সরকারি বিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি, ৮ টার অফিসে ১০ টায় আসেন উপজেলা কর্মকর্তারা

প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৪:২৫ পিএম

মাজহারুল ইসলাম, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জে) থেকেঃ সরকারি নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নারাণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যথাসময়ে অফিসে না এসে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো বিলম্ব করে ১০ টার পর আসছেন অফিসে। সরকারি আদেশ অনুযায়ী সকাল ৮ টায় অফিসে আসার নিয়ম থাকলেও ‘দুর থেকে আসতে হয়, ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়, ফিল্ডে আছি’ ইত্যাদি বিভিন্ন বাহানা দিয়ে তারা সরকারি নিয়ম ভেঙ্গে নিজেদের মনগড়া সময়ে অফিসে আসছেন ১০ টারও পর। কখনো কখনো সকাল ১১ টার পরও অফিসে তাদের দেখা পাওয়া যায়না।

জানা গেছে, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি অফিসের কর্মঘন্টা কমিয়ে সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত অফিস সময় নির্ধারণ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত ২২ আগষ্ট জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, ২৪ আগষ্ট থেকে পরবর্তি নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি বাদে রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও আধা-স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময়সূচী সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত। এদিকে সরকার নতুন কর্মঘণ্টা বেঁধে দিলেও সরকারি সেই আদেশকে তোয়াক্কা না করে সোনারগাঁ উপজেলার সরকারি কর্মকর্তারা যথাসময়ে অফিসে না এসে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো বিলম্ব করেই আসছেন অফিসে।

গত ২৪ আগষ্টের পর থেকে সরেজমিনে প্রায় প্রতিদিনই (অফিস শুরুর সময়ে) দেখা গেছে, নতুন কর্মঘন্টার প্রজ্ঞাপন জারির নিয়ম না মেনে সোনারগাঁ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ইউসুফ হাবিব, সহকারি সমাজসেবা অফিসার হালিমা খন্দকার রুনু, কৃষি অফিসার আফরোজা সুলতানা, যুব উন্নয়ন অফিসার ইয়াছিনুল হাবিব তালুকদার, শিক্ষা অফিসার দৌলদ উর রহমান, নির্বাচন অফিসার ইউসুফ উর রহমান, পিআইও আব্দুল জব্বার, উপজেলা প্রকৌশলী আরজুরুল হক, মহিলা বিষয়ক অফিসার নাজমা আক্তার, সিনিয়র উপ-মৎস্য অফিসার জিয়াসমিন আক্তার, পল্লী উন্নয়ন অফিসার তানজিলা রায়হান, সমবায় অফিসার আনিছা খাতুনসহ তাদের অধিনস্ত কর্মকর্তারাও অফিসে আসছেন ৯ টার পর। তাছাড়াও অনেকের অফিসের গেটে তালা ঝুলতে দেখা যায় ৯ টারও পর পর্যন্ত।

সরকারি আদেশের তোয়াক্কা না করে এসব কর্মকর্তারা অফিসে কেন বিলম্ব করে আসছেন জানতে চেয়ে তাদের অনেককে মোবাইলে ফোন দিলে, কি কারন তা জানতে চাইলে শিক্ষা অফিসার, সহকারি সমাজসেবা অফিসার, কৃষি অফিসার জানান, তারা ফিল্ডে আছেন। তবে ৮-৯ টার মধ্যে কে কোন ফিল্ডে আছেন তা বলতে রাজি না হয়ে ফোন কেটে দেন। আবার অনেকে ফোন রিসিভ না করায় তাদের অফিসে গিয়ে কথা বলতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা অফ দ্যা রেকর্ডে জানান, আমরা অনেকেই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ থাকি। যদিও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী উপজেলার এক কিলোমিটারের মধ্যেই কর্মকর্তাদের থাকার কথা তারা কেন ঢাকায় থাকেন? তারা জানান, আমাদের ‘দুর থেকে আসতে হয় বিধায় একটু দেরি হয়। তাছাড়াও একটু রাত করে শুলে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়, সেজন্যও আসতে সামান্য দেরি হয়। তবে কোন সেবা গ্রহীতা কিন্তু আমাদের কাছ থেকে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেনা।

সোনারগাঁ উপজেলায় সেবা নিতে আসা অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেও সেবা পাইনা। স্যার/ ম্যাডাম অফিসে আসতে নাকি আরো দেরি হবে এমনটা সহ্য করেই বসে থাকেন সেবা গ্রহীতারা।

এদিকে যেসকল কর্মকর্তা সোনারগাঁয়ে থাকেন তারাও নিজেদের দায় এড়াতে ফিল্ডে থাকা ছাড়াও বিভিন্ন বাহানা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও প্রায় সব অফিসারের কাছে জানতে চাইলে, আগে অফিসে এসে পরে ফিল্ডে যাবেন এটাইতো সম্ভবত নিয়ম। এমন প্রশ্নের জবাবে তারা কোনো সদুত্তর না দিয়ে কৌশলে এড়িয়ে যান।

বিভিন্ন অফিসে কর্মরত নাম প্রকাশ না করার শর্তে অফিস সহকারিরা বলেন, ভাই, উনারা বড় অফিসার। সত্য কথা বলতে কেউই সরকারি নিয়মে সকাল ৮ টায় অফিসে আসেন না। আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়ে থাকেন যেন কেউ আসলে বলি উনারা ফিল্ডের কাজ সেরে পরে আসবেন। আমাদেরও আসতে অবশ্য একটু দেরি হয়।

অপরদিকে সরকারি আদেশের তোয়াক্কা না করে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো দেরি করে অফিসে আসছেন কর্মকর্তারা এমন বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহীদ এলাহী জানান, সবাইকে বলে দেবো যেনো ঠিক সময়ে অফিসে আসেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: