ইয়াবা মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তাকে শোকজ, আসামি খালাস

প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:০০ পিএম

ইয়াবা মামলার আসামি খালাস, বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তাকে শোকজ ইয়াবা মামলার এক আসামিকে খালাস দিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। একইসঙ্গে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা দায়ের, প্রতিবেদন দেওয়া ও সাক্ষ্য দেওয়ায় মামলার বাদী, তদন্ত কর্মকর্তা ও মামলার দুই স্বাক্ষীকে শোকজ করা হয়েছে। তারা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। আদেশে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে স্বশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ২ টায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন ওই রায় ঘোষনা করেন। খালাসপ্রাপ্ত আসামির নাম আবদুর রহমান। তিনি উখিয়া উপজেলা জালিয়াপালং ইউনিয়নের মনখালি গ্রামের ফরিদের ছেলে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টায় কলাতলীর শুকনাছড়ি এলাকার মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন মনছুর কুলিং কর্নারের সামনে থেকে আববদুর রহমান ও নুরুল আমিনকে ১০ হাজার ইয়াবাসহ আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের পরিদর্শক জীবন বড়ুয়া।

ইয়াবাগুলো রহমানের ডানহাতে থাকা শপিংব্যাগে ছিল বলে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। পরে একই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি মামলা থেকে নুরুল আমিনকে বাদ দেওয়ার আবেদন করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের উপ-পরিদর্শক কামরুজ্জামান। এতে ৬ জনকে সাক্ষী করা হয়। এরপর সেই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আবদুর রহমানকে অভিযুক্ত করে চার্জ গঠন করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

চার্জশীট থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে সাক্ষীরা হলেন, মামলার বাদী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের পরিদর্শক জীবন বড়ুয়া, তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক কামরুরজ্জামান, সহকারী উপ-পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম ও সিপাহি আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া মামলার পাবলিক সাক্ষী হিসেবে রয়েছে এজাহারে দেখানো ঘটনাস্থল শুকনাছড়ি মনছুর কুলিং কর্ণারের মালিক মনছুর আলম ও তার বাবা নুরুল হাকিম।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী সরকারী কৌঁসুলী মোজাফফর আহমদ হেলালী বলেন, ওই মামলায় আসামিপক্ষে দুইজনের সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। তারা হলেন, উখিয়ার ইনানীর পূর্ব নুরার ডেইলের মৃত নজির আহমদের ছেলে সানাউল্লাহ এবং একই উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের বড় ইনানির ছেলে বাদশা মিয়ার ছেলে নুরুল আমিন রানা।

তিনি আরও বলেন, সাফাই সাক্ষী আদালতকে জানিয়েছে ঘটনার দিন তারা দুইজন ইনানীর আব্বাসী রেষ্টুরেন্টে চা খাচ্ছিল। সেখান বসে রানা রহমানকে ফোন করে। পরে দুই মিনিটের মধ্যে রহমান সেখানে আসে। এর কিছুক্ষণ পর দুটি ওয়াকিটকি কোমড়ে থাকা দুই ব্যক্তি রহমানকে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করে। রহমান তার নাম জানালেই তাকে হ্যান্ডকাপ পেরিয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানে রহমানের কাছ থেকে কোন ইয়াবা পায়নি।

মোজাফফর আরও বলেন, জীবন বড়ুয়ার দায়ের করা মামলার ৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪ জনেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অদিদপ্তরে কর্মরত। সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য, তদন্ত কর্মকর্তার চার্জশীট, মামলার বাদীর এজাহার ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যতে আদালতের মনে হয়েছে মামলাটি সাজানো। এজন্য রহমানকে খালাস দিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের ওই ৪ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা কেন নেওয়া হবে না তা জনতে চেয়ে শোকজ করেছেন আদালত। তাদেরকে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে তার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের উপ-পরিদর্শক কামরুরজ্জামান বলেন, মাসে দুই তিনটি চার্জশীট আদালতে দিয়ে হয়। কোন মামলার চার্জশীটে কী লেখা রয়েছে মনে নেই। আদালতের আদেশ এখনো পাইনি। পেলে আদেশ অনুযায়ী কাজ করবো। মামলার বাদী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের পরিদর্শক জীবন বড়ুয়া বলেন, আদালত যদি আমাদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে থাকে তবে ব্যাখ্যা দিব।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: