বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে ধুঁকে ধুঁকে ভুগছে কক্সবাজর শহর

স্বাস্থ্যকর শহর হিসেবে খ্যাতি থাকলেও কক্সবাজার এখন অপরিস্কার অপরিচ্ছন্নতা ও বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে ধুঁকে ধুঁকে ভুগছে। ফলে বেড়ে চলেছে অপরিচ্ছন্নতাজনিত রোগ বালাইয়ের প্রাদূর্ভাব। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক ভাবে পরিচালিত না হওয়ায় ব্যাপক হারে জন্ম নিচ্ছে এডিস মশা। আর নাগরিক আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরে। আক্রান্তদের মধ্যে কেউ কেউ মারাও যাচ্ছেন। অসচেতনতার কারণে কক্সবাজার শহর এখন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে-এমনটি বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বিগত কয়েক মাস ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। মারাও যাচ্ছে অনেকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে যেকোনো ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন যদি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়ে না তুলে তাহলে শুধুমাত্র হাসপাতালের সেবাই যথেষ্ট নয়।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এ বছর একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক ৭০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল বুধবারও ৩৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চলতি মাসে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৭ জন। আর আগের মাসে মারা গেছেন ১১জন। এছাড়াও চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ৩শতাধিক নারী পুরুষ। তন্মধ্যে শিশু ৮০জন, পুরুষ ১৬৩ জন এবং নারী ১২৭জন।
হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান জানান, যেভাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বাড়তে পারে মৃত্যুর সংখ্যা। গত কয়েক দিনে রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছে। এমাসের শুরুর দিকে বেশ চাপ ছিলো। তবে রোগীদের সেবা দিতে হাসপাতাল পুরোপুরি প্রস্তুত। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী অল্প-বিস্তর পাওয়া যাচ্ছিল। তবে জুলাই মাস থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তখন থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। চিকিৎসায় কোনো সংকট নেই।
৬নং ওয়ার্ডের সচেতন যুবক স্থপতি মামুন জানান, কক্সবাজার শহরের আভ্যন্তরীণ সড়কে উন্নয়ন কাজগুলো খুবই ধীরগতিতে চলছে। ফলে সেখানে প্রচুর পরিমাণ পানি জমে থাকে, ময়লা আবর্জনার স্তুপ হয়ে থাকে। এখানে এডিস মশার জন্ম হয়। আবাসিক এলাকাগুলোতেও পৌরকর্তৃপক্ষ ঠিক মতো বর্জ্য সরানোর উদ্যোগ নেয় না। নর্দমাগুলোতে অপরিচ্ছন্নতায় সয়লাব হয়ে আছে। সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে পৌর কর্তৃপক্ষের উচিত পূর্ণ শক্তি দিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় নজর দেওয়া।
পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে জানতে চাইলে পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডে রুটিন করে ব্লিচিং পাউডার এবং ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিধন করা হচ্ছে। ময়লা আবর্জনা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। কিন্তু লোকজন খুবই অসচেতন। তারা ড্রেনে সব ধরণের ময়লা আবর্জনা ফেলে স্বাভাবিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা ব্যহত করে। এসব কারণে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এটা ডেঙ্গুর মৌসুম। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিল। এবার থেমে থেমে বৃষ্টি বেশি হওয়ায় এডিস মশাও বেশি। আক্রান্তও বেশি হচ্ছে। তবে শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি।’
তিনি আরোও বলেন, ‘সচেতনতার অভাবেই প্রতি বছর এভাবে ডেঙ্গু হানা দেয়। শিশুদের এই সময়ে হাত পা ঢাকা জামা কাপড় পরানো উচিত। তারা দিনে ঘুমালে মশারি টানিয়ে দেয়া উচিত। ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা দিনে কামড়ায়। তখন অধিকাংশ শিশু স্কুলে থাকে। স্কুল থেকেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এখন করোনাও আছে। তাই করোনার টেস্ট করালে সঙ্গে ডেঙ্গুর টেস্টও করাতে হবে। জ্বর হলে অপেক্ষা না করে দ্রুত টেস্ট করালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দ্রুত শনাক্ত করা যায়। ফলে ঝুঁকি কমে যায়। আর জ্বর হলে নিজের চিকিৎসা নিজে না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আমাদের ডেঙ্গু চিকিৎসায় কোনো সংকট নেই। তবে আবহাওয়া এবং সচেতনতার অভাবের কারণে ডেঙ্গু রোগী আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. আবদুল আলিম বলেন, ‘গত এক মাসে বৃষ্টি এবং থেমে থেমে বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা বেড়ে গেছে। টানা বৃষ্টিতে লার্ভা ভেসে যায়। কিন্তু থেমে থেমে বৃষ্টিতে স্বচ্ছ পানি জমে যা এডিস মশার প্রজননের জন্য সহায়ক। সামনে এটা আরও বাড়বে। কমপক্ষে আরও একমাস পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।’
তিনি আরোও বলেন, ‘যতই বলা হোক নাগরিকেরা এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এব্যাপারে সচেতন নয়। ডেঙ্গু শুরু হলে আমরা কথা বলি। কিন্তু এডিস মশার প্রজনন ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। সবাই জানেন স্বচ্ছ ও বদ্ধ পানিতে এডিস মশার প্রজনন হয়। কিন্তু আগাম কোনো প্রস্তুতি থাকে না।’
সালাউদ্দিন/সাএ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: