মাদক মামলার প্রতিবেদন দাখিলে গড়িমসি, শাস্তির নির্দেশ তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৪৩ এএম

দেড় বছরেও মাদক মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না করা এবং জব্দ ইয়াবার রাসায়নিক পরীক্ষা না করায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টেকনাফ বিশেষ জোনের পরিদর্শক বিদ্যুৎ বিহারী নাথকে বিভাগীয় শাস্তি প্রদানের আদেশ দিয়েছেন টেকনাফের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

দায়িত্বে অবহেলা ও তদন্তে অদক্ষতা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিবেদন দাখিল না করার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে জানিয়ে বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টায় টেকনাফের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মো. আসিফ ওই আদেশ দেন।

মামলার এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টেকনাফের সদর ইউপির ১ নং ওয়ার্ডের হাবিবছড়া দক্ষিণ ঘাটে নোঙর করা হারুনের মালিকানাধীন ইঞ্জিনচালিত একটি সাম্পান থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। জব্দ করা হয় সাম্পানটিও। তবে সেসময় কাউকে আটক করতে পারেনি অভিযানকারী দল। এরপর দিন টেকনাফ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে সাম্পান মালিক হারুনকে প্রধান আসামি করে একই ওয়ার্ডের ৮ জনকে পলাতক আসামি দেখিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক মো. সিরাজুল মোস্তফা। মামলাটির তদন্তভার পান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টেকনাফ বিশেষ জোনের পরিদর্শক বিদ্যুৎ বিহারী নাথ। তবে আইন অনুযায়ী মাদক মামলার প্রতিবেদন ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হলেও দেড় বছরেও তা করেননি তদন্ত কর্মকর্তা।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিদবেদন দাখিলে ব্যর্থ হয়ে বিদ্যুৎ বিহারী নাথ চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি প্রথমবারের মত ১৫ কার্য দিবস সময় নেন। ফের তিনি প্রতিবেদন দাখিল না করে ১৫ মার্চ আবারও ১৫ কার্যদিবস সময় চাইলে আদালত তাও মঞ্জুর করেন। কিন্তু মামলার ১ বছর অতিবাহিত হলেও জব্দকৃত আলামতের রাসায়নিক পরীক্ষা এবং তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না করে তিনি ২৪ আগস্ট ফের আদালতের কাছে আরও ১ মাসের কার্যদিবস চেয়ে আবেদন করেন। তবে আদালত তার সেই আর আবেদনটি গ্রহণ না করে নির্দিষ্ট সময়ে তদন্ত কাজ শেষ করতে না পারা কেন চরম অদক্ষতা ও অবহেলা বলে গণ্য হবে না এবং কেন তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাকরি বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না জানতে চান আদালত। ওই আদেশের প্রেক্ষিতে ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হয়ে লিখিত জবাব দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা বিদ্যুৎ বিহারী নাথ।

বিহারী নাথ লিখিত জবাবে উল্লেখ করেছেন, ‘মামলাটি একটি বড় মামলা এবং তৎ কারণে প্রকৃত মালিক ও মদদদাতা বা যোগানদাতা কারা তা উদ্ঘাটনের জন্য আসামি গ্রেফতার করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া আগের মামলার সাক্ষ্য প্রদানের জন্য পূর্ববর্তী কর্মস্থলে যাতায়াত, আরও অনেক মামলার তদন্তের কারণে সঠিক সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব হয়নি।’ তবে আদালতের কাছে মনে হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তার এমন জবাব অগ্রহণযোগ্য এবং অযৌক্তিক।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক ইলাহী শাহাজাহান নূরী বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তার কারণ দর্শানোর জবাব বিশ্লেষণ করে প্রতীয়মান হয়েছে যে তদন্তকারী কর্মকর্তা ইচ্ছাপূর্বক অসৎ উদ্দেশ্যে আইন কর্তৃক সুনির্দিষ্ট সময়ে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেনি, ফলশ্রুতিতে মামলার ন্যায়বিচার পরাহত এবং বিচার বিলম্বিত হয়েছে। সার্বিক বিষয় বিচার বিশ্লেষণ করে তদন্তকারী কর্মকর্তা বিদ্যুৎ বিহারী নাথের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় শাস্তি প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছে আদালত। আদেশের কপি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

তবে অভিযুক্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টেকনাফ বিশেষ জোনের পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিদ্যুৎ বিহারী নাথ মুঠোফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া মেলেনি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: