কঠিন বর্জ্য হতে পারে আধুনিক বিশ্বের বিকল্প জ্বালানি

প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২২, ০২:৩১ পিএম

কামরুল হাসান,নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে: বর্তমান বিশ্বের আলোড়িত সমস্যাগুলোর মধ্যে বর্জ্যের সঠিক পরিচালনা অন্যতম, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত দেশ গুলোর তুলনায় বেশি চ্যালেঞ্জময়। কারণ কঠিন বর্জ্য নিষ্পত্তির সঠিক ব্যবস্থাপনা গৃহীত হয় না। তবে বর্জ্য মানবজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ায় বর্জ্যকে অভিশাপ নয়, বরং আর্শিবাদ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। আজ বিশ্বের অনেক দেশেই বর্জ্য থেকে তেল,গ্যাস ও বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করছে। ফলে একদিকে যেমন বর্জ্য অপসারিত হচ্ছে অন্য দিকে শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বর্জ্য ভূমিকা রাখছে। বহির্বিশ্বে শহরগুলোর মতো আমাদের দেশের শহরগুলোকে আধুনিক সুন্দর ও সাবলিলভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। শহরকে বর্জ্যমুক্ত ও বর্জ্যকে সম্পদে পরিবর্তনের জন্য রিসাইক্লিংয়ের বিকল্প নেই।

বর্জ্য অপসারণ ও শক্তি উৎপাদন এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডোর) এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনার কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণার একমাস পর উৎপাদিত হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য। এর মধ্যে শুধু ঢাকায় প্রায় তিন হাজার ৭৬ টন যেখানে সার্জিক্যাল মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস এবং স্যানিটাইজারের বোতল এই বর্জ্যের নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। এছাড়া এখানে ত্রাণ বিতরণে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ব্যাগও ভূমিকা রেখেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে পলিথিন ব্যাগের বর্জ্য পাঁচ হাজার ৭৯৬ টন, পলিথিন হ্যান্ডগ্লাভস তিন হাজার ৩৯ টন, সার্জিক্যাল হ্যান্ডগ্লাভস দুই হাজার ৮৩৮ টন, সার্জিক্যাল মাস্ক এক হাজার ৫৯২ টন এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল থেকে ৯০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন করেছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ এক হাজার ৩১৪ টন সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভসের বর্জ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া রাজধানীতে পলিথিন হ্যান্ডগ্লাভস ৬০২ টন, সার্জিক্যাল মাস্ক ৪৪৭ টন, পলিথিন ব্যাগ ৪৪৩ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল থেকে ২৭০ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছে।

এ ছাড়াও বর্তমানে নীরব ঘাতক হিসেবে ব্যবহূত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, কম্পিউটার, মোবাইল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ E-Waste তৈরি হচ্ছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সঙ্গে সঙ্গে টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রোওভেন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, এয়ারকন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন, ডিভিডি প্লেয়ার, সিএফএল বাল্ব, পানির বোতল, খেলনা, ব্যাগসহ প্লাস্টিকের বহু পণ্য ব্যবহার হচ্ছে প্রতিদিনকার জীবনে। কয়েক বছর ব্যবহারের পর যখন এসব পণ্যের কর্মক্ষমতা শেষ হয় তখন ঠিকানা হয় ডাস্টবিনে। বিভিন্ন আবর্জনা ফেলার স্থান হিসেবে আমাদের দেশের নদী-নালা, ডোবা এমনকি উন্মুক্ত স্থানও ব্যবহার করা হয়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কোনো কোনো বর্জ্য থেকে লোহার অংশ রেখে বাকিটা ফেলে দেন।

বাংলাদেশের শহর অঞ্চলে এই কঠিন বর্জ্যের পরিমাণ সর্বাধিক যা শহরের পরিবেশ নষ্ট করে। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব বর্জ্য পৌর এলাকায় নিয়ে আসা হয়। বর্জ্যের ভাগাড় থেকে মিথেন গ্যাস উদগীরণ হয়ে পরিবেশকে দূষিত করে থাকে। ২০০৭ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ছয়টি বড় শহরের উৎপন্ন কঠিন বর্জ্য কমবেশি ৭৬৯০ টন। তার মধ্যে মহানগরী ঢাকা একাই ৫,৩৪০ টন বর্জ্য তৈরি করে। ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর নির্ধারিত গাইডলাইন অনুযায়ী ঢাকা শহরের মাতুয়াইল ভাগাড় থেকে পরিবেশে প্রায় ২০ এম মিথেন গ্যাস ২০০৫ সালে উদগীরণ হয়েছে। অর্থাৎ ঢাকা মহানগরীতে উৎপন্ন বার্ষিক ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন কঠিন বর্জ্য থেকে বছরে প্রায় কমবেশি ১ মিলিয়ন টন গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পূর্বে বর্জ্য উৎপাদন হ্রাসকরন শ্রেয়। একজন এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার জানেন কিভাবে কঠিন বর্জ্যকে শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। এছাড়াও একজন এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার আরও অনেক কাজ করে থাকে যেমন-এনভায়রমেন্টাল প্রতিবেদন তৈরি, হালনাগাদ করা, পরিবেশদূষন রোধে প্রযুক্তির নকশা করা ও প্রনোয়ন করা, স্টাডার্ড প্ল্যান, পার্মিট সংগ্রহ করা, জাতীয় নীতিমালা অনুসারে রাসায়নিক ব্যবহারের মাত্রা নির্ধারন করা, তথ্য নির্ভর গবেষনা করে কোয়ালিটি কন্ট্রোলে অংশ নেয়া, এনভায়রনমেন্টারল রেগুলেশন মানা হচ্ছে কিনা তা বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করে যাচাই করা, দূষিত নগর বা অঞ্চলকে পরিষ্কার করতে সরকার বা বিভিন্ন সংস্থাকে পরমর্শ দেয়া, সেতু বা বাঁধ নির্মানে নদী শাসনে কী করণীয় তার পরমর্শ দেয়া, দুর্যোগ বা আপদকালীন সময় কী করনীয় তা জানানো, তেল বা গ্যাস ক্ষেত্রের পরিবেশগত ঝুঁকি পর্যালোচনা করা, বনায়ন কর্মসূচী পরিচালনা করা ইত্যাদি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার থেকে প্রথমে বর্জ্য উৎপাদন হ্রাস করতে হবে। বর্জ্য উৎপাদন হ্রাসের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে, যার মধ্যে একটি হচ্ছে 3R কৌশল। 3R কৌশলকে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে হলে প্রথম শর্ত হচ্ছে, উৎপন্ন বর্জ্যগুলো সংগ্রহ করার উৎসমুখেই তার ভৌত, জৌব ও রাসায়নিক উপাদান অনুযায়ী পৃথক করে ফেলা।

সচরাচর, তিনটি স্তরে এই পৃথকীকরণ সম্পন্ন করা হয়, যেমন: (১) বসতবাড়ির স্তরে (২) পৌর পরিচ্ছন্নতা কর্মী কর্তৃক সংগ্রহ ও পরিবহনকালীন স্তর এবং (৩) বর্জ্যের ভাগাড় স্তরের। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পৌর এলাকার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ৮০ শতাংশ বর্জ্যকে 3R কৌশলের মাধ্যমে হ্রাসকরণ ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে পুনঃব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব। অবশিষ্ট বর্জ্যকে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শক্তি উৎপাদনের কাচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।বসতবাড়িতে খুব সহজেই জ্বালানি গ্যাস উৎপাদন করা যায় যা দিয়ে রান্নার কাজ সম্পূর্ণ করা যায়।বসতবাড়ির গাছের পাতা,রান্নাঘরের বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট অংশ যেমন মাছের কাটা, সবজির ফেলে দেওয়া অংশ, পশুর মল ইত্যাদি বায়োপ্লান্টে রেখে পচিয়ে বায়োগ্যাস উৎপন্ন করা যায় যা একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট। গ্যাস উৎপাদন শেষে যে অবশিষ্ট অংশ থাকে তা জমিতে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যা রাসায়নিক স্যার এর উপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করে। বসতবাড়িতে বায়োপ্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে প্রকৃতি গ্যাসের ওপর চাপ কমানো যেতে পারে।এতে পরিবেশ দূষণের হার কমে যাবে।

বাংলাদেশের শহর অঞ্চলে এই কঠিন বর্জ্যের পরিমাণ সর্বাধিক। এসব বর্জ্য শহরের পরিবেশ নষ্ট করে। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব বর্জ্য পৌর এলাকায় নিয়ে আসা হয়। এখানে প্রক্রিয়াকরণ করা হয় অর্থাৎ বর্জ্যের ভাগাড় থেকে মিথেন গ্যাস উদগীরণ হয়ে পরিবেশকে দূষিত করে থাকে। ২০০৭ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ছয়টি বড় শহরের উৎপন্ন কঠিন বর্জ্য কমবেশি ৭৬৯০ টন। তার মধ্যে মহানগরী ঢাকা একাই ৫,৩৪০ টন বর্জ্য তৈরি করে। ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর নির্ধারিত গাইডলাইন অনুযায়ী ঢাকা শহরের মাতুয়াইল ভাগাড় থেকে পরিবেশে প্রায় ২০ এম মিথেন গ্যাস ২০০৫ সালে উদগীরণ হয়েছে। অর্থাৎ ঢাকা মহানগরীতে উৎপন্ন বার্ষিক ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন কঠিন বর্জ্য থেকে বছরে প্রায় কমবেশি ১ মিলিয়ন টন গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও বর্তমানে নীরব ঘাতক হিসেবে ব্যবহূত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, কম্পিউটার, মোবাইল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ E-Waste তৈরি হচ্ছে। 3R কৌশলের মাধ্যমে উল্লিখিত বর্জ্যগুলো যথাযথভাবে প্রক্রিয়াকরণ করে ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের মোকাবেলা করা সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রে বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন পদ্ধতি:

কঠিন বর্জ্য থেকে খুব সহজেই জ্বালানি তেল এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।ব্যবহারের অযোগ্য প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনের কৌশল আবিষ্কার করেছেন বরিশালের সন্তান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিজ্ঞানী আনজুমান আরা ও তার স্বামী বিজ্ঞানী ড. মইনউদ্দিন সরকার বাদল। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সঙ্গে সঙ্গে টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রোওভেন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, এয়ারকন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন, ডিভিডি প্লেয়ার, সিএফএল বাল্ব, পানির বোতল, খেলনা, ব্যাগসহ প্লাস্টিকের বহু পণ্য ব্যবহার হচ্ছে প্রতিদিনকার জীবনে। কয়েক বছর ব্যবহারের পর যখন এসব পণ্যের কর্মক্ষমতা শেষ হয় তখন ঠিকানা হয় ডাস্টবিনে। বিভিন্ন আবর্জনা ফেলার স্থান হিসেবে আমাদের দেশের নদী-নালা, ডোবা এমনকি উন্মুক্ত স্থানও ব্যবহার করা হয়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কোনো কোনো বর্জ্য থেকে লোহার অংশ রেখে বাকিটা ফেলে দেন।

বাংলাদেশের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, দেশে প্রতি বছর ১০ মিলিয়ন টন ইলেকট্রনিক্স ওয়েস্ট ও প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। ফেলে দেয়া প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে দেশের চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি তৈরি সম্ভব বলে মনে করেন বিজ্ঞানী ড. মইনউদ্দিন সরকার বাদল ও আনজুমান আরা। প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি তেল উৎপাদন করে নজির সৃষ্টি করেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই দুই বিজ্ঞানী।

বিশ শতকে পৃথিবীতে উৎপাদিত হয়েছে ৬০০ কোটি টন প্লাস্টিক। যে প্লাস্টিক মানুষ ব্যবহার করে তা পরিবেশের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। কারণ প্লাস্টিকের ক্ষয় হয় না, নষ্ট হয় না। ড্রেন, নালা, শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। প্লাস্টিক আসলে এক ধরনের অশোধিত তেল। এ তেল ঠাণ্ডা করে যে কোনো আকৃতি দেয়া যায় ও সংরক্ষণ করা যায়। এর একটি অংশ দিয়ে শপিং ব্যাগ, পাত্র, খেলনা ও নানা রকমের শো-পিস তৈরি করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিক উৎপাদনের ১৩ শতাংশ কঠিন বর্জ্যে পরিণত হয়। সেখানকার পরিবেশ রক্ষা সংস্থার হিসেবে প্রতি বছর তৈরি হয় পাঁচ কোটি টন প্লাস্টিক সামগ্রী। তার তিন কোটি দুই লাখ টন একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া হয়। এক শতাংশ পুনরায় ব্যবহারযোগ্য, বাকিটা সরাসরি পরিবেশ দূষিত করে। কিছু গিয়ে পড়ে সাগরে। বাংলাদেশের চিত্র বেশ উদ্বেগজনক। কারণ প্লাস্টিক বর্জ্যরে বিকল্প ব্যবহার নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি, যা পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পরিবেশের এ বিপুল ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া এবং প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে তেল উৎপাদনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব। প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে অপরিশোধিত তেলে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন ৭০৭ থেকে ৭৫২ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা। আর এ প্রক্রিয়ায় যে তেল উৎপাদন করা হবে, তা বাজারের অন্য জ্বালানি থেকে আলাদা নয় বরং আরও উন্নত। এ জ্বালানি দিয়ে গাড়ি, জেনারেটরসহ সব ধরনের ইঞ্জিন চালানো সম্ভব। আর প্রতি গ্যালন তেল তৈরিতে ব্যয় হবে মাত্র এক ডলার।প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে উৎপন্ন ৯৫ শতাংশ তেল, বাকি ২ ভাগ হালকা গ্যাস, ৩ ভাগ অবশিষ্ট বর্জ্য থেকে যায়। এ বর্জ্য যেন পরিবেশের ক্ষতি না করে সে ব্যবস্থাও রাখা হয়।নবায়নযোগ্য শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুত বেড়ে ওঠা প্রযুক্তিগুলোর অন্যতম। পুনরায় ব্যবহার বা রিসাইক্লিংয়ের জন্য বর্জ্য সংগ্রহ করার ফলে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, তেমনি প্রয়োজনীয় জ্বালানি তৈরি করা যায়। এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা গেলে মানুষের প্রয়োজনীয় গ্রিন টেকনোলজির চাহিদাও পূরণ হবে। ধারণা করা হয়-২০৫০ সালে সমুদ্রে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকই বেশি থাকবে।

জার্মানিতে বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন পদ্ধতি বর্জ্য পদার্থ থেকে পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি তৈরীতে জার্মান বিজ্ঞানীরাও অন্যান্য অবদান রেখেছেন।শুধু জ্বালানি উৎপাদন নয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল থেকে শুরু করে গোটা প্রক্রিয়াও হতে হবে সহজ৷ বর্জ্য পদার্থ কাজে লাগাতে পারলে তো আরও ভালো৷ জার্মান বিজ্ঞানীরা এমনই এক প্রযুক্তি পরীক্ষা করছেন৷

প্রতি বছর লাখ লাখ টন নর্দমার জল ও কাদা ফেলে দেওয়া হয়৷ নষ্ট হয় খড় ও কৃষিজাত আবর্জনাও৷ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উৎপাদনের সময় এই সব বর্জ্য সৃষ্টি হয়৷ সেই সঙ্গে মূল্যবান জ্বালানিরও অপচয় ঘটে৷

জার্মানির ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউট-এর কর্মীরা নতুন ধরনের এক অরগ্যানিক জ্বালানি প্লান্ট তৈরি করেছেন, যার মধ্যে উদ্ভিদজাত ও প্রাণীজ বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদন করা যায়৷ নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে থার্মাল-কেমিকাল রূপান্তর প্রক্রিয়ায় অরগ্যানিক বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও উত্তাপ সৃষ্টি করা যায়৷

ভারতে বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন পদ্ধতি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও কঠিন বর্জ্য হতে শক্তি উৎপাদন করে। যে কোনো কঠিন বা তরল বর্জ্য কাঁচামাল ব্যবহার করা যায়। তবে ছোট দলার মতো আয়তন হলে তা পরিবহণের জন্য সুবিধাজনক হয়৷ ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের আন্দ্রেয়াস হরনুং বলেন, আলাদা করে উৎপাদন করতে হয়-এমন কোনো বায়োজেনিক উপকরণ ব্যবহার করা চলে না৷ আমরা ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা বায়োগ্যাস প্লান্ট থেকে পাওয়া বর্জ্য কাজে লাগাই৷ গরুর গোবর ও শুয়রের মলও ব্যবহার করা হয়৷ তাতে খড়কুটার মতো কৃষিজাত বর্জ্য মেশানো থাকলেও কোনো সমস্যা নেই৷

এই প্লান্ট প্রায় সব কিছুই গিলে ফেলে৷ এই সব অবশিষ্ট উপকরণ দিয়ে ই্ঞ্জিনে ব্যবহারের যোগ্য তেল, গ্যাস ও উচ্চ মানের বায়োচার তৈরি করা যায়, যা বিক্রি বা বণ্টন করা সম্ভব৷ হরনুং বলেন, ‘‘এই তেল ইঞ্জিন চালাতেও ব্যবহার করা যায়৷ গ্যাস দিয়ে পরিশোধন প্লান্ট চালানো যায়৷ হাইড্রোজেন বার করে রাসায়নিক শিল্পে কাজে লাগানো যায়৷ বায়োচারও জ্বালানো যায়, গুদামে রাখা যায়৷ কৃষিকাজেও এই সব উপকরণ কাজে লাগানো যায়৷''

অরগ্যানিক আবর্জনা পাইপের মাধ্যমে এক চুল্লিতে চলে যায়৷ অক্সিজেন-বিহীন পরিবেশে ৫০০ ডিক্রি সিলসিয়াস তাপমাত্রার বেশি উত্তাপে তা বাষ্প ও বায়োচারে রূপান্তরিত করা হয়৷ তার পরের ধাপে সেই বাষ্প ও বায়োচার আরও ‘এনরিচ' করা হয়৷ তারপর বাষ্প ঠান্ডা করা হয়৷ তখন অরগ্যানিক তেল ও গ্যাস তৈরি হয়৷

অরগ্যানিক জ্বালানি প্রযুক্তি এমন সব দেশের জন্য উপযুক্ত, যেখানে পরিবেশের ক্ষতি না করে বেড়ে চলা জ্বালানির চাহিদা মেটানো সম্ভব৷ বিঘ্ন ঘটলেও প্লান্টের মধ্যে থার্মাল রূপান্তর প্রক্রিয়ার ক্ষতি হয় না৷ এ সব দেশে অরগ্যানিক বর্জ্যেরও অভাব নেই৷ হরনুং বলেন, ‘‘শুধু উত্তর ভারতেই দু'টি ফলনের মধ্যে যে ঘাটতি হয়, তার সমান পরিমাণ খড় জার্মানিতে পাওয়া যায়৷ ভারত, ব্রাজিল ও আফ্রিকায় আমরা এই প্রযুক্তির বিপুল সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি৷ ১০ থেকে ৩০টি বাড়ির জন্য ৩০ কিলোওয়াটের ছোট ইউনিট থেকে শুরু করে ছোটখাটো শহরের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে৷ এই প্লান্টে তৈরি উচ্চ মানের তেল ও গ্যাস স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে এক জেনারেটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও উত্তাপে রূপান্তরিত করা সম্ভব৷ এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করলে অত্যন্ত কম জায়গায় জ্বালানি উৎপাদন করা সম্ভব৷

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সাথে সাথে সমানুপাতিক হারে বর্জ্যের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়ত হাজারও বর্জ্য উৎপন্ন করি যার মধ্যে কোনটি কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় বর্জ্য। এবং কোনো বাছবিচার ছাড়াই তা আমরা যত্র ফেলি। ফলস্বরূপ তরল বর্জ্য মাটি বা পানিতে মিশে যায় এবং গ্যাসীয় বর্জ্য বায়ুর সাথে মিশে যায়। যায় প্রভাব আমাদের উপর পড়লেও সেটা সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না। কিন্তু কঠিন বর্জ্য এমন একধরনের বর্জ্য যার ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়। মেডিকেল এর সুচ, সিরিঞ্জ, প্লাস্টিকের বোতল, প্লাস্টিকের আসবাবপত্র, পলিথিন, বিভিন্ন ধাতব পদার্থ যা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন খোলা স্থান বা ড্রেনে বা নর্দমায় ফেলা হচ্ছে, তা পরিবেশের জন্য খুবেই ক্ষতিকর। এগুলো ক্ষয় হতে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর সময় লাগে। এই কঠিন বর্জ্য ফেলার প্রভাব আমারা বুড়িগঙ্গা নদীতে দিকে তাকালেই বুঝতে পারি। নদীর তলদেশ কঠিন বর্জ্যে পূর্ণ। তবে বর্তমান সরকারের নানামুখী কর্মকান্ডের ফলে বুড়িগঙ্গা তার আগের নাব্যতা ফিরে পাচ্ছে। সঠিক ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য এখন আর ঝামেলা নয়, বরং সম্পদে পরিণত হচ্ছে। কঠিন বর্জ্য ভিন্নরূপে সমৃদ্ধি বয়ে আনছে।

মোঃ সুমন ইসলাম,
শিক্ষার্থী
এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: