সখীপুরে বিদ্যুৎ মামলা: মালিকের মিটার, ভাড়াটিয়ার জেল
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিদ্যুৎ বিভাগের মামলায় মো. তারেক মিয়া (৩৫) নামের এক সবজি বিক্রেতা গত দশ দিন ধরে কারাগারে রয়েছেন। ৫৪ হাজার ৫৪৮ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার অভিযোগে পিডিবির সখীপুর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ২৫ জুলাই তারেক মিয়ার নামে মামলা করেন।
ওই মামলায় পরোয়ানা জারি হলে পুলিশ গত ১৬ অক্টোবর সবজি বিক্রেতা তারেক মিয়াকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। অথচ কারাগারে থাকা তারেক মিয়া সখীপুর পিডিবির কোনো বিদ্যুৎ গ্রাহক নন। তাঁর নামে নেই কোন মিটার বা আবাসিক হিসাব। মামলায় যে হিসাব নম্বরটি উল্লেখ করা হয়েছে তা স্থানীয় সাইফুল ইসলাম ওরফে তারা মিয়ার নামে। মূলত তারেক মিয়া সখীপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের জেলখানা মোড় এলাকায় সাইফুল ইসলাম ওরফে তারা মিয়ার বাসায় ভাড়া থাকতেন। বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের জন্য মিটার মালিককে বাদ দিয়ে অসহায় তারেকের নামে মামলা করায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম তারেক মিয়া কারাগারে
থাকায় অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে পরিবারটির। লোকজন দেখলেই ছেলের মুক্তির জন্য পায়ে লুটিয়ে পড়ছেন তারেকের অসহায় বৃদ্ধ মা নাছিমা বেগম।
মামলার বিবরণ, স্থানীয় প্রতিবেশী ও ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় তিন বছর আগে পৌরসভার জেলখানা মোড় এলাকায় সাইফুল ইসলাম ওরফে তারা মিয়ার বাসাটি ভাড়া নেন সবজি বিক্রেতা তারেক মিয়া। এরপর থেকেই তিনি নিয়মিত ওই বাসার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছিলেন। প্রায় পাঁচ মাস আগে বাসার বিদ্যুৎ মিটারটিতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। পরে
বাসার মালিকপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে পুরাতন মিটারটি পরিবর্তন করে ওই বাসায় প্রি-পেইড মিটার লাগিয়ে দেশ বিদ্যুৎ বিভাগ। গত ২ জুন ভাড়াটিয়া তারেক মিয়া পুরাতন হিসাবের অনুকূলে ২২১ টাকা বিলও পরিশোধ করেন। এর কয়েকদিন পর ৫৪ হাজার ৫৪৮ টাকার একটি বকেয়া বিল আসে বাসার মালিকের হাতে। বাসার মালিক এই বিল পরিশোধে অস্বীকৃতি জানালে স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ বকেয়া বিলের সম্পূর্ণ দায়ভার চাপিয়ে দেয় অসহায় সবজি বিক্রেতা তারেক মিয়ার ওপর।
এ বিষয়ে জানতে বাসার মালিক সাইফুল ইসলাম ওরফে তারা মিয়ার মোবাইলে ফোন দেওয়া হলে তাঁর মেয়ে ফোনটি ধরে বলেন, বাবা কাছে নেই, একটু পরে ফোন করুন। কিন্তু পরে একাধিকবার ফোন করেও ওই নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। কারাগারে থাকা তারেকের স্ত্রী মিতু আক্তার বলেন, আমরা প্রত্যেক মাসেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছি। কখনো বাকি রাখি নাই। আমাগো আগেও বহু বছর ওই বাসায় অন্য ভাড়াটিয়ারা থাকতো। সম্ভবত তারাই ওই বিল বাকি রাইখ্যা গেছে। এহন এই বাকি টাকা আমার স্বামীর
ঘাড়ে চাপানো হইছে।
স্থানীয় প্রতিবেশী ইলিয়াস কাসেম বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের অবহেলায় (গড় বিল) দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা বকেয়া বিল বাসার মালিকের প্ররোচনায় অসহায় তারেকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই পরিবারের পক্ষে এত টাকা পরিশোধ করে কারাগার থেকে তারেককে মুক্ত করা সম্ভব না। তারেককে গ্রেপ্তার করার কিছুক্ষণ পরই তাঁর বাবা স্ট্রোক করেছেন। পরিবারটি খুব অসহায় হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে পিডিবির সখীপুর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী হিসেবে ভাড়াটিয়া তারেকের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ আইনে এমনটি করা যায়। বিদ্যুতের মূল গ্রাহক উপস্থিত থাকতে প্রায় এক যুগের বেশি সময়ের বকেয়া বিল ভাড়াটিয়ার নামে চাপিয়ে দিলেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সঠিক কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: