বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় রাঙ্গামাটিতে জুমিয়াদের স্বপ্ন ভঙ্গ

ভরা বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় রাঙ্গামাটির পাহাড়ের চূড়ায় চাষ করা জুমিয়াদের ধান সহ নানা ধরনের ফসল প্রচন্ড রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে সবুজ ফসল দিন দিন হলুদ হয়ে উঠছে। এ সময়ে জুম চাষিদের চোখে মুখে থাকার কথা আনন্দের ঝিলিক। কিন্তু এবছর পর্যাপ্ত পরিমাণের বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে পাহাড়ে জুমের ফসল ভালো হয়নি। দেখা দিতে পারে খাদ্য সংকটও। স্বপ্ন যখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়, তখনি জুমিয়াদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার বলিরেখায়। এ অবস্থায় চলতি বছর জুমচাষে ক্ষতি আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির সদর উপজেলার আসামবস্তি এলাকা বিলাইছড়ি পাড়া, লংগদু, বিলাইছড়ির পাংখোয়া পাড়া ও রাজস্থলী উপজেলার দুর্গম মিতিঙ্গাছড়ি সহ বিভিন্ন এলাকায় জুম চাষ করা হয়েছে। সেখানে ধানের ফাঁকে ফাঁকে রোপন করা হয়েছে কলাগাছ,মরিচ, হলুদ, আদা, কচু,মিষ্টি কুমড়া ও বরবটিসহ নানান জাতের শাক-সবজি। তবে গত বছরের তুলনায় এবছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জুমচাষে ভালো ফলন হয়নি। এতেই দুশ্চিন্তায় আর চাপা কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন জুম চাষিরা।
চাষিরা জানান, এমন দিনে জুম চাষীদের ঘরে ঘরে চলো নবান্ন উৎসব। কিন্তু এবছর আবহাওয়া প্রতিকুলে থাকায় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়ায় জুমচাষে ভালো ফলন হয়নি। ভালো ফলন না হওয়ায় জুমের ধান ঘরে তুলে হতাশায় ভুগছেন জুমচাষিরা। তাঁরা আরো জানান, জুমে উৎপাদিত ধান ও কৃষি শাক-সবজি ৭ থেকে ৮ মাস পর্যন্ত তাদের খাবারের জোগান দেয়। এছাড়াও তারা অতিরিক্ত শাক-সবজি বিক্রি করেও জীবিকা নির্বাহ করেন। এবছর জুমিয়াদের কপাল পুড়ায় তাদের পড়তে হবে খাদ্য সংকটে।
রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার আসামবস্তি এলাকার বিলাইছড়ি পাড়ার জুমচাষী নিয়তি চাকমা জানান, গেল বছর জুমে ভালো ফলন হয়েছে। এবছর পর্যান্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং পানির সেচের অভাবে জুমের ফসল ভালো হয়নি। অধিকাংশ ফসল পানির অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। যা উৎপাদিত হয়েছে তা দিয়ে কোনো রকম সংসার চললেও পরে অভাব-অনটনে দিন কাটাতে হবে জুমিয়াদের।
রাজস্থলী উপজেলার মিতিঙ্গাছড়ি এলাকার জুম চাষি ভাগ্যরাম ত্রিপুরা জানান, এবছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এবং প্রখর রোদের খরায় তাদের জুম চাষের অধিকাংশ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এবছর তাদের প্রচন্ড খাদ্য ঘাটতিতে পড়তে হবে।
আরেক জুমচাষি জয়োরাম ত্রিপুরা জানান, অনাবৃষ্টির কারণে এবছর জুমচাষে ফলন কম হয়েছে। এক বছরের জুম চাষের ফসল দিয়ে তাদের সারা বছর চলতে হয়। কারণ পাহাড়ে দ্বিতীয়বার জুমচাষ করা সম্ভব নয়। এবার ফলন কম হওয়ায় তাদের খাদ্য সংকট দেখা দিবে। তিনি আরো জানান, প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষের দিকে শুরু হয় জুমে ধান লাগানোর প্রক্রিয়া। প্রায় ৩-৪ মাস পরির্চযার পর সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিক থেকে পাহাড়ে জুমের ধান কাটা শুরু করে আর শেষ হয় অক্টোবর মাসে।
রাজস্থলী উপজেলার ১নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবার্ট ত্রিপুরা জানান, এবছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জুমচাষে ভালো ফলন হয়নি। এছাড়াও জুমচাষিরা সঠিক সময়ে কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করতে না পারায় ফলনও কম হয়েছে। ফলে বছরে তাদের খাদ্য সংকটে পড়তে হবে।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল জানান, জুমচাষ সাধারণত বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল। এবছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় চাষ এবং ফলন কম হয়েছে। তিনি আরো জানান, এবছর জুমচাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর। পানির অভাবে এবং অনাবৃষ্টির কারণে জুম চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৩শত ৫০ হেক্টর জমিতে,তাও ফলন ভালো হয়নি।
শাকিল/সাএ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: