সোনারগাঁয়ে সংখ্যালঘু চার পরিবারের বাঁচার আকুতি, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:০৬ পিএম

মাজহারুল ইসলাম, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে: নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁ উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের কোবাগা এলাকায় চারটি সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যদের ভিটেমাটি ছাড়া করার জন্য হুমকি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে একটি শিল্প কারখানার মালিক। এ বিষয়ে ওই পরিবারের সদস্যরা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না প্রশাসন। এতে ওই পরিবারগুলো সন্ত্রাসীদের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, জামপুর ইউনিয়নের কোবাগা এলাকার বাসিন্দা রাখাল দাস, গোপালদাস, মৃত প্রাণ বল্লবের ছেলে বসুদেব ও সুদেব, মৃত রাধা বল্লবের ছেলে প্রদীপ বল্লবের মালিকানা ২৯ শতাংশ জায়গায় চারটি পরিবার বসবাস করে আসছে। ওই এলাকায় সিগমা অয়েল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক সঞ্জিৎ মন্ডল পরিবারগুলোর শেষ সম্ভল ভিটে মাটিটুকু দখল করে নেওয়ার জন্য তাদের মিথ্যা মামলা ও বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করছে। এতে ওই পরিবারের প্রায় ত্রিশ পয়ত্রিশ জন সদস্য প্রাণের ভয়ে সবসময় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সন্ত্রাসীরা জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

রোববার সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে কথা হয় রাখাল দাসের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের বাব-দাদার সম্পত্তিতে ঘরবাড়ি নির্মান করে ছেলেপুলে নিয়ে বসবাস করে আসছি। সম্প্রতি সিগমা ওয়েল মিলের ম্যানেজার সঞ্জিৎ মন্ডল ও ভূমি দস্যু শহিদুল ইসলাম আমাদের শেষ সম্ভলটুকু কেড়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমরা ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পাচ্ছি না। রাদা বল্লব বলেন, আমরা আমাদের জীবন দিয়ে দিব। তবুও বাব-দাদার শেষ সম্ভল ভিটে মাটি ছেড়ে দিব না। জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও আমাদের ভিটেমাটি রক্ষা করব।

গিতা মন্ডল জানান, একটি ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় পরিবেশ ছাড় পত্র ছাড়া কিভাবে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এটা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাদের শক্তিশালী জেনারেটরের শব্দে আমরা ঠিকমত ঘুমাতে পারি না। তাই অবিলম্বে এই কারখানাটি অন্যত্র স্থানান্তর করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

তারামনি জানান, আমরা সসংখ্যালঘু পরিবারের সদস্য বলে আমাদের কোন দাম নেই। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন ন্যায় বিচারক। আমরা তার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আমাদের বাড়িঘর রক্ষা করার জন্য আমরা আজিবন চেষ্টা করে যাব। সোনারগাঁ আইডিয়াল স্কুলের ২য় বর্ষের ছাত্রী জয়ন্তিরানি দাস জানান, তাদের কারখানার জেনারেটরের প্রচন্ড শব্দে আমাদের লেখাপড়ার খুব সমস্যা হয়। তাই কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এলাকাবাসী জানায়, সিগমা ওয়েল ইন্ডাষ্ট্রিজের ম্যানেজার সঞ্জিৎ মন্ডল ও তার সহযোগী ভূমিদস্যু শহিদুল ইসলাম এলাকার নিরিহ লোকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে থাকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিগমা ওয়েল মিলের ব্যবস্থাপক রঞ্জিৎ মন্ডলকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া জানান, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটি কোণ ভাবেই লাইসেন্স নবায়ন করতে দেওয়া হবে না। সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহী জানান, সংখ্যালঘু পরিবারে সদস্যদের হয়রানি করা যাবে না। ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় কিভাবে কারখানা পরিচালনা করছে এবিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: