর রহমানের মেয়ে মর্জিনা বেগম (৮২)। মর্জিনা বেগম তিন মেয়ে ও দুই ছেলের জননী। জেলা প্রশাসক সেই বৃদ্ধাকে দেখতে গিয়ে বিভিন্ন ফলমূল, চাল, পোশাক ও ওষুধসহ নগদ অর্থ প্রদান করেছেন।

জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন জানান, দেশে একজন মানুষও অসহায়, ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না, এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি। কোন মানুষের অসহায়ত্ব মানবতার মা শেখ হাসিনা সহ্য করেন না। যেই ছেলেরা এই কাজটি করেছে, তিনি একটি গর্হিত অপরাধ করেছেন। পিতা-মাতা হলো ভালোবাসার জায়গা, মায়ের প্রতি দায়িত্বহীনতা করা উচিত হয়নি।

জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের আরও বলেন, বৃদ্ধা মহিলার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ চিকিৎসার সকল দায়িত্ব নিয়েছে জেলা প্রশাসন। আমরা তার পাশে রয়েছি। পাশাপাশি যেই ব্যক্তি কাজটি করেছেন, তাকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। কারন এতে সমাজে শিক্ষা হবে যাতে কেউ বাবা-মাকে নিগৃহ বা অবহেলা না করে।

এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, বৃদ্ধা মহিলা ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। তাই তিনি তার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন কি না, তা আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না। তবে ছেলে যেহেতু আইন ভঙ্গ করেছেন, তাই তিনি অব্যশই আইনের আওতায় আসবেন। পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩ এর লঙ্ঘন হয়েছে এখানে। যেহেতু সেই বৃদ্ধা তার মেয়ের কাছেই নিরাপদ। তাই সেই দিক বিবেচনায় মেয়ের পরিবারকেও সহায়তা প্রদান করা হবে।

মর্জিনা বেগমের মেয়ে নাসিমা বেগম জানান, মাকে আমার ভাই ও তার স্ত্রী আমার বাড়ির পেছনে একটি পরিত্যক্ত জায়গায় ফেলে চলে যায়। পরে স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকলীগ নেতা আব্দুল হাকিম মাকে উদ্বার করে আমার বাড়িতে নিয়ে আসে। আমার বাড়িতেও থাকার জায়গা না থাকায় পাশের বাড়ির একটি কক্ষে মাকে রেখেছি। জেলা প্রশাসক মহোদয় নিজে এসে খাবার ও নগদ অর্থ দিয়ে গেছেন। এছাড়াও মায়ের সকল চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। এখন কিছুটা হলেও মাকে নিয়ে স্বস্তি পেয়েছি।

তিনি আরও জানান, মায়ের মোট ৫ কাঠা জমি ছিল। এক কাঠা বিক্রি করে এক বোনের বিয়ে দিয়েছিল। পরে দুই ভাই মিলে দুই কাঠা করে জমি বিক্রি করে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমি ও আমার সেই বোন মাকে নিজেদের বাড়িতে দেখাশোনা করি। কিন্তু গত দুই মাস থেকে মাকে ছেলের বাড়িতে পাঠায়। ভাইয়ের বউ মাকে মেনে নিতে পারেনি। তাই ভাই ও ভাবী মাকে এভাবে ফেলে গেছে। আরেক বোন নিজেও অসুস্থ ও তার মেয়ের বাড়িতে থাকে। তাই সেখানেও তাকে রাখা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়েই পাশের বাড়ির একটি কক্ষে রেখেছি।

বৃদ্ধা নারীকে উদ্ধারকারী নূরনবী ইসলাম বলেন, শুক্রবার সকালে স্থানীয় কয়েকজন ছেলে মিলে আমরা ওই বৃদ্ধাকে পড়ে থাকতে দেখি। খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারি পাশের বাড়ির নাসিমা বেগমের মা তিনি। জানা যায়, তারা ছেলে ও ছেলের বউ ফেলে চলে যায়। পরে কৃষকলীগ নেতা আব্দুল হাকিমের সহযোগিতায় স্থানীয় আমরা যারা ছিলাম, তাকে তার মেয়ের বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর পাশের বাড়িতে রাখা হয়েছে।

জেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আব্দুল হাকিম জানান, সকালে স্থানীয় কয়েকজন যুবক আমার কাছে এক বৃদ্ধা পড়ে থাকার কথা জানান। পরে তাদেরকে নিয়ে গিয়ে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে একই এলাকার তার এক মেয়ের বাড়িতে রেখে আসি। পরে জেলা প্রশাসক মহোদয় বাড়িতে এসে ১২ হাজার টাকা নগদ অর্থ প্রদান করেছেন এবং যাবতীয় খাবার সামগ্রী দিয়ে গেছেন। তাদের পরিবারের একজনকে আমি নিজেই একটি চাকুরি নিয়ে দিব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।

এসময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফফাত জাহান, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাইমা হক, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও জেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হাকিমসহ স্থানীয় বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: