নকল করার দায়ে ছাত্রকে বহিষ্কার, প্রধান শিক্ষককে পেটালেন মেয়র ও ছাত্রলীগ

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২২, ০৯:০৭ এএম

আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে: এসএসসি পরীক্ষায় বৃহস্পতিবার নকল করা দুই ছাত্রকে বহিষ্কার করায় প্রধান শিক্ষককে পিটিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের পৌরসভার মেয়র ও তাঁর সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগের কর্মীরা। শনিবার (১৫ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে জেলার ঢাকা বাসস্ট্যান্ডের পৌর আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে রাজারামপুর হামিদুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলামকে মারধর করেন তাঁরা।

প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) এসএসসির টেস্টের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় চলছিল স্কুলে। এসময় মোবাইলে কপি দেখে নকল করছিল দুই ছাত্র। পরীক্ষা রুমে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ ও নকল করার অপরাধে দুই ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়। পরদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম ও ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুল ইসলাম বহিষ্কারদেশ প্রত্যাহারের জন্য আমাকে অনুরোধ করেন। তাদের বুঝিয়ে বলি এ ধরণের অন্যায় অনুরোধ রক্ষা করলে পরবর্তীতে ছাত্ররা আর পড়াশোনা করবে না। এতে স্কুল এবং শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এরপর শনিবার (১৫ অক্টোবর) পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমান আমাকে ফোন করে দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন।

তিনি আরও বলেন, মেয়র ফোন করায় শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টা দেখব বলে তাকে জানাই। এতে মেয়র উত্তেজিত হয়ে বলেন ‘আমি কে বলছি এটা কি আপনি জানেন? আমি যা বলছি আপনাকে তাই করতে হবে।’ আপনি উত্তেজিত হয়ে এভাবে কথা বলছেন কেন? জানতে চাইলে মেয়র আমাকে তার পার্কে ডাকেন। আমি যেতে না চাইলে। আমি কোথায় অবস্থান করছি? জানতে চান। এ সময় আমি পৌর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আছি বলে জানাই। সে সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম। কিছুক্ষণ পরে দলবল নিয়ে এসে মেয়রের সঙ্গে থাকা লোকজন আমাকে মারধর শুরু করেন।

মেয়রের নির্দেশেই ছাত্রলীগ নেতা ফয়সালসহ মেয়রের বাহিনী আমাকে মারধর করেছে। এসময় আমি প্রাণ ভয়ে দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করব বলে রক্ষা পাই। এখনও চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি বলে জানান তিনি।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, হঠাৎ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকা স্ট্যান্ডের পৌর আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে দলবল নিয়ে আসেন মেয়র মোখলেুসর রহমান। এসে মেয়রই প্রথম প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলামকে মারধর শুরু করেন। পরে তাঁকে অফিসে ঢুকিয়ে আরেক দফা মারধর করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

শিক্ষককে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান মোবাইল ফোনে জানান, 'কেউ অভিযোগ করলেই তো সত্য হয়ে যায় না। এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।'

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: