পুলিশের সহযোগিতায় চার বছর পর পরিবার ফিরে পেল মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক

প্রকাশিত: ০৬ অক্টোবর ২০২২, ১১:৪১ এএম

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশের সহযোগিতায় প্রায় চার বছর পর নিজ পরিবারকে ফিরে পেল মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক আমান উল্লাহ। অনেক দিন পর ভাইকে ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হন বড় ভাই মজিবর সরদার।

জানা গেছে, প্রায় চার বছর আগে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানার রায়টা কুসুডাঙ্গা এলাকার মৃত মনির উদ্দিন সরদারের ছেলে আমান উল্লাহ সরদার (২৮) এর স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যায়। পরে অজানা পথ পাড়ি দিয়ে সে চলে আসে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দুধকুমার নদীর চরে ইসলামপুর গ্রামে।

এলাকাবাসি জানায়, বছর চারেক আগে হঠাৎ একদিন মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে দেখতে পায় এলাকাবাসি। দুধকুমার নদের শহিদুলের ঘাট এলাকা থেকে অসুস্থ অবস্থায় আমান উল্লাহকে তোজাম উদ্দিন নামের এক ব‍্যক্তি তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। তাকে সেবা যত্ন করে সুস্থ করে তুলেন। একমাস সেই বাড়িতে অবস্থান করে আমান উল্লাহ। এলাকায় পরিচিত পায় আমানুল্লাহ পাগলা নামে।
তারপর একই এলাকার মিজানুর রহমান এর বাড়িতে দীর্ঘ দুই বছর অবস্থান করে। এরপর সে একই গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিন এর ছেলে চান মিয়ার বাড়িতে এসে ওঠে। প্রায় ৬ মাস থেকে সেখানে অবস্থান করছেন।

এরিমধ‍্যে একদিন ভ্যান গাড়িতে উঠে উপজেলা সদরে যাওয়ার পথে রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পায় আমান উল্লাহ। ভ‍্যান চালক রজব আলী প্রাথমিক চিকিৎসা করে। অবস্থার অবনতি হলে স্থানীয় আব্দুর রহিম, মাইদুল ইসলাম, ছামিদুল হক ও শিপন মিয়া স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে চিকিৎসা করান। পরে চন্দ্র ভান নামে এক মা তাকে মায়ের মত সেবা করে সুস্থ করে তুলে। দূর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পাওয়ার পর স্মৃতিশক্তি কিছুটা ফিরে আসে। তখন তার বাবা-মাসহ ভাইদের নাম বলতে পারে। এক পর্যায় তার নিজ এলাকা, থানা ও জেলার নামও বলতে পারে। তার বলা নামের সূত্র ধরে ইসলামপুর এলাকার মানিকউদ্দিন বেপারী ভূরুঙ্গামারী থানায় যোগাযোগ করে। পরে ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি সাতক্ষীরার কলারোয়া থানায় বিষয়টি জানান। ব‍্যাপক তৎপরতায় আমান উল্লাহর পরিবারের ঠিকানা খুঁজে পায় পুলিশ।

পুলিশের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে আমান উল্লাহর বড় ভাই মজিবর সরদার সোমবার (৩ অক্টোবর ) ভূরুঙ্গামারীতে আসেন। আমান উল্লাহর বড় ভাই মজিবর সরদার বলেন, প্রায় চার বছর আগে আমার ছোট ভাই অসুস্থ হয়ে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।
হঠাৎ একদিন আমার বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সেখান থেকে হারিয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করার পরও তার কোন সন্ধান পাইনি। কয়েকদিন আগে কলারোয়া থানা থেকে ফোন দিয়ে আমান উল্লাহ সম্পর্কে সংবাদ দেয়। সেই সংবাদের ভিত্তিতে আজ আমি এখানে এসে আমার ভাইয়ের সন্ধান পাই। ছোট ভাইকে এতোদিন পরে ফিরে পাবো এবং স্বচক্ষে দেখতে পাবো এমন আশা ছেড়েই দিয়ে ছিলাম। আজ ভাইকে ফিরে পেয়েছি। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া ও এলাকাবাসির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে ভূরুঙ্গামারী থানার ওসির মধ‍্যস্থতায় স্থানীয় গণ‍্যমান‍্য ব‍্যক্তিদের সামনে আমান উল্লাহকে তার পরিবারের সদস‍্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ভুরুঙ্গামারী থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, ভারসাম্যহীন যুবকের বিষয়ে কলারোয়া থানায় যোগাযোগ করে তার পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়। আজ তার বড় দুই ভাই এসেছে। বিভিন্ন ভাবে যাচাই করে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে আমান উল্লাহকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: