ইয়াবা ডনের কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ভাবীকে মারধর

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ০৭:২৯ পিএম

অর্ধ ডজন মাদক মামলার আসামি হওয়ার পরও নির্বিঘ্নে ইয়াবা ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজারের উখিয়া থানার পালংখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের রাশেল উদ্দিন (৩০) নামের এক ইয়াবা ডনের বিরুদ্ধে। অর্থের বিনিময়ে সরকার দলীয় নেতা কর্মীদের ব্যবহার করে এলাকায় প্রকাশ্যে এসব অপকর্ম চালাচ্ছেন তিনি। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

এবার কূ-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক গৃহবধূকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ এনেছে রাবেয়া বছরী নামের এক নারী। সম্পর্কে তিনি তার আপন ভাবী হন। ওই নারীর দাবি, মদ্যপ অবস্থায় রাশেল তাকে কু-প্রস্তাব দেন। তা প্রত্যাখান করায় দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ তাকে রাতভর বেদড়ক পেটানো হয়। তিনি পালংখালীর ৭নং ওয়ার্ডের গোলাম বারির মসজিদের সামনের বাসিন্দা আফলাতুন প্রকাশ ধইন্যার ছেলে। এ ঘটনায় রাবেয়া বাদী হয়ে উখিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ইয়াবা ডন রাশেল এবং সাহাব উদ্দিন তারা দুই ভাই একই বাড়িতে আলাদা আলাদাভাবে বসবাস করছেন দীর্ঘদিন ধরে। এবছরের ৯ ফেব্রুয়ারিতে রাশেল ৮৭ হাজার ইয়াবা তার ঘরের নিজ কক্ষে মজুত করে রাখে পাচারের উদ্দেশ্যে। সেদিন সন্ধ্যায় র‍্যাব সদস্যরা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ইয়াবাগুলো জব্দ করে। এসময় বাড়িতে রাশেলকে না পেয়ে সাহাব উদ্দিনকে নিয়ে যায়। ওই মামলায় সাহাব উদ্দিন বর্তমানে কারাভোগ করছেন। এরপর থেকে রাশেল সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী রাবেয়া বছরীকে কু-প্রস্তাব দিতে থাকেন। তাতে রাজি না হওয়ায় তাকে নানা রকম হয়রানি ও নির্যাতন করে যাচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন।

অভিযোগে তিনি আরো উল্লেখ করেন, গত ১৭ অক্টোবর রাতে রাশেল মদ্যপ অবস্থায় এসে তার দরজায় কড়া নাড়েন। পরে দরজা খুলার পর তার কু-প্রস্তাবে রাজি না হলে এক পর্যায়ে রাবেয়াকে বেদড়ক পেটাতে থাকেন এবং শরীরের স্পর্শকাতর বিভিন্ন অংশে আঘাত করেন।

ভুক্তভোগী রাবেয়া বছরী বলেন, রাশেল একজন দুর্ধর্ষ মাদক সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন সময় ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়ে জেলও খেটেছেন। সেদিন ইয়াবাগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচারের উদ্দেশ্যে তার ঘরে মজুত করে রাখে রাশেল। অথচ তার মজুত করে রাখা ইয়াবা নিয়ে আমার প্রবাস ফেরত স্বামী বর্তমানে কারাভোগ করছেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি আমার উপর যৌন নির্যাতনের মত ঘৃণিত কাজের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি আরোও বলেন, বর্তমানে তার হুমকি-ধামকিতে ঘর ছেড়ে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছি। এতেও তিনি ক্ষান্ত হননি; উল্টো আমার ভাইদেরও নানা রকমের হুমকি দিচ্ছেন।

এদিকে স্থানীয়রা বলেন, মূলত দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর জামিনে বের হয়েই রাশেল অনেক বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠে। মাদক মামলায় জামিনে বের হয়ে সে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠে। প্রকাশ্যে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যায়। তার মাদক ব্যবসা জোরদার করতে এলাকায় গড়ে তুলেছে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং। প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসায় কেউ বাধা দিতে চাইলে রাশেল তার গড়ে তোলা কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। সে তার দলবল নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেশি একজন বলেন, সে নিজে প্রকাশ্যে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে, আবার অন্যান্য ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও সে প্রশাসনের হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করে। চাকরি বা বৈধ কোনো ব্যবসা ছাড়াই সে বর্তমানে অঢেল টাকা ও সম্পদের মালিক। টাকার জোরে সে মাদক মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও পুলিশের চোখের সামনেই নিয়মিত চলাফেরা করছে এবং নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, মাদক মামলায় জেল থেকে বের হয়েই মাদক ব্যবসার কৌশল পাল্টান রাশেল। এলাকায় নির্বিঘ্নে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কথিত পুলিশ প্রশাসনসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে টাকার জোরে গড়ে তোলেন সুসম্পর্ক। এরপর থেকে মাদক ব্যবসায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি। এলাকায় গড়ে তোলেন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। ভুক্তভোগী রাবেয়া মাদক ব্যবসায়ী রাশেল উদ্দিনকে গ্রেফতারের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রাশেল উদ্দিনের সাথে একাধিক নাম্বারে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি মাদক ব্যবসার কৌশলগত কারণে একটি নাম্বার বেশি দিন ব্যবহার করেন না বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, অভিযুক্ত রাশেলের বিরুদ্ধে অন্য কোন মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও নারী নির্যাতনের বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: