এনজিওর ঋণের চাপ সইতে না পেরে গৃহবধূর আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ০২ অক্টোবর ২০২২, ০৭:২৪ পিএম

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ঋণের দায়ে হীরা মনি (২৮) নামের এক গৃহবধু আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। তিনি উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের আমানপুর উত্তরপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক মাসুদ রানার স্ত্রী। তিনি বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন এবং প্রতিদিন তাকে দুই থেকে তিনটি করে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হতো।

পরিবার, থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের আমানপুর উত্তরপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক মাসুদ রানা তার স্ত্রী হীরা মনি’র নামে ঘাটতিলকপুর শাখার দাবি উন্নয়ন মৌলিক সংস্থা এনজিওসহ তিলকপুর ও রায়কালী শাখার গ্রামীন ব্যাংক, ব্র্যাক, আরডা স য় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি: সহ বিভিন্ন সমিতি এবং এনজিও থেকে বসত বাড়ির জমি ক্রয়ের জন্য প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। তাকে প্রতিদিন ১৫০০ টাকা করে দুই থেকে তিনটি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হতো।

ভ্যান চালক স্বামী দরিদ্র হওয়াই তার পক্ষে এতো টাকা কিস্তি পরিশোধ করা কষ্টকর হয়ে যেত। এক পর্যায়ে ওই এনজিও গুলো প্রতিনিয়ত তাকে এবং তার স্ত্রীকে কিস্তির জন্য তাগাদা দিতে থাকে। এই ঘটনায় সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। এরই জের ধরে গৃহ বধু হীরা মনি (২৮) শনিবার দুপুরে সকলের অগোচরে গোসলখানায় আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে ইঁদুর নিধন গ্যাস বড়ি খেয়ে ফেলে। এসময় তার মেয়ে রানী দেখতে পেয়ে বাধা দিলেও সে ব্যর্থ হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নওগাঁ হাসপাতালে নেওয়ার সময় পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়।

নিহতের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে রাণী (১৩) বলেন, ‘আমার মায়ের নামে অনেক এনজিও-এর ঋণ ছিল। এনজিও-এর লোকেরা বাড়িতে এসে কিস্তির জন্য সব সময় বলতে থাকত। টাকার সমস্যার জন্য কিস্তি দিতে পারত না। তাই আজ মানসিক চাপে আমার মা আত্মহত্যা করেছে।’

নিহতের স্বামী মাসুদ রানা বলেন, ‘দাবি এনজিও থেকে ষান্মাসিক ৩৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। আর্থিক সমস্যার কারণে পরিশোধ করতে পারিনি। শনিবার দাবি উন্নয়ন মৌলিক সংস্থা এনজিও’র লোকজন এসে আমার স্ত্রীর সামনে আমাকে ঋণ পরিশোধের তাগাদা দিলে সময় চাই। তারা বলেন সময় আমাদের বড় অফিসার দিতে পারবেন এই বলে চলে যান তারা। পরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরে আমার স্ত্রী গোপনে গ্যাস বড়ি খেয়ে আত্মহত্যা করে’।

গ্রামীণ ব্যাংকের তিলকপুর শাখার ওই এলাকার মাঠকর্মী মিজানুর বলেন, ‘সে নিয়মিত ঋণের টাকার কিস্তি প্রদান করত। এখনও তার প্রায় আনুমানিক ৪৭ হাজার বকেয়া আছে। তার আত্মহত্যার বিষয়টি শুনে আমি নিজেও অবাক। আমার মনে হয়না সে ঋণের টাকার জন্য আত্মহত্যা করেছে।’

গ্রামীণ ব্যাংকের তিলকপুর শাখার ব্যবস্থাপক ফরহাদ মিঞা বলেন, ‘নিহত হীরা মনি আমাদের নিয়মিত গ্রাহক ছিলেন। সে নিয়মিত প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার দিনে আমাদের কিস্তি পরিশোধ করতেন। তার সাথে আমাদের কোন সমস্যা ছিলনা।’

ব্র্যাক এর রায়কালী শাখার শাখা ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নিহত ওই মহিলা আমাদের শাখা থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। তিনি প্রথম কিস্তি ৪ হাজার টাকা দেওয়ার পরে গত ২ মাস থেকে অসুস্থতার কথা জানিয়ে কোন কিস্তি দেয়নি। তবে কিস্তির জন্য তাকে কখনো তাকে কোন চাপ প্রয়োগ করা হয়নি।’

আরডা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির শাখা ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সমিতিতে তার সাপ্তাহিক ৮’শ টাকা ঋণ ছিল। অসুস্থতার জন্য তিনি গত শনিবার ৪’শ টাকা কিস্তি দিয়েছিলেন। তার সাথে আমাদের কোন ঝামেলা হয়নি’।

দাবি উন্নয়ন মৌলিক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার বলেন, ‘যিনি মারা গেছেন তিনি আমাদের গ্রাহক ছিলেন। তার ঋণ পরিশোধের সময় এখনো আসেনি। তাছারা শনিবার আমাদের অফিঢস ছুটি ছিল। ছুটির দিনে কোন গ্রাহকের বাড়িতে গিয়ে ঋণ আদায় বা তাগাদা দেওয়ার কথা নয়। তবে তাকে কোন সময় ঋণের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়নি’।

আক্কেলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দীক বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। নিহত হীরা মনির মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে ঋণের জন্য মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ হয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে তার মেয়ে, স্বামী ও স্থানীয়রা বলেছেন’।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: