প্রচ্ছদ / জেলার খবর / বিস্তারিত

শাহীন মাহমুদ রাসেল

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচন: কে হাসবেন শেষ হাসি?

   
প্রকাশিত: ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ, ১৭ অক্টোবর ২০২২

কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক সাংসদ মোস্তাক আহমদ চৌধুরী ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি শাহীনুল হক মার্শালের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তারা দু’জনই জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। সোমবার রাতের মধ্যেই জানা যাবে নির্বাচনের ফল। নানা কারণে এবার কক্সবাজারে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে জেলা পরিষদ নির্বাচন।

একাধিক সূত্র দাবি করেছে, শেষ চমক দেখা যাচ্ছে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। নানা নাটকিয়তার মোড় ঘোরে পাল্লা এখন ক্রমাগত ভারী হয়ে উঠেছে তাঁর। বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এর কক্সবাজার সফরের পর আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থীকে বিজয় করতে পুরোদমে মাঠে নেমেছে কক্সবাজারের ৪ টি আসনের সংসদ সদস্য সহ প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিরা। ফলে বিশ্লেষকরা বলছেন, মোস্তাক আহমদ চৌধুরীই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে পুন:নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফশিল মতে, আগামি ১৭ অক্টোবর সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে চেয়রম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য মোস্তাক আহমদ চৌধুরী (মোটর সাইকেল), জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহ সভাপতি শাহীনুল হক মার্শাল (আনারস), জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবছার (তালগাছ) এবং কথিত মঙ্গল পার্টির নেতা জগদীশ বড়ুয়া (প্রজাপতি)। এ ছাড়া তিনটি সংরক্ষিত নারী আসনে ১১ জন ও ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে লড়ছেন ৩৩ জন প্রার্থী লড়ছেন। একজন বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৯ টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কেন্দ্র সমুহ হল, টেকনাফ উপজেলা পরিষদ হল রুম, উখিয়া উপজেলা পরিষদ হল রুম, রামু উপজেলা পরিষদ হল রুম, চকরিয়া উপজেলা পরিষদ হল রুম, পেকুয়া উপজেলা পরিষদ হল রুম, মহেশখালী উপজেলা পরিষদ হল রুম, কক্সবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কুতুবদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। জেলা মোট ৯৯৪ জন ভোটারের মধ্যে টেকনাফ উপজেলায় ৯৩ জন, উখিয়া উপজেলায় ৬৮ জন, কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৮২ জন, রামু উপজেলায় ১৪৫ জন, ঈদগাঁও উপজেলায় ৬৫ জন, চকরিয়া উপজেলায় ২৪৯ জন, পেকুয়া উপজেলায় ৯৪ জন, মহেশখালী উপজেলায় ১১৭ জন, কুতুবদিয়া উপজেলায় ৮১ জন।

কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনের রির্টানিং কর্মকর্তা ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন, ভোট গ্রহণের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন।

ভোটার একাধিক চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের দেয়া তথ্য মতে, ১৪ অক্টোবর কক্সবাজারে আসেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি ছাত্রলীগের এক সমাবেশে যোগ দেয়ার পাশাপাশি রাতে চেয়ারম্যান, মেয়র, কাউন্সিলর, ইউপি সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে রুদ্ধকর বৈঠক করেন। রাত প্রায় ২ টা পর্যন্ত চলমান বৈঠকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরীকে বিজয় করতে নানা নির্দেশনা দেন।

ওই বৈঠকে নানক বলেছেন, দলীয় প্রার্থীকে ভোট না দিলে খবর আছে। এটি আমার কথা নয়, এটি জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কথা। এই জেলা পরিষদ নির্বাচন সংসদ সদস্য পদের মনোনয়ন সহ স্থানীয় নির্বাচনের মনোনয়ন নির্ভর করে। কোন আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ভোট কম পেলে ওই সংসদ সদস্য নিয়ে চিন্তা করা হবে। একই সঙ্গে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ২ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্য কেউ তাদের পক্ষে গেলে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নানকের এই নির্দেশনার পর দেশের বাইরে থাকা কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম এলাকায় ফিরে নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সাইমুম সরওয়ার কমল, সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি দলীয় প্রার্থী পক্ষে মরিয়া হয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে।

এর মধ্যে একে অপর প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণ বিধি লংঘন সহ নানা অভিযোগ করছেন। চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী বলেন, অবৈধভাবে অস্ত্র নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে শপথ করিয়ে ভোটারদের মাঝে টাকা বিতরণ করছেন মার্শাল। তার পরিবারের সদস্যদের নোংরামির বিষয়গুলো আমি লিখিতভাবে দলীয় সভানেত্রীকে জানিয়েছি। আমার কাছে মনে হয়, দলীয় ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে হলে মার্শাল ও তার তিনভাইকে থামাতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীনুল হক মার্শাল বলেন, আচরণবিধি আমি নয় লঙ্গন করছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। তার প্রচারনায় সংসদ সদস্যরাও অংশ নেন।

চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আবছার বলেন, এবারের নির্বাচনে ২ জন প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। যা সুষ্টু নির্বাচনের জন্য প্রতিবন্ধিকতা তৈরি করবে। এ ধরণের অস্বাভাবিক কর্মকান্ডে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকতে পারে। এটার জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতা কাম্য হতে পারে না। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর পক্ষে মাঠে কাজ করছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীদের ইতিমধ্যে দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে সবধরণের প্রস্তুতি শেষ। কোথাও কোনো অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শাকিল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: