বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা হলে নমিতা, সমবেদনা জানাতে বাড়িতে ইউএনও

প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:২৯ পিএম

নীলফামারীর ডোমারে বাবার লাশ বাড়িতে রেখেই চলতি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন নমিতা রানী ঝাঁ নামের এক পরিক্ষার্থী। নমিতার পরিবারকে সমবেদনা জানাতে ওই পরীক্ষার্থীর বাড়িতে হাজির হন ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রমিজ আলম। নমিতা রানী ঝাঁ পিতা সুনীল চন্দ্র ঝাঁ। ডোমার উপজেলার নিমোজখানা বাকডোকরা স্কুল এ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষার সে একজন পরীক্ষার্থী।

শনিবার বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা পরীক্ষা ছিল। সকাল ১১টায় তার পরীক্ষা শুরু হবে। হঠাৎ করে সকাল ৬টার দিকে হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান নমিতার বাবা সুনিল চন্দ্র ঝাঁ। একদিকে বাবা মারা যাওয়ার শোক অন্যদিকে পরীক্ষা। কি করবে বুঝে উঠতে পারছিলো না নমিতা। বাবাকে হারিয়ে ভেঙ্গে পড়েন তিন ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট নমিতা রানী। পরে স্বজন এবং পরিবারের লোকজনদের পরামর্শে ডোমার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে।

পরীক্ষায় বসে সে মন ভার করে পরীক্ষা দিচ্ছিলো। মাঝে মাঝে দু চোখ বেয়ে পানি ঝড়ছিলো। বিষয়টি চোখে পড়ে এক শিক্ষকের। ওই শিক্ষক নমিতার কাছে জানতে পারে তার বাবার মৃত্যুর কথা। শিক্ষক বিষয়টি ডোমার উপজেলা নির্বাহী অফিসার রমিজ আলমকে জানালে তিনি ছুটে আসেন কেন্দ্রে। নমিতাকে সান্ত্বনা দিয়ে নির্ভয়ে পরীক্ষা দিতে উৎসাহ দেন এবং পরীক্ষা কেন্দ্রে তার যেন কোন অসুবিধা না হয় সে বিষয়ে কেন্দ্র সচিবকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। পরীক্ষা শেষ হলে তাকে নিরাপদে বাড়িতে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে এসে বাবার অন্তেষ্টি ক্রিয়ার অনুষ্ঠানে অংশ নেয় নমিতা।

পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে বিকেলে বোড়াগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিমুনসহ নমিতার পরিবারকে সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানাতে তার বাড়িতে হাজির হন ডোমার উপজেলা নির্বাহী অফিসার রমিজ আলম। এসময় ভবিষ্যত যে কোন সহযোগীতা ও শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়া আশ্বাস দেন তিনি। এ ঘটনায় ওই এলাকায় প্রশংসায় ভাসছেন ডোমার উপজেলা নির্বাহী অফিসার রমিজ আলম।

নমিতা রানীর বড়ভাই বিপুল কুমার ঝাঁ জানান, আমার বাবা সকাল ছয়টায় মারা যান। নমিতা আমার ছোট বোন, সে এবার এসএসপি পরিক্ষা দিচ্ছে। বাবার লাশ বাড়িতে রেখে সে পরীক্ষা দিতে যায়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রমিজ আলম বলেন, খবরটি শুনে আমি পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে নমিতা রানীর সাথে দেখা করে তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করি। পরীক্ষা কেন্দ্রে তার যেন কোন অসুবিধা না হয় সে বিষয়ে কেন্দ্র সচিবকে ব্যবস্থা নিতে বলি। বিকেলে মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে। চলমান অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো যাতে সে নির্বিঘ্নে ও ভালোভাবে দিতে পারে উপস্থিত সকলকে সে ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখতে বলা হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: