প্রিয় সানজিদা, আমাদের কাছে তোমরাই এই দেশের চ্যাম্পিয়ন

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৪৮ পিএম

সানজিদা আখতার নামের মেয়েটার লেখা পড়ে আমার চোখে পানি চলে এসছে। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের এই মেয়েটা সাফ ফুটবলের ফাইনাল খেলার অপেক্ষায় আছে। আমি বরং প্রথমে মেয়েটার লেখার কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি।

মেয়েটা লিখেছে- ‘যারা আমাদের এই স্বপ্নকে আলিঙ্গন করতে উৎসুক হয়ে আছেন, সেই সকল স্বপ্নসারথিদের জন্য এটি আমরা জিততে চাই। নিরঙ্কুশ সমর্থণের প্রতিদান আমরা দিতে চাই। ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনী কে একপাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই। আমাদের এই সাফল্য হয়তো আরো নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে। অনুজদের বন্ধুর এই রাস্তাটুকু কিছু হলেও সহজ করে দিয়ে যেতে চাই।’

‘পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে বাড়ি আমার। পাহাড়ি ভাইবোনদের লড়াকু মানসিকতা, গ্রাম বাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতি পরত খুব কাছাকাছি থেকে দেখা আমার। ফাইনালে আমরা একজন ফুটবলারের চরিত্রে মাঠে লড়বো এমন নয়, এগারোজনের যোদ্ধাদল মাঠে থাকবে, যে দলের অনেকে এই পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলংকার বিক্রি করে, অনেকে পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে। আমরা জীবনযুদ্ধেই লড়ে অভ্যস্ত। দক্ষিন এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে যাবো। জয় - পরাজয় আল্লাহর হাতে। তবে বিশ্বাস রাখুন, আমরা আমাদের চেষ্ঠায় কোনো ত্রুটি রাখবো না ইনশাআল্লাহ। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।’

কি চমৎকার লেখা। কোথাও কোন অহংকার নেই। নেই কোন দাম্ভিকতা। কি চমৎকার শব্দের ব্যাবহার। আর আমাদের সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ'র বউরা নিজেরা কিছু করে না। নিজেদের নেই কোন পরিচিতি। শুধু জামাইর পরিচয়ের কারনে পা মাটিতে পড়ে না। এরা ফেসবুকে এসে এমন লেখা লিখে - দেখলে মনে হয় আমরা সাধারণ মানুষরা এদের অধীনে কাজ করি। আমরা মানুষই না! এইত সেদিনই মুশফিকের বউ লিখেছিল- "আরে নাহ, They have a team of hard hitters. বলে বলে ছয় আর ছয়।" একবার চিন্তা করে দেখুন অন্য খেলোয়াড়দের কিভাবে ছোট করেছে এই "বউ!"

অথচ সানজিদা আখতারের মত মেয়েরাই এই দেশ, এই রাষ্ট্রের জন্য অবদান রেখে চলেছে নিজ যোগ্যতায়। যোগ্যতা এবং মেধা দিয়ে এরা আজ এতদূর এসছে। কিন্তু দেখুন- মেয়েটার মাঝে এতটুকু অহংকার নেই। নেই কোন দাম্ভিকতা।

আপনার সন্তানকে দারিদ্রতা শেখান। যে কোন কিছু চাইলেই দিয়ে দেবেন না। পরিশ্রম এবং যোগ্যতা দিয়ে যে কিছু অর্জন করতে হয়; সেটা শেখান। নইলে সাকিব, মাহমুদুল্লাহ কিংব মুশফিকের বউয়ের মত বিবাহ করে একটা ভালো জামাই পেয়ে আশপাশের মানুষদের আর মানুষ মনে করবে না। ইংরেজিতে দুটো শব্দ বলতে পেরে এরা সাধারণ মানুষকে আর মানুষ মনে করছে না!

প্রিয় সানজিদা, এই দেশকে তোমরাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছ। তোমারা যদি চ্যাম্পিয়ন না-ও হও; কোন ক্ষতি নেই। কারন আমরা জানি, কতো বাঁধা পার হয়ে তোমরা আজ এই জায়গায় আসতে পেরেছ। তাই আমাদের কাছে তোমরাই এই দেশের চ্যাম্পিয়ন।

লেখক: ড. আমিনুল ইসলাম।
সিনিয়র লেকচারার ক্রিয়েটিভিটি অ্যান্ড ইনোভেশন বিভাগ। এস্তনিয়ান এন্টারপ্রেনারশিপ ইউনিভার্সিটি

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: