মাত্র ১৫ টাকায় থাকেন আবাসিক হোটেলে!

জনপ্রতি মাত্র ১৫ টাকায় চলছে গরিবের আবাসিক হোটেল। লম্বায় ২২ ফুট দৈর্ঘ্য আর প্রস্থে মাত্র ১৪ টিনশেড হোটেল। থাকতে পারেন প্রায় ৫০ জন। এখানে রাত কাটাতে হলে দিতে হয় মাত্র ১৫ টাকা। আর এ টাকা দিয়েই শান্তি খুঁজে পান দিনমজুররা। ক্ষেত-খামারে দিনভর পরিশ্রম শেষে এ হোটেলেই রাত কাটান তারা। হোটেলটির নাম ‘লেবার বোর্ডিং’ হলেও অনেকেই ‘গরিবের আবাসিক হোটেল’ হিসেবে চেনেন। এমনই হোটেল গড়ে উঠেছে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি গ্রামের আনন্দবাজারের আশপাশে। এ ধরনের হোটেল একে একে ছয়টি রয়েছে এখানে।
তবে অন্য আবাসিক হোটেল থেকে বেশ ব্যাতিক্রম এই হোটেল। সাধারণত হোটেলে চৌকি কিংবা খাট থাকলেও লেবার বোর্ডিংয়ে নেই এসব। এখানে মেঝেতে পাতানো রয়েছে খেজুর পাতার পাটি বা প্লাস্টিকের বস্তা। এর ওপরেই নিজের কাঁথা-বালিশে ঘুমিয়ে শান্তির খোঁজ পান দিনমজুররা। মাত্র ১৫ টাকায় রাত হিসেবে অনেকে দীর্ঘদিন ধরেও এসব হোটেলে রয়েছেন। তাদের নিজস্ব ট্রাংকও রয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, সারাবছরই সবজির আবাদ হয় সলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি, বক্তারপুর ও নওদাপাড়া গ্রামে। একই সঙ্গে ধান, পাট, সরিষা, মাশকালাই, মশুর, পেঁপে, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফল-ফসলের আবাদ হয়। তাই ক্ষেত-খামারের কাজে দিনমজুরের চাহিদা রয়েছে প্রচুর।
এছাড়া এখানে স্থানীয় দিনমজুরদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে এসে বছরজুড়েই কাজের সুযোগ পান। রাজশাহী, নাটোর, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, কুষ্টিয়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার দিনমজুররা আগে স্কুলের বারান্দা কিংবা দোকানপাটের সামনে রাত কাটাতেন। অনেকে পলিথিনের ছাউনি তুলে ক্ষেত-খামারেই কাটাতেন রাত। বিষয়টি দেখে ভাড়ইমারি আনন্দবাজারে দিনমজুরদের জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দেন স্থানীয় আতিয়ার রহমান।দিনমজুররা সারাদিন পরিশ্রমের পর এ ঘরে রাত কাটানোর সুযোগ পান। প্রথমে রাত কাটাতে দিনমজুরদের কাছ থেকে ১০ টাকা করে নেয়া হতো। প্রায় এক যুগ আগে দিনমজুরদের থাকার জন্য আনন্দবাজারে এভাবেই গড়ে ওঠে বোর্ডিং। পরবর্তী সময়ে চাহিদা অনুযায়ী একে একে গড়ে ওঠে আরো ছয়টি আবাসিক হোটেল।
বোর্ডিংয়ের মালিক আতিয়ার রহমান বলেন, দিনমজুরদের থাকার কষ্ট দেখে প্রথমে একটি ঘরের ব্যবস্থা করেছিলাম। এরপর অনেকেই বোর্ডিং খুলেছে। গরিব দিনমজুরদের উপকার হয়। ব্যবসার কোনো উদ্দেশ্য নেই।বোর্ডিংয়ে প্রশংসা করে সলিমপুরের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা বলেন, সলিমপুর ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামেই বছরজুড়ে সবজির আবাদ হয়। প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার দিনমজুর আশপাশের উপজেলা ও জেলা থেকে এসে কাজ করেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা এসব দিনমজুরের অনেকেই কাজ শেষে বাড়ি ফিরতে পারেন না। গরিব দিনমজুরদের থাকার জন্য স্থানীয়রা লেবার বোর্ডিং করে দিয়েছেন।
রেজানুল/সা.এ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য: