পুলিশ পরিচয়ে দুই পর্যটককে অপহরণ, ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:২৬ পিএম

কক্সবাজারে ইয়াবা কারবারে জড়িতদের সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা বলে পুলিশ পরিচয়ে দুই পর্যটককে অপহরণ করে একটি চক্র। এরপর এক পর্যটকের স্ত্রী ৯৯৯ এ ফোন করে বিষয়টি ট্যুরিস্ট পুলিশকে জানালে তারা অভিযান চালিয়ে দুই পর্যটক এবং তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলও উদ্ধার করে। রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার শহরের বাসটার্মিনাল এবং ঈদগাঁও এলাকা থেকে দুই পর্যটককে অপহরণ করে চক্রটি।

জানা যায়, অপহরণের সাড়ে ৮ ঘণ্টা অপহৃত এক পর্যটেকর স্ত্রী ৯৯৯ এ ফোন করে ট্যুরিস্ট পুলিশকে বিষয়টি জানান। এরপর ট্যুরিস্ট পুলিশ অভিযানে নেমে ওই দিন দিবাগত রাত ২টার সময় পৌরসভার কলাতলী সড়কের হোটেল-মোটেল জোনের সীপার্ল ওয়ান নামের একটি হোটেলের ৫-সি নম্বর ক্ক্ষ থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে। একই সময়ে নাম ঠিকানা না লিখে অপহরণকারীদের কক্ষ ভাড়া দেওয়ায় ওই হোটেলের দুই কর্মচারী রুবেল (৩১) ও সালাউদ্দিনকে (৩৫) আটক করা হয়েছে।

এছাড়া সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত পৌনে ১টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে দুই পর্যটকের মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়। ট্যুরিস্ট পুলিশ জানায়, রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে দুই পর্যটক দুটি মোটরসাইকেল যোগে কক্সবাজার ঘুরতে আসে। সকাল সাড়ে ৮ টায় তারা কলাতলীর আলফা ওয়েব গেস্ট হাউজে উঠে। পরে তাদের একজন সেই হোটেলের ৬ষ্ঠ তলায় স্পা সেন্টারে যায় এবং প্রায় ২ ঘণ্টা স্পা করেন। সে সময় স্পা কর্মীরা কথায় কথায় তার আয়সহ বিভিন্ন তথ্যাদি সংগ্রহ করে। ওইদিন বিকাল ৪টায় তারা চট্টগ্রাম ফিরে যাচ্ছিলেন।

কিন্তু শহরের বাস টার্মিনাল পৌঁছানোর আগেই ২ মোটরসাইকেলে ৪জন অপহরণকারী পুলিশ পরিচয়ে এক পর্যটককে অপহরণ করে। আর ২ জন অপহরণকারী আরেকটি মোটরসাইকেল নিয়ে অপর পর্যটককে বিকাল সাড়ে ৫ টায় ঈদগাঁও বাজার থেকে অপহরণ করে। পরে তাদেরকে শহরের কলাতলী রোড়ের লং বীচ হোটেলের বিপরীত পাশের গলির ভেতরের সী পার্ল ওয়ান নামের একটি ফ্ল্যাটের ৫-সি নম্বর রুমে নিয়ে মারধর করে মুক্তিপণ দাবী করে।

এ বিষয়ে পর্যটক নুরুল নুরুল আইয়ূব বলেন, অপহরণকারীরা নিজেদের পুলিশ বলে পরিচয় দেয়। আমার সাথে ইয়াবা কারবারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে দাবি করে তারা আমাকে থানায় আনবে জানিয়ে হোটেল সীপার্লে নিয়ে বন্দী করে। পরে দেখি সেখানে আমার বন্ধুকে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হোটেল সীপার্লে আমাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন করে মুক্তিপণ দাবী করে। তাদের অত্যাচার সইতে না পেরে আমার স্ত্রী নাসরিন সুলতানাকে ফোন করে টাকা দিতে বলি।

এ বিষয়ে নাসরিন সুলতানা বলেন, আমি অপহরণকারীদের কথামতো ৪টি বিকাশ নম্বরে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা দিয়েছে। একইসাথে অপহরণের বিষয়টি ৯৯৯ এ ফোন করে অবহিত করি। তখন ৯৯৯ থেকে ট্যুরিস্ট পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়। পরে ট্যুরিস্ট পুলিশ আমার স্বামী ও তার বন্ধুকে উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজামান বলেন, ৯৯৯ ফোন পেয়ে মুঠোফোন ট্রেকিং করে অপহৃতদের অবস্থান নিশ্চিত হই। এরপর সীপার্ল ওয়ান থেকে পর্যটকদের উদ্ধার করে এবং সেই ফ্ল্যাট পরিচালনার সাথে জড়িত থাকা দুইজনকে আটক করি। একই দিন রাত সাড়ে ৮ টায় কলাতলী ওয়ার্ল্ড বে হোটেলের পার্কিং থেকে একটি মোটরসাইকেল এবং ৬ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ১ টায় ওয়ার্ল্ড বীচ রিসোর্টের সামনে থেকে আরেকটি মোটরসাইকেল পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করি।

সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজামান বলেন, শহরের বাসটার্মিনাল থেকে যাকে পুলিশ পরিচয় অপহরণ করা হয়েছে তাকে মাদক কারবারী অ্যাখা দিয়ে এবং অন্যজনকে বন্ধু সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে জানিয়ে অপহরণ করে চক্রটি।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি স্পা সেন্টারের থেকে পর্যটকের সকল তথ্য অপহরণকারী চক্রের হাতে যায়। এরপর চক্রটি তাদেরকে অপহরণ করে হোটেল সীপার্ল ওয়ানে নিয়ে আসে। চক্রের সদস্যদের সহযোগিতায় রেজিস্ট্রার খাতায় নাম ঠিকানা না লিখে ওই দুই পর্যটককে কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করে।

এএসপি মিজান বলেন, ঘটনার মূলহোতাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এই ঘটনায় ৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটক নুরুল আইয়ূব বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় অপহরণ আইনে একটি এজাহার দায়ের করেছেন।

কক্সবাজার সদর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গিয়াস বলেন, এজাহার পেয়েছি। মামলা নথিভুক্ত হওয়ার কার্যক্রম চলেছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: