গোপালপুরে প্রেমিকা হাসপাতালে, প্রতারক প্রেমিকের বিচার দাবিতে বিক্ষোভসহ ইউএনও অফিস ঘেরাও

প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২২, ১০:০৩ পিএম

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমিকাকে বাড়িতে ডেকে এনে অমানুষিক নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি ঘটানোর অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। প্রতারক প্রেমিকের শাস্তির দাবিতে আজ মঙ্গলবার গোপালপুর উপজেলা পরিষদ চত্বর উত্তাল হয়ে উঠে।

জানা যায়, দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কেশবপুর গ্রামের আফজাল হোসেনের মেয়ে ফৌজিয়া আখতার তানিয়ার সাথে গোপালপুর উপজেলার সূতি নয়াপাড়া গ্রামের সুরুজ মিয়ার পুত্র ফরিদুল ইসলাম শিমুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরা উভয়ে গাজীপুরের একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করতো। পরিনয়কে বিয়েতে রুপান্তরিত করার উদ্দশ্যে বাবামার মতামত নেওয়ার জন্য বরাতুল গত ২৯ সেপ্টেম্বর তানিয়াকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসে। কিন্তু বাবামা রাজি না হওয়ায় বিয়ে হয়নি। তানিয়া বরাতুলের বাড়িতে অবস্থান করতে থাকে। গত ১ অক্টোবর গ্রামে একটি সালিশী বৈঠকে বরাতুলকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে বাবামাসহ বাড়ি থেকে গাঢাকা দেয়। কিন্তু তানিয়া বিয়ে না করে কর্মস্থলে ফিরে যেতে অস্বীকার করেন।

সূতি নয়াপাড়া গ্রামের হাবেল উদ্দিন জানান, এক সপ্তাহ ধরে খেয়ে না খেয়ে তানিয়া ওই বাড়িতে অবস্থান করছিল। আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টায় গোপালপুর থানা পুলিশ তানিয়ার খোজ খবর নেওয়ার জন্য ওই বাড়িতে গেলে ফরিদুলের মামা এরশাদ আলী, মামাতো ভাই মো. শাকিল, দুই খালা জল্পনা খাতুন ও আল্পনা খাতুন মিলে তানিয়াকে বেদম মারপিট করার পর চুলের মুঠি ধরে ছেচড়িয়ে ঘর থেকে বের করে আনে। এতে তার পরনের কাপড়ও ছিড়ে যায়।

পৌর কাউন্সিলর মো. শামছুল আলম জানান, তানিয়ার ডাকচিৎকারে এলাকাবাসিরা ছুটে যান এবং থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করেন। এ মারপিট ও নির্যাতনের ঘটনায় এলাকাবাসি ক্ষোভে ফুঁসে উঠে। পরে সহস্রাধিক গ্রামবাসি এ নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা আহত তানিয়াকে একটি রিকসাভ্যানে উঠিয়ে বিক্ষোভ মিছিলসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ঘেরাও করেন। সূতি নয়াপাড়া গ্রামের রাসেল মিয়া অভিযোগ করেন, উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান মীর রেজাউল হক ছেলে পক্ষ নিয়ে প্রশাসনিক পর্যায়ে নানাভাবে দেনদরবার করায় ছেলেপক্ষ আপোষ রফায় না গিয়ে উগ্র হয়ে উঠে। পরিণতিতে আজ মঙ্গলবার এ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। তিনি এ নির্যাতনের দায় এড়াতে পারেননা। আজ দুপুরে মীর রেজাউল অবশ্য গোপালপুর বার্তাকে জানিয়েছিলেন তিনি বরাবরই এটি মিমাংসার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ছেলেপক্ষ রাজি না হওয়ায় বিষয়টি সমাধান হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. পারভেজ মল্লিক জানান, মেয়েটি প্রেমঘটিত কারণে ওই বাড়িতে আসেন।পরে মিমাংসার নামে কালক্ষেপন করে। একপর্যায়ে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনার কথা তিনি জানতে পেরেছেন। নির্যাতনে কাবু মেয়েটিকে এলাকাবাসি অফিস প্রাঙ্গণে নিয়ে এলে তাকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। একজন নারীর উপর এধরনের নির্যাতন কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায়না। ভিক্টিমকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক তাপস সাহা জানান, ভিক্টিমের শরীরে নির্যাতনের অনেক চিহ্ন রয়েছে। তার শরীর খুবই দুর্বল। তবে আশঙ্কামুক্ত।

এ ব্যাপারে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নারী নির্যাতানের ধারায় গোপালপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

থানার ওসি মো. মোশারফ হোসেন জানান, লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: