বাগেরহাটে চিংড়ির দাম বৃদ্ধি না পাওয়ায় হতাশ চাষিরা

প্রকাশিত: ০৪ অক্টোবর ২০২২, ০৪:২৮ পিএম

চিংড়ি উৎপাদনের ভর মৌসুম চললেও দাম বৃদ্ধি না পাওয়ায় হতাশ বাগেরহাট অ লের চিংড়ি চাষিরা। মাছের খাবারের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি মাছের দাম পর্যাপ্ত না হওয়ার কারণে লোকসানের মুখে পড়ছেন চিংড়ি চাষিরা। কেজি প্রতি চিংড়ির দাম কমেছে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা। “সাদা সোনা” হিসেবে খ্যাত চিংড়ি শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের আন্তরিকতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন চিংড়ি শিল্পের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।

চিংড়ি চাষের অন্যতম শীর্ষ জেলা বাগেরহাট। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরেই বাগেরহাটের হাজার হাজার পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস এই চিংড়ি চাষ। চিংড়ির উৎপাদনের উপর নির্ভর করেই চলতে হয় তাদের পরিবারকে। শুধু তাই নয়, বাগেরহাটের উৎপাদিত চিংড়ি বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর রাজস্ব আয় হয় পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে। বাগেরহাটে ৭০ হাজার গলদা চিংড়ি ঘেরে প্রায় ৩৫ হাজার চাষি যুক্ত রয়েছেন। বাগেরহাটে উৎপাদিত চিংড়ির ৯০ শতাংশই বিদেশে রপ্তানি যা ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ বিশ্বের ৩২টি দেশে রফতানি হয়ে থাকে। সম্ভাবনাময় এ শিল্পে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ক্রমাগত মাছের খাবারের মূল্য বৃদ্ধি, মাছের পেনার দাম বৃদ্ধিসহ নানা প্রতিকুলতার কারনে এই শিল্পের সাথে জড়িতরা চরম সংকটের মধ্যে রয়েছে। চাষিদের একটাই দাবি যে কোন ভাবে এ শিল্পকে বাচাতে হবে, এ জন্য চিংড়ির দাম বৃদ্ধির বিকল্প নাই।

চিংড়ির দাম কম নিয়ে চাষিরা বলেছেন, চিংড়ি চাষের ওপর নির্ভর করেই আমাদের পরিবারের সব আয়-উপার্জন। মাছের উৎপাদন খরচ ও খাবারের মূল্য বৃদ্ধি, আশানরুপ উৎপাদন না হওয়া ও মাছের বাজার মূল্য কম হওয়ায় আমরা চরম সংকট ও ক্ষতির মধ্যে রয়েছি। চলতি বছরে বাগদা চিংড়ির উৎপাদন কিছুটা কম পাশাপাশি দামের ক্ষেত্রেও কেজি প্রতি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা কমে গেছে। এত সমস্যার পরেও বাজরে নিত্য পন্যের দাম আকাশ -ছোয়া হওয়ায় চাষীদের পক্ষে মাছের খাবার কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এ দিকে গলদার ভর মৌসুমে যদি এভাবে দাম কমতে থাকে তাহলে চিংড়ি চাষীদের উপ নির্ভরশীল অনেক চাষীদের পক্ষে তিন বেলা খেয়ে বেচে থাকা কঠিন হবে। এ জন্য ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চিংড়ির খাবারের দাম কমানো ও চিংড়ির দাম স্বাভাবিক রাখার দাবি চিংড়ি শিল্পের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের।

চিতলমারী সদর উপজেলার পারডুমুরিয়া গ্রামের চিংড়ি চাষী শামীম শেখ বলেন, মৌসুমের প্রথমে বাগদা চিংড়ির দাম বেশি ছিল, তখন বাজারে তেমন মাছ ছিল না। এখন ভর মৌসুম, আমরা সবাই মাছ ধরছি। এই সময়ে এসে মাছের দাম একদম কমে গেছে। গেল এক সপ্তাহে আকার ভেদে প্রতি কেজি গলদা চিংড়িতে দেড়শত থেকে তিনশত টাকা দাম কমেছে।’

কচুয়ার চিংড়ি চাষী মোঃ জাহাঙ্গীর বলেন, নানা দুর্যোগের কারণে প্রতিবছরই লোকসান গুণতে হয় আমাদের। এরপরেও ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ করি। অথচ বিক্রীর সময় দাম পাই না। এদিকে দিন দিন মাছের খাবার ও আনুসঙ্গিক সবকিছুর দাম বাড়লেও বাগদার দাম কমছে। ফলে আমরা লোকসানের মুখে পড়ছি।’গলদার মৌসুমে যাতে সঠিক দাম পান এজন্য যথাযথভাবে বাজার মনিটরিং করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

ফকিরহাট উপজেলার শিহাব উদ্দিন রুবেল বলেন, ‘আমাদের এই অ লে প্রচুর বাগদা ও গলদা চিংড়ি উৎপাদন হয়। কিন্তু যারা উৎপাদন করে- মধ্যসত্বভোগীদের কারণে তারা লাভের মুখ দেখতে পারে না। যখন বাজারে চিংড়ি বেশি থাকে, তখন কোম্পানির মালিকরা দাম কমিয়ে দেয়। এ কারণে চাষিরা লোকসানের মুখে পড়েন। সরকার যদি যথাযথভাবে বাজার মনিটরিং ও নতুন বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়, তাহলে চিংড়ি চাষিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।’

বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, বাগেরহাট অ লের বেশিরভাগ কৃষকই জীবিকার তাগিদে চিংড়ি চাষ করে থাকে। কিন্তু চিংড়ি উৎপাদনের ভর মৌসুমে মাছের দাম কমে যায়। মাছ উৎপাদনের জন্য সারা বছর যে টাকা ও শ্রম বিনিয়োগ করি দাম কমার কারণে মুনাফা অর্জন করতে পারি না। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারিভাবে বাজার মনিটরিংসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সরকারী উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া চিংড়ি নীতিমালা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি চাষিদের সহজ শর্তে ঋণ ও কৃষকদের জন্য আরো বেশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।’

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম সোহেল বলেন, মৎস্য বিভাগের পরামর্শ ও চাষিদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গলদা-বাগদার উৎপাদন তুলনামূলক ভালো হয়েছে। চিংড়ির দাম কিছুটা কমেছে এ বিষয়ে চাষিদের অভিযোগ অমূলক নয়। কোভিড পরিস্থিতির পর রপ্তানি প্রক্রিয়া এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় চিংড়ির দাম কিছুটা কমেছে। তবে রপ্তানি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হলে দাম বাড়বে। গলদা চিংড়ির নতুন বাজার সৃষ্টির জন্য মৎস্য অধিদপ্তর থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাগেরহাটে ৬৬ হাজার ৭১৩ হেক্টর জমিতে ৭৮ হাজার ৬৮৫টি বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে। এসব ঘেরে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৬ হাজার ৫৭৫ মেট্রিক টন বাগদা ও ১৫ হাজার ৪১৩ মেট্রিক টন গলদা উৎপাদন হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৩৩ হাজার ৪১৩ মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে ২০২০-২১ অর্থ বছরেও ভাল উৎপাদনের আশা করছিলেন চাষিরা।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: